স্টাফ রিপোর্টার: ট্যাব কাণ্ডের শিকড়ে পৌঁছতে পুলিশ তদন্তের গতি বাড়াচ্ছে। গত ২৪ ঘণ্টায় নতুন করে ৫ জন গ্রেপ্তার হয়েছে। ট্যাবের টাকা জালিয়াতিতে (Tab Scam) অভিযুক্ত এখনও পর্যন্ত গ্রেপ্তারের সংখ্যা ৩২। রাজ্য পুলিশ এখনও পর্যন্ত ১ হাজার ২২০ টি অ্যাকাউন্ট ফ্রিজ করেছে। ৬৭ লক্ষ ৭৬ হাজার ৮২৮ টাকা ফ্রিজ হয়েছে এ পর্যন্ত। পুলিশের জোর ধরপাকড়ের ফলে বিভিন্ন জেলায় ছড়িয়ে থাকা চক্রের জাল ক্রমশ গুটিয়ে আনা হচ্ছে। ফলে নতুন করে ট্যাবের টাকা উধাওয়ের ঘটনা প্রায় নেই বললেই চলে বলে পুলিশ সূত্রে জানা গিয়েছে।
ট্যাব কাণ্ডের তদন্তকারী আধিকারিকরা জানিয়েছেন, ট্যাবের টাকা প্রতারকরা বিভিন্ন জেলায় এজেন্ট রাখে। এই এজেন্টরা বিভিন্নভাবে ব্যাঙ্ক অ্যাকাউন্ট জোগাড় করত। তার বিনিময়ে এজেন্টরা কমিশন পেত। নির্দিষ্ট কমিশনের ভিত্তিতে এজেন্টদের সঙ্গে চুক্তি হত। পূর্ব বর্ধমান জেলা পুলিশ কিষানগঞ্জ থেকে রবীন্দ্রপ্রসাদ সিং নামে এক ব্যবসায়ীকে গ্রেপ্তার করেছে। রবীন্দ্রপ্রসাদের জেরক্সের দোকান আছে। এই ব্যক্তিই এজেন্ট হিসাবে কাজ করেছেন। দু’জন যুবককে নিয়ে কিষানগঞ্জে ব্যাঙ্ক অ্যাকাউন্ট সংগ্রহ করেছিলেন। রবীন্দ্রপ্রসাদকে জিজ্ঞাসা করে পুলিশ জানতে পেরেছে, এক-একটি অ্যাকাউন্ট ভাড়া হিসাবে কাউকে ৫০০টাকা, কাউকে ৩০০টাকা কমিশন হিসাবে দেওয়া হত। পুলিশ আরও জানিয়েছে, হুগলি গ্রামীণ পুলিশ চোপড়া থেকে দুজনকে গ্রেপ্তার করেছে।
একাদশ-দ্বাদশের পড়ুয়াদের ট্যাব কেনার টাকা গায়েবের ঘটনা এই প্রথম। তবে ঘটনা প্রকাশ্যে আসার পরই সক্রিয় ছিল পুলিশের তৎপরতা। সেই কারণে উধাও হয়ে যাওয়া টাকা যেমন ফিরে আসছে, তেমনি বঞ্চিত পড়ুয়াদেরও টাকা ফিরিয়ে দেওয়া হচ্ছে। ২ কোটি ছেলে-মেয়েকে ১৬০০ কোটি টাকার ট্যাব দেওয়ার মধ্যে ২ কোটি টাকার মতো জালিয়াতির ঘটনার কথা মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় সমস্যা বৃহস্পতিবারই নবান্নে জানিয়েছেন। শুক্রবার রাজ্য পুলিশের পক্ষ থেকে জানানো হয়েছে, মালদহ থেকে ১ জনকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। এছাড়াও মালদহ পুলিশ পূর্ব মেদিনীপুর থেকে দুজনকে শোন অ্যারেস্ট করেছে। কলকাতা পুলিশ এখনও পর্যন্ত ১২২ টি অ্যাকাউন্ট ফ্রিজ করেছে। বিভিন্ন ব্যাঙ্কের সঙ্গে কথা বলে ফ্রিজ হওয়া ৩ লক্ষ ৬ হাজার ৬৭৩ টাকা ফিরিয়ে দেওয়ার প্রক্রিয়া শুরু হয়েছে বলে পুলিশ জানিয়েছে।
