সুমন করাতি, হুগলি: এলটিটিই দমনে শ্রীলঙ্কায় পাঠানো শান্তিসেনা দলের সদস্য তিনি। প্রায় তিনদশক ভারতীয় সেনার মেকানিক্যাল ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগে কর্মরত ছিলেন। কর্মসূত্রে দেশের বিভিন্ন প্রান্তে গিয়েছেন। ভোটাধিকার প্রয়োগ করেছেন একাধিক নির্বাচনে। ২০০২ সালের ভোটার তালিকায় নাম রয়েছে। অথচ ২০২৫ সালের ভোটার তালিকায় নাম নেই অবসরপ্রাপ্ত প্রাক্তন সেনাকর্মী শশীকান্ত হালদারের। ফলে পেলেন না এনুমারেশন ফর্ম। তাঁর নাম বাদ গেল কী করে তা নিয়ে উঠছে প্রশ্ন।
চুঁচুড়া পুরসভার আট নম্বর ওয়ার্ডের কাপাসডাঙা লিচুতলার বাসিন্দা শশীকান্তবাবু। বয়স ৮৭ বছর। সেনাবাহিনী থেকে অবসর নিয়েছেন ৩৪ বছর আগে। ২০২৪ সালে লোকসভা নির্বাচনেও ভোট দিয়েছেন। কিন্তু ২০২৫ সালের তালিকায় নেই তাঁর নাম। এসআইআর আবহে বাড়ির প্রত্যেকের নামে এসেছে এনুমারেশন ফর্ম। পাননি শশীবাবু। খোঁজ নিয়ে পরিবারের সদস্যরা জানতে পারেন নতুন তালিকাতে নামই নেই। যে মানুষটা সারা জীবন দেশের সেবা করল তাঁর নাম ভোটার তালিকায় বাদ! ভাবতেই অবাক লাগছে পরিবার ও এলাকাবাসীর।
ছেলে বিনয় হালদারের প্রশ্ন, "তালিকা থেকে বাবার নাম বাদ গেল কী করে? বাদ দিল কে?" শশীকান্তবাবু বলেন, "১৯৬৪ সালে ভারতীয় সেনায় যোগ দিয়েছিলাম। দেশের বিভিন্ন প্রান্তে কাজ করেছি। যখন শ্রীলঙ্কায় ছিলাম তখন অবসরের সময় হয়। ফিরে এসে আগ্রা থেকে অবসর নিই। তারপর থেকে সব নির্বাচনে ভোট দিয়েছি। এখন বিএলও এসে বললেন আমার নাম ডিলিট হয়ে গেছে। কী করে হল জানি না।"
নির্বাচন কমিশন সূত্রে জানা গিয়েছে, যাঁর নাম বর্তমান ভোটার তালিকায় নাম নেই, তিনি এনুমারেশন ফর্ম পাবেন না। খসড়া তালিকা প্রকাশ হওয়ার পর যাদের নাম থাকবে না তাঁদের উপযুক্ত নথি দেখিয়ে আবেদন করতে হবে। শশীকান্তবাবুকেও আবার নতুন করে ৬ নম্বর ফর্ম ফিলআপ করে জমা দিতে হবে। কেন্দ্রীয় সরকারের পেনশন পান তিনি। নাম তুলতে অসুবিধা হওয়ার কথা নয়। কিন্তু অসুস্থ শরীরে দৌড়ঝাপ করতে হবে তা মেনে নিতে পারছেন না শশীকান্তবাবু ও তাঁর পরিবার। বৃদ্ধের ছেলে বিনয় হালদার ক্ষোভ উগড়ে বলেন, "বাবাকে অসুস্থ শরীর নিয়ে আবার ছয় নম্বর ফর্ম ফিলাপ করতে হবে। হেয়ারিংয়ে গিয়ে প্রমাণ দেখাতে হবে। এই বয়সে তা করা অনেকটা কষ্ট সাধ্য। নির্বাচন কমিশনের ভুলে বাবার নাম বাদ গিয়েছে। তারাই বাড়িতে এসে যা করার করুক।"
