সংবাদ প্রতিদিন ডিজিটাল ডেস্ক: বাংলাদেশে মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাসকে অবহেলা করার চেষ্টা চলছে। এই ইতিহাসকে অস্বীকার করলে খাদে পড়তে হবে। এভাবেই মহম্মদ ইউনুসের অন্তর্বর্তী সরকারকে বিঁধলেন বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর। সাধারণ নির্বাচন নিয়ে ইউনুস সরকারের বিরুদ্ধে অসন্তোষ বাড়ছে খালেদা জিয়ার দলের। এবার মুক্তিযুদ্ধ নিয়ে সুর চড়াল বিএনপি।
শহিদ বুদ্ধিজীবী দিবস স্মরণে শুক্রবার রাজধানী ঢাকায় ইঞ্জিনিয়ার্স ইনস্টিটিউশন মিলনায়তনে বিএনপির উদ্যোগে এক আলোচনাসভার আয়োজন করা হয়। সেখানেই মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বর্তমান সময়কে ‘কঠিন’ আখ্যা দিয়ে দ্রুত পদক্ষেপ নেওয়ার আহ্বান জানিয়েছেন। তাঁর নিশানা যে ইউনুস সরকারের দিকেই তা স্পষ্ট। এদিন বিএনপির বর্ষীয়ান নেতা বলেন, "মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাসকে অবহেলা করার চেষ্টা চলছে। এই সময়টা সব থেকে কঠিন। আপনার একটা পদক্ষেপ যদি ভুল হয় আপনি পেছনে পড়ে যাবেন, খাদে পড়ে যাবেন। যদি সঠিকভাবে পা ফেলতে পারেন তাহলে আপনি সামনে এগিয়ে যাবেন। প্রতিটি মুহূর্তে সতর্কতার সঙ্গে এগিয়ে যেতে হবে। আমাদের মেপে কথা বলা দরকার। আমরা এমন কোনও কথা বলব না যা আমাদের এই যে বিজয়কে নষ্ট করে দেয়, অর্জনকে বিনষ্ট করে দেয়।"
ফেসবুক, এক্স হ্যান্ডেল-সহ বিভিন্ন সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে বিএনপির নেতা-কর্মীদের আরও বেশি সম্পৃক্ত হওয়ারও আহ্বান জানান ফখরুল। তিনি বলেন, "এখন একটা প্রবণতা লক্ষ্য করা যাচ্ছে যে, একাত্তরকে একটু পেছনে রাখা। আমার মনে হয়, এটা আরেকটা ষড়যন্ত্রের অংশ, দেশের মূল ইতিহাস থেকে জাতিকে দূরে সরিয়ে দেওয়া। যেমন ৪৭ সালের দেশভাগকে অনেকে বলেন যে, এটা একটা ভুল সিদ্ধান্ত ছিল। এখন আবার একটা জিনিস লক্ষ্য করছি, একাত্তর সালকে পিছনে রাখা। আমরা মনে করি, এটা ইতিহাস বিকৃতির চেষ্টা। এটার কোনও প্রমাণ নেই তবে আমার এটা মনে হয়েছে। এই বিষয়টা নিয়ে আমাদেরকে সজাগ থাকতে হবে।" গত ১৫ বছর ধরে ইতিহাসকে বিকৃত করার অভিযোগ করে ফখরুল বলেন, ২০২৪-এর গণঅভ্যুত্থানের মধ্য দিয়ে তারা ‘নতুন বাংলাদেশে’র স্বপ্ন দেখছেন। ১৪ ডিসেম্বর বুদ্ধিজীবী হত্যার বিষয়ে তিনি বলেন, “আমার অনুরোধ থাকবে, এই দিবসগুলো আপনারা অবহেলা করবেন না, জানার চেষ্টা করবেন।"
গণতন্ত্র রক্ষা নিয়েও সরব হন বিএনপি মহাসচিব। তিনি বলেন, “এটা একটা সংস্কৃতি। আপনি-আমি কীভাবে কথা বলব, আমি আমার প্রতিবেশীর সঙ্গে কীভাবে কথা বলব, আমার রাজনীতির প্রতিপক্ষের সঙ্গে কীভাবে কথা বলব, সেই বিষয়গুলো আমাদেরকে গণতন্ত্রের ভিতর দিয়ে শিখতে হবে। গণতন্ত্র মানে এই নয় যে, আওয়ামি লিগ করলে তার গলা কেটে ফেলো আর বিএনপি করলে তার মুণ্ডছেদ করো। তাহলে সেটা কিন্তু গণতন্ত্র নয়। রাজনৈতিক দলগুলোকে প্রতিপক্ষ না বানাতে অন্তর্বর্তী সরকারের প্রতি সতর্কতাও দেন মির্জা ফখরুল। তিনি বলেন, “একজন উপদেষ্টা যখন এই কথা বলেন যে, রাজনৈতিক দলগুলো অন্তর্বর্তী সরকারকে ব্যর্থ করার জন্য কাজ করছে, এটা অত্যন্ত ঘোরতর অভিযোগ। আমি তীব্রভাবে এর নিন্দা জানাচ্ছি, প্রতিবাদ করছি এবং আমি মনে করি যে, এই ধরনের উক্তি তার প্রত্যাহার করা উচিত।”
উল্লেখ্য, গত ৫ আগস্ট গণঅভ্যুত্থানে পতন ঘটে শেখ হাসিনা সরকারের। ৮ আগস্ট ক্ষমতায় আসে অন্তর্বর্তী সরকার। কিন্তু চারমাস কেটে গেলেও এখনও নির্বাচন নিয়ে সেভাবে কোনও উচ্চবাচ্য করছেন না প্রধান উপদেষ্টা ইউনুস। তিনি নির্বাচনের আগে রাষ্ট্র সংস্কারের দিকেই জোর দিয়েছেন। কিন্তু সেই সংস্কার কত দিনে হবে তারও কোনও নির্দিষ্ট সময়সীমা জানাতে পারেননি ইউনুস। আর এখানেই প্রবল আপত্তি বিএনপির। আওয়ামি লিগ ক্ষমতাচ্যুত হওয়ায় বাংলাদেশের রাজনৈতিক ময়দানে দাপিয়ে বেরনোর কথা ছিল বিএনপির। মুচকি হাসিও হেসেছিলেন বেগম খালেদা জিয়া ও তাঁর ছেলে তারেক রহমান। তবে লাভের গুড় খেয়ে নিয়েছে জামাত ও হেফাজতে ইসলামের মতো মৌলবাদী সংগঠনগুলো। প্রধান উপদেষ্টা ইউনুসের অন্তর্বর্তী সরকারে তাদের প্রভাব অত্যন্ত বেশি। ফলে হালে পানি পাচ্ছে না বিএনপি।