shono
Advertisement

কয়েক শতক পরেও উচ্ছ্বাসে পড়েনি ভাটা, কেমন ছিল মাহেশ-মহিষাদলের রথযাত্রা?

ইতিহাসের আবর্তে বাংলার রথ,দেখুন ভিডিও। The post কয়েক শতক পরেও উচ্ছ্বাসে পড়েনি ভাটা, কেমন ছিল মাহেশ-মহিষাদলের রথযাত্রা? appeared first on Sangbad Pratidin.
Posted: 04:21 PM Jul 14, 2018Updated: 03:49 PM Jul 22, 2018

রথযাত্রা উপলক্ষে মরশুমী উৎসবে সেজে উঠেছে গোটা বাংলা। রাজ্যের বিভিন্ন প্রান্তে চলছে রথযাত্রার উৎসব। ইন্দ্রজিৎ দাসের কলমে রইল রাজ্যের কয়েকটি রথযাত্রার ইতিকথা।

Advertisement

 

মাহেশের রথযাত্রা:

আজ থেকে ৬০০ বছরেরেও আগের কথা। সাধক ধ্রুবানন্দ পুরীধামে যান তাঁর আরাধ্য দেবতা জগন্নাথদেবকে নিজে হাতে ভোগ নিবেদন করবেন বলে। সেখানে পাণ্ডাদের কাছে অপমানিতহয়ে ফিরে আসেন মাহেশে।স্বপ্নে দেখা দিলেন জগন্নাথ দেব। আরাধ্য দেবতার স্বাপ্নাদেশে মাহেশে গঙ্গার ধারে এক কুটিরে জগন্নাথ দেবের মূর্তি তৈরি করে শুরু করলেন সাধনা। নিজ হাতে ভোগ নিবেদন করেন জগন্নাথদেবকে। নীলাচলে যাওয়ার পথে একদিন চৈতন্যদেব মাহেশে ধ্রুবানন্দের কুটিরে এসে হাজির হন। ধ্রুবানন্দ তখন অন্তিম শয়নে। ধ্রুবানন্দের কাতর অনুরোধে চৈতন্যদেব দ্বাদশ গোপালের পঞ্চম গোপাল কমলাকর পিপলাইকে এই মন্দির সেবার দায়িত্ব দিলেন। কমলাকর পিপলাই মাহেশেই থেকে গেলেন।বংশানুক্রমে তাঁর উত্তারধিকারীরা আজও মন্দিরের সেবাইত। এই কমলাকর পিপিলাই-ই পুরীর রথযাত্রার সমারোহ দেখে এসে মাহেশে রথযাত্রার প্রবর্তন করেন। পুরীর পর এটিই দ্বিতীয় বৃহত্তম রথযাত্রা। তাই পুরীকে বলা হয় নীলাচল আর মাহেশকে নবনীলাচল। সেই থেকে আজও সমান উদ্দীপনার সঙ্গে রথযাত্রা আর রথের মেলা হয়ে চলেছে মাহেশে।

গঙ্গার পাড় ভাঙায় জিটিরোডের ধারে তৈরি হয় নুতুন মন্দির। হাজার শালগ্রাম শিলার রত্নবেদির উপর প্রতিষ্ঠিত জগন্নাথ, বলরাম, সুভদ্রা। পুরীর মতো এখানে মূর্তিবদল হয় না। প্রতিবছর স্নানযাত্রার পর হয় অঙ্গরাগ। তিনদিন মন্দিরের দরজা বন্ধ রেকে নতুন রূপ দেন শিল্পী। কমলাকরের রথ আজ নেই। মাহেশের রথ একাধিকবার পরিবর্তিত হয়েছে। বর্তমান রথটি লোহার তৈরি। ন’টি চূড়া, রথের সামনে নীলও সাদা রঙের দুটি ঘোড়া, সারথি ও দুটি রাজহাঁস রয়েছে। রথযাত্রার দিন লক্ষ ভক্তের টানে জগন্নাথ, বলরাম, সুভদ্রা জিটি রোড ধরে চলেন শ্রীরামপুরের গুন্ডিচাবাড়িতে। আটদিন ধরে সেখানেই চলে পুজোপাঠ ও ভোগ নিবেদন। প্রতিদিন প্রভুকে খিচুড়ি, নানারকম ভাজা, সাদা অন্ন, ডাল তরকারি, চাটনি, পায়েসের বোগ দেওয়া হয়। আর থাকে প্রভুরপ্রিয় মালপোয়া। সন্ধের ভোগে থাকে লুচি হালুয়া। আজ দূরদূরান্ত থেকেমানুষ আসেন মাহেশের রথযাত্রায়। রথ থেকে ভক্তদের চোড়া হয় প্রসাদি কলা, বাতাসা, নকুলদানা। এখানে রথের মেলা চলে প্রায় একমাস ধরে। এই মাহেসের রথের মেলাতেই বঙ্কিমচন্দ্রের সাহিত্যে পাই ‘রাধারাণী’কে। একাদশ বছরের বালিকা ‘রাধারাণী’ রথের মেলাতে মালা বিক্রি করতে এসেছিল। সন্ধেয় প্রবল বৃষ্টিতে মেলা ভেঙে যায়। পথ হারিয়ে কাঁদতে থাকে ‘রাধারাণী’। এক জমিদার সব মালা কিনে নিয়ে তাকে বাড়িতে দিয়ে আসেন। ‘রাধারাণী’র মাধ্যমেই আমরা দেখতে পাই রথের মেলার প্রাচীন রূপ।