একাদশ এবং দ্বাদশ শ্রেণির পড়ুয়াদের পড়াশোনার সুবিধার্থে রাজ্য সরকার ‘তরুণের স্বপ্ন’ প্রকল্পের মাধ্যমে এককালীন ১০ হাজার টাকা দেয়। অভিযোগ, সেই টাকা ঢোকেনি বেশ কয়েক জন পড়ুয়ার অ্যাকাউন্টে। কোথাও কোথাও আবার এক জনের টাকা অন্য জনের অ্যাকাউন্টে ঢোকার অভিযোগও উঠেছে। রাজ্যজুড়ে দুহাজারেরও বেশি পড়ুয়া নানাভাবে প্রতারিত হয়। তদন্তকারীদের দাবি, পড়ুয়াদের টাকা হাতানোর নেপথ্যে বড় ষড়যন্ত্রের হদিশ মিলেছে। তদন্তে নেমে বেশ কয়েকজনকে ইতিমধ্যেই গ্রেপ্তার করেছে পুলিশ। জানা গিয়েছে, এখনও পর্যন্ত ট্যাব-কাণ্ডে ৩২ জনকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। শুধু তা-ই নয়, ১ হাজার ২২০টি ব্যাঙ্ক অ্যাকাউন্ট ফ্রিজ করা হয়েছে বলেও পুলিশ সূত্রে খবর। আটক করা হয়েছে ৭০ লক্ষ টাকার বেশি। এর মধ্যে কলকাতা পুলিশই ১২২টা অ্যাকাউন্ট আটক করেছে। ট্যাব-কাণ্ডে বারবার উঠে এসেছে উত্তর দিনাজপুরের চোপড়ার নাম। একাধিক অভিযুক্তকে সেখান থেকেই গ্রেপ্তার করা হয়েছে। পুলিশের অনুমান, গোটা চক্রের মূল রয়েছে চোপড়াতেই। সেখান থেকেই ট্যাবের টাকা হাতানোর পরিকল্পনা করা হয়েছিল। তবে শিলিগুড়ি, মালদহ থেকেও একাধিক গ্রেপ্তার হয়েছে। ধৃতদের মধ্যে চা শ্রমিক, নির্মাণ শ্রমিক, স্কুল শিক্ষক, শিক্ষাকর্মীরা রয়েছেন।
বৃহস্পতিবার রাতে দফায় দফায় অভিযান চালিয়ে এক যুবককে পাকড়াও করল প্রথম নদিয়ার রানাঘাট থানার পুলিশ। ধৃত মহম্মদ ফারুক আলম। চোপড়ার সোনাপুর পঞ্চায়েতের শ্রীপুকুর এলাকার বাসিন্দা। পেশায় পরিযায়ী শ্রমিক, মাসখানেক আগে দিল্লি থেকে বাড়িতে ফিরেছিলেন। দ্বিতীয়জন গুলজার আলি, দাসপাড়া পঞ্চায়েতের ধন্দেগছের বাসিন্দা। কৃষিকাজে যুক্ত। অন্যদিকে জাহাঙ্গির আলম ঘিরনিগাঁও গ্রাম পঞ্চায়েতের নারসাদিঘিগছের বাসিন্দা। অপরদিকে দক্ষিণ ও উত্তর দিনাজপুরের চোপড়া থানা এলাকা থেকে ঝাড়গ্রাম জেলা পুলিশ অমর ফারুক নামে এক ব্যক্তিকে বুধবার গ্রেপ্তার করে সেখানকার আদালতে তুলে ট্রানজিট রিমান্ডে ঝাড়গ্রামে নিয়ে আসে বৃহস্পতিবার।