টিটুন মল্লিক, বাঁকুড়া: শূন্যের গেরো কাটাতে নজিরবিহীন পদক্ষেপ সিপিএমের। এবার জেলা সিপিএমের শীর্ষপদে বসানো হল সংগ্রামী মহিলা নেত্রী তথা প্রাক্তন মন্ত্রীকে। বাঁকুড়া জেলা সিপিএমের সম্পাদক হলেন পিছিয়ে পড়া সম্প্রদায়ের প্রতিনিধি দেবলীনা হেমব্রম। বৃহস্পতিবার জেলা সিপিএমের সম্মেলন এই সিদ্ধান্ত গৃহীত হয়েছে সর্বসম্মতিক্রমে। তিনজনের মধ্যে প্রতিযোগিতায় দেবলীনা হেমব্রমকে বেছে নেওয়া হয়েছে বলে জানিয়েছেন সিপিএমের রাজ্য সম্পাদক মহম্মদ সেলিম। এমন ঘটনা লাল পার্টিতে বিরল বলেই মত ওয়াকিবহাল মহলের। এই প্রথম কোনও আদিবাসী মহিলা মুখকে নিয়ে আসা হল জেলা সিপিএমের শীর্ষপদে।
বাঁকুড়ার রানিবাঁধের মেয়ে দেবলীনা হেমব্রম। আদিবাসী পরিবারের সন্তান রাজনৈতিক জীবনের গোড়া থেকেই বামপন্থার সঙ্গে যুক্ত। শ্রেণিহীন সমাজের স্বপ্ন বাস্তবায়িত করতে বহু সংগ্রামের প্রত্যক্ষ সাক্ষী তিনি। নিজের পিছিয়ে পড়া এলাকার উন্নয়নে বাম আমল একাধিক কাজের কৃতিত্ব রয়েছে দেবলীনা হেমব্রমের। ১৯৯৬ সাল থেকে ২০১৬ সাল পর্যন্ত প্রতিবার রানিবাঁধ থেকে ভোট জিতেছেন। ২০১১ সালে রাজ্যে লাল দুর্গ পতনের আবহেও রানিবাঁধ ধরে রেখেছিলেন দেবলীনা। বাম আমলে ছিলেন আদিবাসী কল্যাণ দপ্তরের মন্ত্রীও। ২০১২ সালে বিধানসভায় চিটফান্ড দুর্নীতি সংক্রান্ত বক্তব্য রাখার সময়ে আক্রমণের শিকার হন সিপিএমের লড়াকু নেত্রী। বর্তমানে দেবলীনা হেমব্রম সিপিএম কেন্দ্রীয় কমিটির সদস্য।
ছাব্বিশের বিধানসভা ভোটকে নজরে রেখে ভোটবাক্সে শূন্য হয়ে যাওয়া সংগঠনকে ঢেলে সাজাচ্ছে আলিমুদ্দিন স্ট্রিট। জেলা ও কলকাতায় দলের সম্মেলন থেকে একাধিক রদবদল করা হয়েছে। বৃহস্পতিবার বাঁকুড়ার বড়জোড়া জেলা সম্মেলন থেকে যে সিদ্ধান্ত নেওয়া হল, তা কার্যত নজিরবিহীন। জেলা সিপিএম সম্পাদকের ভার দেওয়া হল এক আদিবাসী ও মহিলা সদস্যকে। জানা গিয়েছে, জেলা সম্পাদক হওয়ার দৌড়ে ছিলেন DYFI-এর প্রাক্তন সর্বভারতীয় সভাপতি অভয় মুখোপাধ্যায় ও জেল পরিষদের প্রাক্তন সভাধিপতি পার্থপ্রতিম মজুমদার। কিন্তু তাঁদের পিছনে ফেলে দেবলীনা হেমব্রমকেই বেছে নেওয়া হল জেলা সম্পাদক হিসেবে। বাঁকুড়া-সহ জঙ্গলমহলের বিস্তীর্ণ এলাকার রাজনীতি হাতের তালুর মতো চেনা তাঁর। জানা তৃণমূল বিরোধী লড়াইয়ের কৌশলও। আর সেই কারণেই এই সিদ্ধান্ত সিপিএম শীর্ষ নেতৃত্বের।