 

মহিষাদলের রথযাত্রা:

১৭৭৬ খ্রিস্টাব্দে রানি জানকিদেবী মহিষাদলের রথযাত্রা সূচনা করেন। কাঠের তৈরি রথটি তখন ছিল সতেরো চূড়াবিশিষ্ট। একাধিকবার রথটির সংস্কার হয়েছে। বর্তমানের রথটি নীল রঙের তেরো চূড়ার। রথযাত্রায় জগন্নাথ, বলরাম, সুভদ্রার সঙ্গে রাজবাড়ির গৃহদেবতা মদনগোপাল জিউ শালগ্রাম শিলা শ্রীধরও যান গুন্ডিচাবাটি। রথের দিন সকালে বিগ্রহগুলিকে রথে তোলা হয়। রথ টানার আগে রাজপ্রাসাদ থেকে রাজপরিবারের একজন সদস্য সুন্দর পালকি চড়ে রথযাত্রায় আসেন। সঙ্গে থেকে রঙ্নি রাজছ্ত্রধারী ও ডঙ্কাবাদক। তিনি পালকি থেকে নেমে রতের দড়িতে প্রণাম করার পররথ টানা শুরু হয়। রতের সঞ্চালক মশাইরথ টানার নির্দেশ দেন। আগে কামান দাগা হত, শিঙা ফোঁকা হত। এখন আর এসব হয় না। দুটো হাতি রথের আগে যেত। হাতির পিঠে বসে রথযাত্রার নিশানা দেখানো হত। এখন একজন মাটিতে দাঁড়িয়ে লাল নিশান লাগানো লাঠি উপরের দিকে তুলে ধরেন। সঞ্চালকমশাই  ওই নিশানা দেখে রথ টানার নির্দেশ দেন। ঢাকের বাদ্যি, খোল-করতাল ও হরিনাম সংকীর্তনের সঙ্গে হাজার হাজার ভক্তরা রথ টেনে নিয়ে চলেন গুন্ডিচাবাটিতেয গুন্ডিচাবাটিতে মদনগোপাল জিওকে ন’দিন ষড়ভুজ গৌরাঙ্গ, রাখালরাজা, কালীয়দমন, কৃষ্ণকালী, মৎস্য অবতার, কুর্ম অবতার, রাজবেশ, বরাহ অবতার ও নটবর বেশে সাজানো হয়। উলটোরথের দিন মদনগোপাল জিউ নটবর বেশে জগন্নাথ, বলরাম, সুভদ্রা ও শালগ্রাম শিলা শ্রীধরের সঙ্গে রথে চড়েন। একসময় রথের ক’দিন গুন্ডিচাবাটিতে হত যাত্রাপালা, পুতুলনাচ। এখন এসব না হলেও কীর্তন, রামায়ণ গান আজও হয়। ২০০০ সাল থেকে রাজবাড়ির রথযাত্রা পরিচালানা করছেন মহিষাদল পঞ্চায়েত সমিতি। তাদের উদ্যোগে আজ নানারকম সাংস্কৃতক অনুষ্ঠান হয়। মেলাও বসে।

দক্ষিণ ২৪ পরগনার রাসমাঠের রথযাত্রা। ছবি: বিশ্বজিৎ নস্কর

দক্ষিণ ২৪ পরগনার রাসমাঠের রথযাত্রা ৩৫০ বছরের পুরনো। স্থানীয় রায়চৌধুরিরাই প্রথা মেনে এই রথযাত্রার সূচনা করে আসছে। পুরীর ঐতিহ্য মেনেই জমিদার রায়চৌধুরিরা আজও রথযাত্রা পরিচালনা করে। এই উৎসবকে ঘিরে রাস মাঠে বসে রথের মেলা। দূরদূরান্ত থেকে রথের রশি টানতে রাস মাঠে ভিড় করেন ভক্তরা। এখন জমিদারি না থাকলেও রথযাত্রায় তার কোনও ছাপ পড়েনি। রথাযাত্রায় বিঘ্ন এডডাতে তৈরি হয়েছে ট্রাস্ট। সেই ট্রাস্টিবোর্ডের সদস্যরাই সব দেখভাল করেন। বারুইপুর পুরসভার চেয়ারম্যান শক্তি রায়চৌধুরি,  চৌধুরি বাড়ির ট্রাস্টি বোর্ডের অমিয় রায়চৌধুরি আজ রথের রশিতে টান দিয়ে রথযাত্রা উৎসবের সূচনা করবেন। সন্ধ্যার ঠিক পরেই রথ থেকে জগন্নাথ, বলরাম, শুভদ্রাকে নিয়ে আসা হবে নাটমঞ্চে। এবারেও সেই প্রথার কোনও ব্যতিক্রম হচ্ছে না।

মায়াপুরে ইস্কন মন্দিরে রথে নিয়ে যাওয়া হচ্ছে বিগ্রহকে। ছবি: পলাশ পাত্র

দেখুন মায়াপুরের ইস্কন মন্দিরের রথযাত্রা:

 

ভিডিও: পলাশ পাত্র

The post কয়েক শতক পরেও উচ্ছ্বাসে পড়েনি ভাটা, কেমন ছিল মাহেশ-মহিষাদলের রথযাত্রা? appeared first on Sangbad Pratidin.

Sangbad Pratidin News App

খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ

Advertisement
toolbarHome ই পেপার toolbarup রাজধানী এক্সপ্রেস toolbarvideo ISL10 toolbarshorts রোববার