সুকুমার সরকার, ঢাকা: তেলে-ঝালে হোক বা ভাপা। দই সহযোগে হোক বা সরষে-লঙ্কার মিহি পরত গায়ে মেখে ধন্য হয়ে। অমৃত সে সব পদেই। সব রূপেই। অন্তত রসনাপ্রিয় বাঙালির কাছে তো বটেই।
রুপোলি ইলিশ, পদ্মার ইলিশ। মৎস্যপ্রিয় বিশ্বের সমস্ত বাঙালির কাছে চরম আকর্ষণের ডিশ। ঢাকা থেকে মঙ্গলবার সেই ইলিশপ্রেমীদের কাছে পরম সুখবর দিয়েছে শেখ হাসিনা সরকার। ২০১২ সালের ১ আগস্ট থেকে বাংলাদেশ থেকে ইলিশ রপ্তানির উপর যে নিষেধাজ্ঞা জারি হয়েছিল, তা এদিন প্রত্যাহারে নীতিগত সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। এদিনই এই সিদ্ধান্ত কার্যকর করার জন্য পরিকল্পনা কমিশনেও পাঠিয়ে দেওয়া হয়েছে। খুব শীঘ্রই বাংলাদেশের জাতীয় অর্থনৈতিক পরিষদের কার্যনির্বাহী কমিটির কাছে অনুমোদনের জন্য পাঠানো হচ্ছে। বাংলাদেশ মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ মন্ত্রালয়ের তরফে এদিন ইঙ্গিত দেওয়া হয়েছে, আগামী জামাইষষ্ঠীর আগে কলকাতায় পৌঁছে যাবে পদ্মার রুপোলি শস্য। মজা করে এদিন মন্ত্রালয়ের এক আধিকারিক বলেছেন, “কলকাতার শাশুড়িদের অভয় দিয়ে বলতে পারি, পদ্মা না হলেও মেঘনার ইলিশ জামাইদের এবার ষষ্ঠীতে খাওয়াতে পারবেন।” একইসঙ্গে, তির্যক মন্তব্য করে বলেছেন, “ইলিশ তো আমরা দিয়া দিলাম, এবার তিস্তার পানি ছাইড়া দেন।’’
[ইলিশ রক্ষায় তৎপর বাংলাদেশ প্রশাসন, নিষিদ্ধ হল শিকার]
বাংলাদেশের মৎস্য ও প্রাণিসম্পদমন্ত্রী নারায়ণচন্দ্র চন্দ বলেছেন, “উৎপাদন যেহেতু বেড়েছে, আন্তর্জাতিক বাজারে চাহিদাও রয়েছে। আর রপ্তানির অনুমতি না দিলেও চোরাপথে মাছ পাচার হয়ে যাচ্ছে। রাজস্ব থেকে বঞ্চিত হচ্ছে রাষ্ট্র। তাই এবার নিষেধাজ্ঞা প্রত্যাহার করা হচ্ছে।”রাজনৈতিক মহলের বক্তব্য, তিস্তার জলবণ্টন চুক্তি না হওয়ার কারণে ঢাকার তরফে ইলিশ রপ্তানিতে নিষেধাজ্ঞা জারি করা হয়েছিল। কিন্তু তাতে বিপুল ক্ষতি হয়েছে বাংলাদেশের। চাষিদের ইস্যু তুলে তিস্তা নিয়ে নিজের সিদ্ধান্তে মমতা অনড় রইলেও শেষে ইলিশ ইস্যুতে কিছুটা পিছু হঠতে হল ঢাকাকে। তাঁর শেষ বাংলাদেশ সফরেও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার কাছে কলকাতায় পদ্মার ইলিশ পাঠানোর কথা জানিয়েছিলেন পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। তখন মমতাকে ইতিবাচক বার্তা দিয়েছিলেন বঙ্গবন্ধু-কন্যা।
মাসখানেক আগে নতুন ট্রেন ও বাসরুট উদ্বোধনের সময় ভিডিও কনফারেন্সেও ঢাকা থেকে নবান্নে বসে থাকা বাংলার মুখ্যমন্ত্রীকেও শেখ হাসিনা জানিয়েছিলেন, “দিদি চলে আসুন। ইলিশ খাওয়াব।” দেশের মৎস্য অধিদপ্তরের কর্মকর্তাদের দাবি, পদ্মার সুস্বাদু ইলিশ সফলভাবে তিলোত্তমাবাসীর পাতে এবং হাতে পৌঁছে দিতে হলে শুধু এর উৎপাদন বাড়ালেই চলবে না। মৎস্য সংরক্ষণ আইনটিকেও কড়াভাবে কার্যকর করতে হবে। বস্তুত, জাতীয় নির্বাচনের বছরে ইলিশ সংগ্রহকারী মৎস্যজীবী সমিতির চাপে পড়েই দেশের অর্থনীতির দিকে তাকিয়ে ভারতের রপ্তানির ক্ষেত্রে নিষেধাজ্ঞা প্রত্যাহার করতে বাধ্য হল শেখ হাসিনা সরকার।
[ইলিশ বাংলাদেশেরই, ‘জিআই’ ট্যাগ পেল রুপোলি শস্য]
বাংলাদেশের চারটি এলাকায় গত দু’বছরে প্রচুর পরিমাণে ইলিশ উঠলেও তা রপ্তানি করতে না পারায় বিপুল টাকা লোকসান হয়েছে মৎস্যজীবীদের। এগুলি হল, চাঁদপুরে ষাটনল থেকে লক্ষ্মীপুরের চর আলেকজান্ডার পর্যন্ত মেঘনা নদী অববাহিকায় ১০০ কিলোমিটার এলাকা, ভোলার ভেদুরিয়া থেকে পটুয়াখালির চররুস্তম পর্যন্ত তেঁতুলিয়া নদীর প্রায় ১০০ কিলোমিটার এলাকা, ভোলার মদনপুর থেকে চরপিয়াল পর্যন্ত শাহবাজপুর শাখানদীর ৯০ কিলোমিটার অঞ্চল এবং শরীয়তপুরের নড়িয়া-ভেদরগঞ্জ উপজেলা অংশে পদ্মার ২০ কিলোমিটার বিস্তৃত এলাকা। এগুলি ছাড়াও চট্টগ্রামের মিরসরাই, পটুয়াখালির কলাপাড়া, ভোলার তজুমুদ্দিন, কক্সবাজারের কুতুবদিয়া এলাকাও ইলিশ মাছের প্রজননকেন্দ্র হিসাবে পরিচিত।
The post রসনাপ্রিয় বাঙালির জন্য সুখবর, ইলিশে নিষেধাজ্ঞা প্রত্যাহার ঢাকার appeared first on Sangbad Pratidin.