অর্ণব দাস, বারাকপুর: বাড়িতে মায়ের সঙ্গে আপত্তিকর অবস্থায় পরিচিত কাকাকে দেখে ফেলেছিল বছর দশের বালক। তাই, অবৈধ সম্পর্কের একমাত্র প্রমাণ লোপাট করতে কিশোর অভয় দাসকে দুনিয়া থেকে সরিয়ে দেওয়ার মত নির্মম সিদ্ধান্ত নেয় মায়ের প্রেমিক বিনোদ রায়। সেই পরিকল্পনা মত অভয়কে ভুল বুঝিয়ে পানিহাটির রাসমনি মোড় সংলগ্ন গোসালা মাঠে নিয়ে গিয়ে ব্লেড দিয়ে গলা চিঁড়ে নৃশংস ভাবে খুন করে সে। তারপর মৃতদেহ ফেলে দিয়ে যায় খড়দহ পুরসভার ৬নম্বর ওয়ার্ডের মাঠপাড়ার ভাগাড়ে। বুধবার সকালে সেই ভাগাড় থেকে কিশোরের রক্তাক্ত পচা-গলা দেহ উদ্ধার হতেই তীব্র চাঞ্চল্য ছড়িয়েছে গোটা এলাকায়।
প্রসঙ্গত, রহড়া থানার বন্দিপুর লাল ইটখোলা এলাকা বাসিন্দা পুনমদেবী পেশায় ফুচকা বিক্রেতা। তাঁর স্বামী বিশেষভাবে সক্ষম। পরিবারে ছেলে অভয় দাস ও তার এক দিদিও রয়েছে। পুনমদেবী অভিযোগ করেছিলেন, গত শনিবার সন্ধ্যায় শেষবার তাঁর ছেলে অভয়কে এলাকার ছেলেমেয়েদের সঙ্গে খেলা করতে দেখা গিয়েছিল। তারপর থেকে আর খোঁজ মেলেনি কিশোরের। এনিয়ে রাতেই তিনি রহড়া থানায় অভিযোগও দায়ের করেছিলেন। তারপর থেকেই পুলিশ সিসি ক্যামেরার ফুটেজ ও সোর্স ইনফরমেশনের সাহায্যে জানতে পারে পরিবারের পরিচিত বিনোদের সঙ্গেই শেষ বার দেখা গিয়েছিল অভয়কে। এই খবর জানা মাত্রই গত সোমবার তাকে গ্রেপ্তার করা হয়। প্রথমে ধৃত স্বীকার না করলেও পরে সিসি ক্যামেরার ফুটেজের প্রমাণ দেখালে সে স্বীকার করতে বাধ্য হয়। পরেরদিন মঙ্গলবার বিনোদকে বারাকপুর আদালতে পেশ করে নিজেদের হেফাজতে চাইলে পাঁচদিনের পুলিশি হেফাজতের নির্দেশ দেন বিচারক।
বিনোদকে নিজেদের হেফাজতে নেওয়ার পর জিজ্ঞাসাবাদে তদন্তকারীরা জানতে পারেন, পুনমদেবীর সঙ্গে তাঁর দীর্ঘদিনের প্রেমের সম্পর্ক। বাড়িতেও যাতায়াত ছিল বিনোদের। কিন্তু পরিবার সে কথা জানত না। এমনই একদিন পুনমের বাড়িতে গিয়ে বিনোদের সঙ্গে মায়ের ঘনিষ্ঠ মুহূর্ত দেখে ফেলে অভয়। তারপর থেকে কাকা বলে পরিচিত বিনোদের সঙ্গে কিশোরের মেলামেশার আচরণ পালটালে অবৈধ সম্পর্ক জানাজানি হওয়ার আশঙ্কায় সে খুনের সিদ্ধান্ত নেয়। সেইমত গত শনিবার সে কিশোরকে খেলার মাঝেই ডেকে বুঝিয়ে পানিহাটির গোশালা মাঠে নিয়ে গিয়ে ব্লেড দিয়ে গলায় একের পর এক কোপ দিয়ে খুন করে। তারপর মৃতদেহ বস্তায় ভরে সাইকেলে করে সে খড়দহের ভাগাড়ে ফেলে দিয়ে আসে। এই প্রসঙ্গে বারাকপুর পুলিশ কমিশনারেটের এসিপি তনয় চট্টোপাধ্যায় শুধুমাত্র জানিয়েছেন, "ধৃতকে জিজ্ঞাসাবাদ করে তদন্ত চলছে।" যদিও, কিশোর খুনের ষড়যন্ত্রে প্রেমিকের সঙ্গে মা যুক্ত রয়েছে কিনা এই বিষয়টিও খতিয়ে দেখা হচ্ছে বলেই পুলিশ সূত্রে খবর।