অরিজিৎ গুপ্ত, হাওড়া: বাইক মেরামতের গ্যারাজে বিধ্বংসী আগুন লেগে মর্মান্তিক মৃত্যু গ্যারাজ মালিকের। মঙ্গলবার দুপুর ২টো নাগাদ মর্মান্তিক এই ঘটনাটি ঘটে আন্দুলের মৌড়ি নিমতলায়। আচমকাই ওই গ্যারাজটিতে আগুন লেগে যায়। গ্যারাজের মালিক সন্দীপ দাস (৩৮) আগুনের মধ্যেই গ্যারাজে ঢুকে ভিতরে থাকা ক্যাস বাক্স থেকে টাকা নিতে যান, আর তখনই ভিতরে থাকা একটি পেট্রোলের ড্রাম ফেটে অগ্নিদগ্ধ হন সন্দীপ। ঘটনাস্থলেই মৃত্যু হয় তাঁর। খবর পেয়ে ঘটনাস্থলে ছুটে যায় দমকলের ২টি ইঞ্জিন। তারা কয়েক ঘন্টার চেষ্টায় ওই গ্যারাজের আগুন নেভায়। গ্যারাজের ভিতর থেকে মালিকের অগ্নিদগ্ধ দেহ উদ্ধার করে ময়নাতদন্তে পাঠায় পুলিশ।
ওই গ্যারাজে মালিক সন্দিপেরই একটি বাইক এদিন রাখা ছিল। সেই বাইকটিই ভস্মীভূত হয়ে যায়। এছাড়া ওই গ্যারাজের ভিতরে প্রচুর কাটা তেল বা পেট্রোলের ড্রাম ছিলো। সেই ড্রামগুলি একটি একটি করে ফেটে এক তলা গ্যারাজটি ভস্মীভূত হয়ে যায়।
কিন্তু কী থেকে আগুন লাগলো? ঘটনাস্থলে উপস্থিত শিবপুর ফায়ার স্টেশনের আধিকারিক তপন কুমার মণ্ডল জানিয়েছেন, ‘‘প্রাথমিকভাবে মনে হচ্ছে, ইলেকট্রিক শর্ট সার্কিট থেকেই আগুন লাগে। গ্যারাজের মালিক সন্দীপ কোনও একটি ড্রাম থেকে কাটা তেল বা পেট্রোল ঢালছিলো, সেইসময় ইলেকট্রিক শর্টসার্কিট হয়ে আগুনের ফুলকি গিয়ে ওই তেলের ড্রামের তেলে বা পেট্রোলে পড়তেই গ্যারাজে দাউ দাউ করে আগুন লেগে যায়।’’
তপনবাবুর কথায়, গ্যারাজে আগুন লেগেছে দেখে সন্দীপ প্রথমে গ্যারাজ থেকে বেরিয়ে এসেছিলেন। কিন্তু গ্যারাজের ভিতরে তাঁর কিছু নগদ টাকাপয়সা ছিল। সেই টাকা পুড়ে যাবে এই আশঙ্কায় তিনি দাউ দাউ করে জ্বলতে থাকা গ্যারাজের ভিতরে আবার প্রবেশ করে টাকা আনতে যান। আর তখনই একটি পেট্রোলের ড্রাম আগুনে বিস্ফোরণ হয়। তাতেই ঝলসে যান সন্দিপ। অস্ট দাস নামে এক প্রত্যক্ষদর্শী জানিয়েছেন, ‘‘গ্যারাজের পাশে একটি জায়গায় ওয়েলডিং বা ঝালাইয়ের কাজ হচ্ছিল। সেখান থেকেই আগুনের ফুলকি ছিটকে গ্যারাজে রাখা মজুত কাটা তেল বা পেট্রোলের উপর পড়তেই বিস্ফোরণ হয়ে সব দাউ দাউ করে জ্বলতে থাকে। একের পর এক পেট্রোল ভর্তি ড্রামে বিস্ফোরণ হতে থাকে।’’
এদিকে ঘটনার পর পুলক দাস নামে এক স্থানীয় বাসিন্দা জানিয়েছেন, ওই গ্যারাজে প্রচুর কাটাই তেলের বা পেট্রোলের ড্রাম মজুত ছিল। ৫ লিটার, ১০ লিটারের পেট্রোল ভর্তি ড্রাম মজুত ছিলো। স্থানীয়দের একাংশ এদিন জানান, গ্যারাজের আড়ালে বেআইনিভাবে কাটাই তেলের বা পেট্রোলের ব্যবসা চালাতো সন্দীপ। মৌড়িগ্রামের ডিপোয় থাকা তেলের বা পেট্রোলের ট্যাঙ্কার থেকে তেল চুরি করে বেআইনিভাবে সন্দীপ প্রচুর পরিমাণ পেট্রোল মজুত রেখেছিল ওই গ্যারাজে। গ্যারাজ থেকেই কম দামে প্রতি লিটারে ৯০ টাকায় কাটা তেল বা পেট্রোল বিক্রি করে বেআইনি ব্যবসা করতো সন্দীপ। পুলিশ সবকিছু জেনেও কোনও পদক্ষেপ করেনি বলে অভিযোগ স্থানীয় বাসিন্দাদের।
এদিন স্থানীয়রা আরও জানান, অল্পের জন্য প্রাণে রক্ষা পেয়েছে গোটা জনবসতি এলাকা। কারণ যেভাবে ওখানে বেআইনিভাবে কাটা তেলের ড্রাম মজুত করা হয়েছিল তাতে আগুন ছড়িয়ে আরও অনেক বড় দুর্ঘটনা ঘটতে পারতো। এদিন ঘটনাস্থলে দাঁড়িয়ে সুমন জানা নামে অপর এক বাসিন্দা জানালেন, ওই গ্যারাজে সন্দিপ ছাড়াও আরও ২ জন লেবার কাজ করে কিন্তু এদিন তারা ঘটনার সময় গ্যারাজে না থাকায় অল্পের জন্য প্রাণে রক্ষা পায়। পেট্রোলের ড্রাম ছাড়াও প্রচুর পরিমাণে গ্রিস, মোবিলও মজুত ছিল।
