সংবাদ প্রতিদিন ডিজিটাল ডেস্ক: প্রয়াত বাংলাদেশের বর্ষীয়ান কবি হেলাল হাফিজ। মাত্র তিনটি কাব্যগ্রন্থের রচয়িতা হয়েও প্রভূত খ্যাতি অর্জন করেছিলেন তিনি। ‘এখন যৌবন যার মিছিলে যাবার তার শ্রেষ্ঠ সময়’... এমন নানা পঙক্তির রচয়িতা এই কবির কবিতা ফিরেছে সাধারণ মানুষের মুখে মুখে। শুক্রবার প্রয়াত হলেন তিনি।
১৯৮৬ সালে প্রকাশিত হয় ‘যে জলে আগুন জ্বলে’। এটিই হেলালের প্রথম কাব্যগ্রন্থ। আর প্রথম বইটি থেকেই মানুষের কাছে পৌঁছে যায় তাঁর নাম। সেখানেই ছিল ‘নিষিদ্ধ সম্পাদকীয়’র মতো কবিতা। কবিতাটির প্রথম দুই পঙক্তি- ‘এখন যৌবন যার মিছিলে যাবার তার শ্রেষ্ঠ সময়/ এখন যৌবন যার যুদ্ধে যাবার তার শ্রেষ্ঠ সময়’... পাঁচ দশকেরও বেশি সময় ধরে এই কবিতার লাইনগুলি মানুষের মুখে মুখে ফিরে 'অমর' হয়ে গিয়েছে।
১৯৬৯ সালে বাংলাদেশে (তৎকালীন পূর্ব পাকিস্তান) গণ অভ্যুত্থান, পরবর্তী সময়ে মুক্তিযুদ্ধ- কবি হেলাল হাফিজের লেখা লাইনগুলি মানুষকে প্রেরণা জুগিয়েছিল। অথচ এই কবিতাটি নাকি ছাপতে চাননি এক পত্রিকার সম্পাদক। তাঁর যুক্তি ছিল, এই কবিতায় রাষ্ট্রদ্রোহের ডাক দেওয়া হয়েছে। পরে আহমেদ ছফার সঙ্গে মিলে তিনি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের নানা দেওয়ালে লিখে দিয়েছিলেন পঙক্তি দুটি। তা ছড়িয়ে পড়ে লোকের মুখে মুখে। কবিতাটি ইংরেজি,জার্মান, হিন্দি, ফরাসি-সহ নানা ভাষায় অনূদিত হয়েছে। সুর দিয়ে গান হিসেবেও গাওয়া হয়েছে।
‘যে জলে আগুন জ্বলে’র বিপুল সাফল্যের পরও দীর্ঘদিন আর কোনও কাব্যগ্রন্থ প্রকাশ করেননি হেলাল। আড়াই দশকেরও বেশি সময় পরে ২০১২ সালে প্রকাশিত হয় কবির দ্বিতীয় কাব্যগ্রন্থ ‘কবিতা একাত্তর’। যদিও এই বইতে আসলে প্রথম কাব্যগ্রন্থটিরই কিছু কবিতা সংকলিত হয়েছিল। সঙ্গে যুক্ত করা হয়েছিল কিছু নতুন কবিতা। ২০১৯ সালে প্রকাশিত হয় হেলাল হাফিজের তৃতীয় তথা শেষ কাব্যগ্রন্থ ‘বেদনাকে বলেছি কেঁদো না’। এত অল্প কবিতায় এহেন সাফল্য সত্যিই বিরল। এই মুহূর্তে এতদিনের চেনা বাংলাদেশ যেন এক অন্য চেহারা ধারণ করেছে। মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাস মুছে ফেলতে চাইছে বর্তমান শাসক। আর এই বদলে যাওয়া সময়ে প্রয়াত হলেন হেলাল হাফিজ। যিনি সেই ইতিহাসেরই এক অংশ ছিলেন। একে এক আশ্চর্য সমাপতন হিসেবেই দেখছে ওয়াকিবহাল মহল।