shono
Advertisement
Durgapur

নিজেদের বাঁচাতে 'মিথ্যে' গণধর্ষণের গল্প নির্যাতিতা-সহপাঠীর! লোকলজ্জায় 'গৃহবন্দি' ৫ অভিযুক্তের পরিবার

দুর্গাপুরের জঙ্গলে ঠিক কী ঘটেছিল ওই রাতে, সেটাই এখনও রহস্য।
Published By: Tiyasha SarkarPosted: 10:43 AM Oct 17, 2025Updated: 01:46 PM Oct 17, 2025

সংবাদ প্রতিদিন ডিজিটাল ডেস্ক: 'ধর্ষণ কাণ্ডে' অভিযুক্ত হয়ে গারদে বাড়ির ছেলেরা! লোকলজ্জায় কার্যত গৃহবন্দি পরিবার। অভিশপ্ত ওই রাতে কী ঘটেছিল তা এখনও স্পষ্ট নয়। ধর্ষণ নাকি কোনও কিছু আড়াল করতেই নির্যাতিতা ও তাঁর প্রেমিক ধর্ষণের অভিযোগ করেছে সেটাই এখন প্রশ্ন। তবে তাতেও অভিযুক্তদের পরিবারের স্বস্তি নেই। কারণ, আইনের চোখে তারা কেউই ওই অভিযোগ মুক্ত নয়।

Advertisement

জানা গিয়েছে, ধৃত মেডিক্যাল পড়ুয়া বাদে বাকি সবার বাড়ি দুর্গাপুরের ২ নম্বর ওয়ার্ডের বিজড়া গ্রাম ও মহুয়াবাগান এলাকায়। ধষর্ণের ঘটনার পর অভিযুক্তদের পরিবারের প্রায় সকলেই ঘরবন্দি। এলাকার মানুষও ওই পরিবারগুলির সঙ্গে মেলামেশা কমিয়ে দিয়েছে। যদিও প্রতিবেশীরা এখনও অভিযুক্তরা নির্দোষ বলে দাবি করছেন। যেহেতু অভিযুক্তদের বিরুদ্ধে পূর্বে কোনও অপরাধমূলক রেকর্ড নেই। তাই প্রতিবেশীরা প্রায় সকলকেই 'ক্লিনচিট' দিয়েছেন। কিন্তু পরিবারগুলির সদস্যরা লজ্জায় বাড়ির বাইরে যেতে পারছেন না।  সামাজিকভাবে বিপন্ন তাঁরা। দৈনিক কাজ কর্মও প্রায় বন্ধ। শুধুই হা-হুতাশ সঙ্গী। ধর্ষণ-কাণ্ডে গ্রেপ্তার হয়েছেন পুরসভার অস্থায়ী কর্মী শেখ নাসিরউদ্দিন। তাঁর দিদি হাসিনা বিবি ঘরে কাঁদতে কাঁদতে বলেন, "ভাই কাজ শেষে বাড়ি চলে আসে। সেইদিনও তাই করেছে। কিন্তু এখন পুলিশ বলছে ও নাকি ধর্ষণ করেছে। বিশ্বাস করি না। ফাঁসানো হয়েছে ভাইকে।"

বাড়ি থেকে বের হতেই চাইছিলেন না আরেক অভিযুক্ত শেখ সফিকুলের পরিবারের সদস্যরা। অনেক অনুরোধে সংবাদমাধ্যমের প্রতিনিধি পরিচয় দেওয়ার পর জানলা থেকে মুখ বাড়িয়ে বাবা সৈয়দ হুসেন বলেন, "যা জানার পুলিশের কাছে জানুন। আইনের উপর আস্থা আছে আমাদের।" পরিবারগুলির এই পরিণতি নিয়ে গ্রামের কেউ কেউ ক্ষোভ উগরে দিয়েছেন। অনেকেই সহানুভূতিশীল ওই পরিবারগুলির প্রতি। অভিযুক্ত অপু বাউরির দাদা কাজ থেকে ফিরছিলেন। নিজের নাম জানালেন না। সরাসরি ক্ষোভ প্রকাশ করলেন সংবাদমাধ্যমের উপর। তাঁর প্রশ্ন, "কিছু না জেনেই আপনারা ভাইকে ধর্ষক সাজিয়ে দিলেন?” ওই ছাত্রীর সহপাঠীর কথাই বা পুলিশ কি করে বিশ্বাস করল, সেই প্রশ্ন তুলে সটান চলে গেলেন বাউরিপাড়ায় নিজের ঘরে।

শেখ ফিরদৌসের বাড়ির দরজায় তালা। প্রতিবেশী জানালেন, "ঘটনার পর থেকেই ওরা চলে গিয়েছে। গ্রামছাড়া। জানতেও পারিনি কোথায় গেল, জানার চেষ্টাও করিনি।" একটু দূরেই বাড়ি আরেক অভিযুক্ত শেখ রিয়াজুদ্দিনের। সেও একটি বেসরকারি কারখানায় ঠিকা কর্মী। দরজায় নক করতেই বেরিয়ে এলেন মামা শেখ রেজায়ুল। ক্ষোভের সুরে বললেন, "আমরা কেউ আর বাইরে বের হতে পারছি না। লজ্জায়, লজ্জায়। বুঝলেন। সব শেষ।" স্থানীয় এক বাসিন্দা বলেন, "প্রথমে বলা হল গণধর্ষণ। পুলিশ গ্রেপ্তার করল পাঁচজনকে। প্রত্যেকের বিরুদ্ধে দেওয়া হল ধর্ষণের ধারা। তারপর পুলিশ কমিশনার বলছেন, একজন ধর্ষক। এখন প্রশ্ন, তাহলে বাকিদের গণধর্ষণের অভিযোগে ধরা হল কেন? মোবাইল ছিনতাই আর ধর্ষণ তো এক নয়। এখন অভিযুক্তদের বাড়ির লোকজন লোকলজ্জায় বের হতে পারছেন না।" বিজড়া হাই স্কুলের প্রাক্তন প্রধান শিক্ষক শেখ নিজামুদ্দিন বলেন, "অত্যন্ত ব্যথিত ও লজ্জা লাগছে এই ঘটনায়। ধৃতদের মধ্যে দুই জন আমার স্কুলের প্রাক্তন ছাত্র। এটা আরও বেদনা দিচ্ছে আমায়। মানুষের মধ্যে শুভমানসিকতার উদয় হোক, এটাই কাম্য।" বিজড়া ও মহুয়াবাগান বহু পুরনো গ্রাম। এর আগে এমন কলঙ্কের দাগ লাগেনি। এই কলঙ্কের দায় কার, প্রশ্ন তুলছেন জঙ্গলে ঘেরা গ্রামবাসীরা। প্রশ্নের সঙ্গে বাড়ছে ক্ষোভও।

Sangbad Pratidin News App

খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ

হাইলাইটস

Highlights Heading
  • 'ধর্ষণ কাণ্ডে' অভিযুক্ত হয়ে গারদে বাড়ির ছেলেরা! লোকলজ্জায় কার্যত গৃহবন্দি পরিবার।
  • অভিশপ্ত ওই রাতে কী ঘটেছিল তা এখনও স্পষ্ট নয়। ধর্ষণ নাকি কোনও কিছু আড়াল করতেই নির্যাতিতা ও তাঁর প্রেমিক ধর্ষণের অভিযোগ করেছে সেটাই এখন প্রশ্ন।
  • তবে তাতেও অভিযুক্তদের পরিবারের স্বস্তি নেই। কারণ, আইনের চোখে তারা কেউই ওই অভিযোগ মুক্ত নয়।
Advertisement