দেব গোস্বামী, বোলপুর: রীতি ঐতিহ্য মেনেই শেষ হল শান্তিনিকেতনের পৌষ উৎসব ও মেলার। এবার ভাঙামেলা রুখতে কড়া পদক্ষেপ বিশ্বভারতী কর্তৃপক্ষ ও জেলা প্রশাসনের। ২০১৯ সালের পর এবারই শান্তিনিকেতন ট্রাস্ট ও বিশ্বভারতী কর্তৃপক্ষ আয়োজন করে এই পৌষমেলার। সর্বতভাবে সহযোগিতার হাত বাড়িয়ে দেয় জেলা প্রশাসনও। ২৩ ডিসেম্বর বৈতালিক ও সানাইয়ের সুরে আনুষ্ঠানিক উদ্বোধন হয় মেলার। শনিবার শেষ দিনেও পর্যটক-সহ স্থানীয়দের ঢল ছিল চোখে পড়ার মতো।
ছয় দিন উপচে পড়া ভিড় হওয়ায় খুশি হস্তশিল্পী থেকে মেলার স্টল ব্যবসায়ী, হোটেল, রিসর্টন মালিকরা। তবে শেষ দু'দিন প্রাক্তন প্রধানমন্ত্রী মনমোহন সিংয়ের প্রয়াণে রাষ্ট্রীয় শোক ঘোষণা হওয়ায় কিছুটা হলেও তাল কেটেছিল মেলার। বিনোদন মঞ্চে সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান পরিবেশন বন্ধ থাকলেও ভিড় ছিল চোখে পড়ার মতো। ইউনেস্কোর বিশ্ব ঐতিহ্য স্বীকৃতির পর এই বছর আলাদা গুরুত্ব মেলার। নিরাপত্তা ব্যবস্থার পাশাপাশি ভিড় সামলাতে হিমশিম খেতে হয় পুলিশ-প্রশাসনকেও।
এদিন মেলা শেষ করা, মাঠ পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন সহ যাবতীয় বিষয় নিয়ে বিশ্বভারতীর কেন্দ্রীয় গ্রন্থাগারে জরুরি বৈঠকে বসে জেলা প্রশাসন, বিশ্বভারতী কর্তৃপক্ষ এবং শান্তিনিকেতন ট্রাস্ট। বৈঠকে উপস্থিত ছিলেন রাজ্যের মন্ত্রী চন্দ্রনাথ সিংহ, উপাচার্য বিনয়কুমার সোরেন, সভাধিপতি কাজল শেখ, অতিরিক্ত পুলিশ সুপার রানা মুখোপাধ্যায়, বোলপুরের মহকুমা পুলিশ আধিকারিক রিকি আগরওয়াল সহ অন্যান্যরা। এছাড়াও বৈঠকে উপস্থিত ছিলেন মেলার উপসমিতির সদস্য, ব্যবসায়ী সমিতি ও হস্তশিল্প সমিতির সদস্যরা।
বিশ্বভারতীর উপাচার্য বিনয়কুমার সোরেন বলেন, "ছয় দিন ধরেই দূর দূরান্তের পর্যটক ছাড়াও স্থানীয় বাসিন্দারাও মেলায় অংশগ্রহণ করেছেন এবং আনন্দ পেয়েছেন। মানুষের উচ্ছ্বাসে আমরা সকলেই আনন্দিত এবং আপ্লুত।" বোলপুরের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার রানা মুখোপাধ্যায় বলেন, "ছয় দিনের ঐতিহ্যবাহী মেলায় প্রায় সাত লক্ষ মানুষের সমাগম হয়েছে। জেলা পুলিশের পক্ষ থেকে যাবতীয় নিরাপত্তা এবং নজরদারি সুরক্ষিত করা হয়েছে। সাড়ে পাঁচশো জনকে বিভিন্ন অভিযোগে আটক করা হয়। জিজ্ঞাসাবাদের পর ২৫০ জনকে বিভিন্ন মামলা দেওয়া হয়েছে।" শান্তিনিকেতন ট্রাস্টের সম্পাদক অনিল কোনার বলেন, "পর্যটক ছাড়াও স্থানীয় বাসিন্দারাও মেলায় অংশগ্রহণ করেছেন। ৩১ ডিসেম্বরের মধ্যেই মেলার যাবতীয় খুঁটিনাটি রিপোর্ট জমা করতে হবে জাতীয় পরিবেশ আদালতে।" এই বছর পূর্বপল্লীর মাঠে স্বমহিমায় ঐতিহ্য ফিরে আসায় খুশি বোলপুর-শান্তিনিকেতনের বাসিন্দা, হস্তশিল্পী ব্যবসায়ী থেকে প্রবীণ আশ্রমিকরাও।