অর্ণব আইচ: ভারতকে রক্তাক্ত করার ছক আনসারুল্লা বাংলা টিমের (এবিটি)! বুধবার রাজ্য ও অসম পুলিশের যৌথ অভিযানে মুর্শিদাবাদ থেকে ধরা পড়ে বাংলাদেশের এই জঙ্গি সংগঠনটির দুই সদস্য। জেরায় ধৃতরা জানায়, তাদের নিশানা ছিল 'শিলিগুড়ি করিডর'। ভূকৌশলগত দিক থেকে অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ এই এলাকায় আঘাত হেনে গোটা ভারত উত্তপ্ত করার ছক কষেছে আল কায়দার ছায়া সংগঠন এবিটি। শেখ হাসিনার পতনের পর থেকেই বাংলাদেশে অতি সক্রিয় হয়ে উঠেছে আনসারুল্লা। এবার তাদের ষড়যন্ত্র ফাঁস করল রাজ্য পুলিশ।
কেন এতটা গুরুত্বপূর্ণ এই শিলিগুড়ি করিডর বা চিকেন নেক? শিলিগুড়ি শহরে অবস্থিত এই করিডর ভূকৌশলগত দিক দিয়ে অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। সবচেয়ে সংকীর্ণ অংশে এটির প্রস্থ প্রায় ২০ কিলোমিটার। নেপাল, ভুটান ও বাংলাদেশ এই তিন দেশের সঙ্গে সীমান্ত ভাগ করে নিয়েছে শিলিগুড়ি করিডর। ভারতের মূল ভূখণ্ডের সঙ্গে উত্তর-পূর্বের সাতটি রাজ্যকে বেঁধে রেখেছে এই সংকীর্ণ স্থলভাগ। যার তুলনা করা চলে মুরগির গলার সঙ্গে। সমরশাস্ত্রের সূত্র মেনে ভারতের মতো মহাশক্তিধর দেশকে দুর্বল করতে এই শিলিগুড়ি করিডরকেই পাখির চোখ করেছে আনসারুল্লা বাংলা টিম। তিনটি দেশের সীমান্ত এক জায়গায় মেশায় এই পথেই অস্ত্রশস্ত্র, মাদক ও জাল নোট ভারতে পাচার করার ছক কষেছে জেহাদিরা। পাশাপাশি সীমান্তের ছিদ্রপথে সন্ত্রাসবাদীদের এদেশে প্রবেশের রাস্তা তৈরি করারও পরিকল্পনা রয়েছে তাদের।
সদ্য এমনই 'টেরর নেটওয়ার্ক' গুঁড়িয়ে দিতে 'অপারেশন প্রঘাত' শুরু করে অসম পুলিশ। তাদের সঙ্গে যৌথ অভিযানে নামে রাজ্য পুলিশের স্পেশাল টাস্ক ফোর্স। গোয়েন্দা সূত্রের খবর মোতাবেক তল্লাশি শুরু করা হয় মুর্শিদাবাদে। হরিহরপাড়া থেকে মহম্মদ আবাস ও মিনারুল শেখ নামে দুই এবিটি জঙ্গিকে গ্রেপ্তার করা হয়। তাদের কাছ থেকে চারটি মোবাইল ও একটি পেন ড্রাইভ উদ্ধার হয়। জেরায় শিলিগুড়ি করিডর নিয়ে ষড়যন্ত্রের কথা জানতে পারেন তদন্তকারীরা। সব মিলিয়ে দেশের মোট ৮টি রাজ্যে শুরু হয়েছে এই বিশেষ অভিযান। পশ্চিমবঙ্গ মিলিয়ে এখনও পর্যন্ত গ্রেপ্তার হয়েছে আট জন এবিটি জঙ্গি। এদের মধ্যে ধৃত এমডি সাদ রাদি ওরফে মহম্মদ শাব শেখ বাংলাদেশের নাগরিক। তাকে পাকড়াও করা হয় কেরল থেকে। অসম থেকে গ্রেপ্তার পাঁচ।
এনিয়ে আজ শুক্রবার সিআইডির সদর দপ্তর ভবানীভবনে সাংবাদিক সম্মেলন করে রাজ্য পুলিশ। সাংবাদিকদের প্রশ্নের উত্তরে এডিজি, দক্ষিণবঙ্গ সুপ্রতিম সরকার ও বেঙ্গল এসটিএফের এক শীর্ষকর্তা জানান, আনসারুল্লা বাংলা টিম ভারতজুড়ে স্লিপার সেল তৈরির পরিকল্পনা করছে। তরুণ প্রজন্মের মগজধোলাই করে জেহাদের বিষ ছড়িয়ে দেওয়ার চেষ্টা করছে জঙ্গিরা। শিলিগুড়ি করিডর তাদের নিশানায়। গত ১৭ ও ১৮ ডিসেম্বরের অভিযানে অসম এসটিএফ কেরল থেকে এমডি সাদ রাদি ওরফে মহম্মদ শাব শেখকে গ্রেপ্তার করে। সে বাংলাদেশের নাগরিক। আনসারুল্লা বাংলা টিমের সদস্য ইসরাকের নেতৃত্বে রাদিকে পশ্চিমবঙ্গ, অসম, কেরলে মডিউল তৈরির জন্য পাঠানো হয়েছিল। লক্ষ্য ছিল যুবকদের মধ্যে এবিটির আদর্শ ছড়িয়ে দেওয়া। এই সমস্ত কিছুর মাস্টারমাইন্ড আনসারুল্লা বাংলা টিমের প্রধান জসীমউদ্দিন রহমানি। সে এখন বাংলাদেশে। ইউনুস সরকার ক্ষমতায় আসার পর জেল থেকে ছেড়ে দেওয়া হয়।