সুনীপা চক্রবর্তী, ঝাড়গ্রাম: ৬ সিপিএম কর্মী খুনে ৪৫ জনকে যাবজ্জীবন সাজা শোনাল ঝাড়গ্রাম আদালত। ৩২ বছর এই মামলা চলার পর বিচারক এদিন এই মামলার সাজা শোনালেন। গতকাল, মঙ্গলবার অভিযুক্তদের দোষী সাব্যস্ত করে আদালত।
১৯৯৩ সালের ৮ মে বেলপাহাড়ি থানার দিয়াশি গ্রামে ছয়জন সিপিএম কর্মীকে নৃশংসভাবে খুন করা হয়েছিল। জানা গিয়েছে, এঠেলা জঙ্গলে নিয়ে গিয়ে দিয়াশি গ্রামের ভক্তি মাহাতো, কার্তিক মাহাতো, বিদ্যুৎ মাহাতো, মাধব মাহাতো এবং হিজলা গ্রামের মনোজ গড়াই, শিলদা গ্রামে কোয়াক ডাক্তার সমীর মুখোপাধ্যায়কে খুন করা হয়েছিল। বাম আমলের সেই ঘটনায় চাঞ্চল্য ছড়িয়েছিল ঝাড়গ্রাম-সহ জঙ্গলমহলে। পুলিশ তদন্তে নেমে একাধিক অভিযুক্তকে গ্রেপ্তার করে। ঝাড়গ্রাম মহকুমা আদালতে মামলা ওঠে।
পুলিশ ওই বছরই ২১ আগস্ট ১০৩ জনের নামে আদালতে চার্জশিট জমা দেয়। সেসময় ২৭ জন সাক্ষীর নাম নথিভুক্ত করেন তদন্তকারীরা। মামলা চলাকালীন ৩৯ জন অভিযুক্ত মারা যান। ১৯ জন ফেরার হয়ে যান। ৪৫ জনের বিরুদ্ধে বিচারপ্রক্রিয়া শুরু হয়। ৪৫ জনের বিরুদ্ধে চলতি বছরের ১৭ জুলাই চার্জ গঠন করা হয়। ১৮ আগস্ট থেকে ১৮ সেপ্টেম্বর পর্যন্ত ওই মামলার শুনানিতে ১৫ জন সাক্ষ্য দেন। গতকাল, মঙ্গলবার ঝাড়গ্রাম আদালতের এডিজে সেকেন্ড কোর্টের বিচারক ৪৫ জনকে দোষী সাব্যস্ত করেন। এদিন সাজা ঘোষণা করা হল।
এদিন সাজা ঘোষণার জন্য কড়া নিরাপত্তার বলয়ে মোড়া ছিল আদালত চত্বর। সাজাপ্রাপ্তদের বয়স পঞ্চান্ন থেকে ষাট বছরের বেশি। অভিযোগ, ঘটনার সময় তৎকালীন এডিএম মহেন্দ্রনাথ হেমব্রম খুন হয়েছিলেন। তিনি এলাকায় যথেষ্ট জনপ্রিয় ছিলেন। এই খুনের অভিযোগ উঠেছিল তৎকালীন শাসক দল সিপিএমআশ্রিত দুষ্কৃতীদের বিরুদ্ধে। এই ঘটনার পর পালটা হিসেবে ছয় জন সিপিএম কর্মীকে নৃশংসভাবে হত্যা করা হয়েছিল। বিভিন্ন সূত্র থেকে জানা যায়, ঘটনার দিন ওই ছ'জন পার্টির কোনও মিটিংয়ে যোগ দিতে যাচ্ছিলেন। তাঁদের রাস্তা থেকে অপহরণ করে এঠেলার জঙ্গলে নিয়ে গিয়ে ধারালো বিভিন্ন অস্ত্র দিয়ে কুপিয়ে খুন করা হয়।
একসঙ্গে ৪৫ জনের যাবজ্জীবন কারাদণ্ডের নির্দেশ গুরুত্বপূরণ ঘটনা বলে মনে করছে পুলিশ মহল। এই বিষয়ে ঝাড়গ্রামের পুলিশ সুপার অরিজিৎ সিনহা বলেন, "এক হাতুড়ে চিকিৎসক-সহ মোট ছ’জন সিপিএম কর্মীকে খুন করে খালের জলে ভাসিয়ে দেওয়ার ঘটনায় ৪৫ জনকে যাবজ্জীবন সাজা দিল ঝাড়গ্রামের অতিরিক্ত দ্বিতীয় জেলা ও দায়রা আদালত।"
