থিসিস নকল করে PhD ডিগ্রি! অপসারিত কল্যাণী বিশ্ববিদ্যালয়ের ডিন

09:54 PM Sep 14, 2022 |
Advertisement

বিপ্লবচন্দ্র দত্ত,কৃষ্ণনগর: এক গবেষকের থিসিস হুবহু নকল করে তা জমা দিয়ে পিএইচডি ডিগ্রি পেয়েছেন অন্য আরেক গবেষক। শুধু তাই নয়, কল্যাণী বিশ্ববিদ্যালয়ে (Kalyani University) শিক্ষা অনুষদের ডিন পদে বসে দিব্যি কাজ চালিয়ে যাচ্ছিলেন অভিযুক্ত গবেষক। তদন্ত কমিটির রিপোর্টে জালিয়াতি ধরা পড়ে যায়। এরপরই ডিন পদ থেকে অভিযুক্ত গবেষককে অপসারণ করা হয়। যদিও অভিযুক্ত গবেষক এই অভিযোগ সম্পূর্ণ অস্বীকার করেছেন।

Advertisement

জানা গিয়েছে, থিসিস নকল করার অভিযোগ উঠেছে শিক্ষাতত্ত্ব বিভাগের অধ্যাপক দেবপ্রসাদ শিকদারের বিরুদ্ধে। দু’বছর ধরে তিনি কল্যাণী বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষা অনুষদের ডিন পদে কর্মরত। ওই বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষাতত্ত্ব বিভাগের অধীনে ১৯৯৯ সালের মার্চ মাসে ‘এ কম্পারেটিভ স্টাডি অফ টিচিং বায়োলজি ইন ডিফারেন্ট কোর্সেস অ্যাট হায়ার সেকেন্ডারি লেভেল ইন ওয়েস্ট বেঙ্গল’ শীর্ষক শিরোনামে একটি থিসিস বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষের কাছে জমা দিয়েছিলেন দেবপ্রসাদ। ওই বছরেই তিনি পিএইচডি ডিগ্রি পেয়ে যান। এরপর অধ্যাপক হিসাবে নিজের কাজ চালিয়ে যান।বছর দুয়েক আগে তিনি শিক্ষাতত্ত্ব বিভাগের শিক্ষা অনুষদের ডিন হয়েছেন।

[আরও পড়ুন: Don’t Touch Me বিতর্ক: ‘মহিলা পুলিশ দিয়ে ফাঁসানোর ছক ছিল, পা দিইনি’, পালটা দাবি শুভেন্দুর]

অধ্যাপক দেবপ্রসাদ শিকদার অন্যের থিসিস নকল করেছেন, এমন একটা অভিযোগ বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষের কাছে আনেন অধ্যাপক শান্তিনাথ সরকার। অভিযোগ, ১৯৯৫ সালে অধ্যাপক স্বদেশরঞ্জন সামন্ত ‘অ্যা কম্পারেটিভ স্টাডি অফ টিচিং ফিজিক্স ইন ডিফারেন্ট কোর্সেস অ্যাট দা হায়ার সেকেন্ডারি লেবেলস ইন ওয়েস্ট বেঙ্গল’ নামে থিসিস পরীক্ষকদের কাছে জমা দিয়েছিলেন এবং সেটা মূল্যায়িত হয়েছিল। থিসিস জালিয়াতি নিয়ে বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষের কাছে আরটিআই করেছিলেন শান্তিনাথ সরকার। তাঁর অভিযোগ,”আমি দীর্ঘদিন ধরেই অভিযোগ জানিয়ে আসছিলাম। কিন্তু বিশ্ববিদ্যালয়ের আগের প্রশাসন তার বিরুদ্ধে কোনও ব্যবস্থা নেয়নি। এরকম থিসিস জালিয়াতি করে পিএইচডি ডিগ্রি লাভের দৃষ্টান্ত খুব কম।”

Advertising
Advertising

বিশ্ববিদ্যালয় সূত্রে জানা গিয়েছে, অধ্যাপক অলোককুমার বন্দ্যোপাধ্যায় উপাচার্য থাকাকালীন থিসিস নকলের অভিযোগের তদন্ত করানো হয়েছিল। কিন্তু রাজনৈতিক চাপে সেই তদন্ত রিপোর্ট ধামাচাপা পড়ে যায় বলে অভিযোগ। ইদানীং আবার সেই থিসিস নকলের অভিযোগ ওঠে। সেই অভিযোগের ভিত্তিতে বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ ৩ সদস্যের তদন্ত কমিটি গঠন হয়। তদন্ত কমিটি দু’টি থিসিস খতিয়ে দেখে বুঝতে পারেন যে অধ্যাপক দেবপ্রসাদ সিকদারের থিসিস এবং অধ্যাপক স্বদেশরঞ্জন সামন্তের থিসিসের প্রায় ১০০ শতাংশ মিল রয়েছে। দুটিকে থিসিসের মধ্যে ফারাক শুধু একটাই, দেবপ্রসাদ শিকদারের থিসিসের শিরোনামে ‘বায়োলজি’ উল্লেখ রয়েছে, আর অধ্যাপক স্বদেশ মোহন সামন্তের শিরোনামে উল্লেখ রয়েছে ‘ ফিজিক্স’-এর। সোমবার তদন্ত কমিটির রিপোর্ট বিশ্ববিদ্যালয়ের কর্মসমিতির বৈঠকে পেশ করা হয়।

[আরও পড়ুন: ‘গাভাসকর না ছাড়লে কোহলি জন্মাত না’, ফের রাজনীতি থেকে ‘অবসর’ জল্পনা উসকে দিলেন মদন]

এই বিষয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রেস পাবলিশিং কমিটির চেয়ারম্যান অধ্যাপক সুজয় মণ্ডল জানিয়েছেন,”থিসিস নকল করে পিএইচডি ডিগ্রি লাভের অভিযোগ আসছিল দীর্ঘদিন ধরেই। সেই অভিযোগের তদন্ত করার জন্য তিন সদস্যের কমিটি গঠন করা হয়েছিল। তদন্তের রিপোর্ট দেখার পর কর্ম সমিতি বৈঠকে সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে, নতুন অর্ডার না আসা পর্যন্ত শিক্ষাতত্ত্ব বিভাগের অনুষদের ডিন পদ থেকে আপাতত অপসারিত দেবপ্রসাদ শিকদার। কর্মসমিতির বৈঠকে যে সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে, সেই সিদ্ধান্ত উচ্চশিক্ষা দপ্তরের মুখ্যসচিবকে জানানো হবে।”

এ বিষয়ে বুধবার বিকালে অধ্যাপক দেবপ্রসাদ সিকদার বলেন,”আমাকে এভাবে অপসারণ করা যায় না, অপসারণ করতে পারে উচ্চশিক্ষা দপ্তর। আমার বিরুদ্ধে যে অভিযোগ আনা হয়েছে,সেটা সঠিক নয়।” ইতিমধ্যেই থিসিস নকল করার অভিযোগ তদন্ত কমিটিতে প্রমাণিত হওয়ায় অভিযুক্ত ওই অধ্যাপকের বিরুদ্ধে শাস্তিমূলক ব্যবস্থা গ্রহণের দাবি উঠেছে। যদিও উচ্চশিক্ষা দপ্তর এবিষয়ে কী সিদ্ধান্ত নেয়,সেটাই এখন দেখার।

Advertisement
Next