মনিরুল ইসলাম, উলুবেড়িয়া: পেটের টানে মধ্যপ্রদেশে গিয়ে নিখোঁজ আমতার গাজীপুরের পরিযায়ী শ্রমিক। চাঞ্চল্যকরভাবে ওই শ্রমিকের দেহ উদ্ধার হয়েছে ছত্তিসগড়ের কারাঞ্জিয়া থানা এলাকা থেকে। মৃত শ্রমিকের নাম বিদ্যুৎ বেরা ওরফে ঝন্টু। মাত্র ৯ মাস আগেই বিজেপি শাসিত মধ্যপ্রদেশে কাজে গিয়েছিলেন তিনি। কিন্তু এই পরিণতি যে হবে তা কল্পনাও করতে পারেনি পরিবার। অভিযোগ, বাংলায় কথা বলার জন্য তাঁকে হেনস্তা করা হত। এমনকী বাংলাদেশি সন্দেহেই এই খুন বলে দাবি পরিবারের।
ময়নাতদন্তের পর দেহ মাটি চাপা দিয়ে দেওয়া হয়েছিল বলেও অভিযোগ পরিবারের। শেষমেশ প্রশাসনের সাহায্যে ফের মাটি খুঁড়ে বিদ্যুতের দেহ নিয়ে আসা হচ্ছে আমতায়। মধ্যপ্রদেশ থেকে ছত্তিসগড়ে কীভাবে ঝন্টুর দেহ পৌঁছল তা নিয়ে ধোঁয়াশায় পরিবার। খবর পেয়েই ছুটে গিয়েছেন স্থানীয় তৃণমূল বিধায়ক নির্মল মাজি। ঘটনার তীব্র নিন্দা জানানোর পাশাপাশি তাঁর অভিযোগ, ''বিজেপি শাসিত ওই রাজ্য থেকে বিদ্যুতের দেহ নিয়ে আসার ক্ষেত্রেও একাধিক ক্ষেত্রে অসহযোগিতা করা হচ্ছে।'' তাঁর কথায়, ''বিজেপিশাসিত রাজ্যেগুলিতে পরিযায়ী শ্রমিকদের যেভাবে মারধর এবং খুনের ঘটনা ঘটছে তার তীব্র নিন্দা জানাচ্ছি।''
পরিবার সূত্রে জানা যায়, বিদ্যুৎ বেরা ওরফে ঝন্টু আমতার পূর্ব গাজীপুরের বেরা পাড়া এলাকার বাসিন্দা। কাজের জন্য গত ন'মাস ধরে সেখানেই ছিলেন বছর চল্লিশের বিদ্যুৎ। পরিবারের এক সদস্য জানান, ''ভাইফোঁটায় বাড়ি ফেরার কথা ছিল তাঁর। দিদির হাতে ফোঁটা নেবেন বলে জানিয়েছিলেন। কিন্তু ফোঁটা নিতে তিনি আসেননি।'' ওই সদস্যের অভিযোগ, এরপর থেকেই খোঁজ পাওয়া যাচ্ছিল না বিদ্যুতের। দীর্ঘ খোঁজাখুঁজির পর এক ব্যক্তির থেকে পরিবার জানতে পারে, ৩১ অক্টোবর ছত্তিশগড়ের কারাঞ্জিয়া থানা এলাকার এক জঙ্গল থেকে ঝন্টুর দেহ উদ্ধার করে সংশ্লিষ্ট থানার পুলিশ। তাঁর মাথা, মুখ এবং শরীরে বিভিন্ন জায়গায় আঘাতের চিহ্ন রয়েছে বলে ময়নাতদন্তে উল্লেখ।
বিদ্যুতের মেজ বৌদি মঙ্গলা বেরা বলেন, ''ভাই বড়দিকে বলেছিলেন, যে সেখানে বাংলা ভাষায় কথা বলার জন্য সমস্যায় রয়েছেন। তাঁকে হেনস্থার শিকার হতে হচ্ছে।" ঘটনায় অভিযুক্তের কড়া শাস্তির দাবিতে ফুঁসছে পরিবার।
জানা যায়, ঘটনার কথা জানতে পেরেই বিদ্যুতের পরিবারের লোকেরা উদং দু'নম্বর গ্রাম পঞ্চায়েতের ওই এলাকার সদস্য তন্ময় বেরার সঙ্গে যোগাযোগ করেন। তিনি পুলিশের সঙ্গে যোগাযোগ করেন এবং বিষয়টি জানান বিধায়ক নির্মল মাজিকে। আমতা থানার মাধ্যমে সংশ্লিষ্ট থানার পুলিশের সঙ্গে যোগাযোগ করে দেহ পাঠানোর জন্য আবেদন জানায়।
অন্যদিকে তন্ময় বেরা জানিয়েছেন, বিষয়টি নিয়ে নির্মল মাজি রাজ্য সরকারের দৃষ্টি আকর্ষণ করেন। তারপর সরকারের পক্ষ থেকে বিদ্যুতের পরিবারের লোকেদের সেখানে যাওয়ার ব্যবস্থা করা হয় এবং পরে আবার অ্যাম্বুলেন্স পাঠানো হয় দেহ নিয়ে আসার জন্য। অবশেষে শনিবার বিকেলে আসে দেহ। মৃতদেহ আসার পরে বিজেপি শাসিত রাজ্যে বাঙালিকে এই খুনের প্রতিবাদে একটা মিছিল করে স্থানীয় বাসিন্দারা। এই মিছিলে উপস্থিত ছিলেন নির্মল মাজিও।
