অভিষেক চৌধুরী, কালনা: আট বছর ধরে এক ছাদের নিচে সংসার করেছেন ঠিকই, কিন্তু স্বামীর ঘরে মন টেকেনি। সংসারে সুখী ছিলেন না। শেষমেশ নিজের সংসার ভেঙে স্বামীর বন্ধুর হাত ধরেই নতুন করে ঘর বেঁধেছেন গৃহবধূ। আর তাঁর জীবনে এহেন আনন্দের মুহূর্তে উলটোদিকে ঘটে গেল চরম ঘটনা। স্ত্রী ও নিজের বন্ধুর এমন 'বেইমানি' সহ্য করতে না পেরে নিজেকেই শেষ করে দিলেন যুবক! পূর্ব বর্ধমানের নাদনঘাট এলাকায় ঝুলন্ত অবস্থায় যুবকের দেহ উদ্ধার হয়েছে। মিলেছে সুইসাইড নোটও। তাঁর এই পরিস্থিতির জন্য যারা দায়ী, তাদের কঠোরতম শাস্তির দাবি মৃতের পরিবারের। ঘটনার তদন্ত শুরু করেছে নাদনঘাট থানার পুলিশ।
স্থানীয় ও পরিবার সূত্রে জানা গিয়েছে, আট বছর আগে পূর্বস্থলী ১ ব্লকের শ্রীরামপুর গ্রাম পঞ্চায়েতের চাঁদপুর গ্রামের বাসিন্দা চিরঞ্জিত দেবনাথের সঙ্গে নবদ্বীপের শ্রাবণীর বিয়ে হয়। চিরঞ্জিত পেশায় ইলেকট্রিশিয়ান। তাঁর সঙ্গে কাজ করার সুবাদে কৃষ্ণনগরের বাসিন্দা ভাস্কর দাস চিরঞ্জিতের ঘনিষ্ঠ বন্ধু হয়ে ওঠে। তাঁদের বাড়িতে ভাস্করের যাতায়াত ছিল অবাধ। সেই সূত্র ধরে একসময়ে চিরঞ্জিতের স্ত্রী শ্রাবণী স্বামীর বন্ধু ভাস্করের সঙ্গে বিবাহ বহির্ভূত সম্পর্কে জড়িয়ে পড়ে। এরপর গত রবিবার শ্রাবণী বাপের বাড়ি যাবেন বলে শ্বশুরবাড়ি থেকে বেরিয়ে যান। পরে পরিবারের লোকজন জানতে পারে, শ্রাবণী ও ভাস্কর বিয়ে করে নতুন সংসার বেঁধেছে।
এই খবর পেয়ে একেবারে ভেঙে পড়েছিলেন চিরঞ্জিত। এরপরই সে চরম সিদ্ধান্ত নেয় বলে পরিবারের অভিযোগ। এক পাতার সুইসাইড নোটে স্ত্রী ও বন্ধুকে 'বেইমানি' বলে উল্লেখ করেছেন চিরঞ্জিত। চিঠির শেষে স্ত্রীকে ভালোবাসা জানিয়ে তিনি লেখেন, “আজ আমার মৃত্যুর জন্য দায়ী থাকলে তুমি - শ্রাবণী আর ভাস্কর দাস। যার বাড়ি কৃষ্ণনগর চৌধুরীপাড়া।” নোটে আরও উল্লেখ লেখা, “আমাকে তো বাঁচতে দিল না শ্রাবণী আর ভাস্কর দাস। তাই আমি চাই যে ওরা যেন আমার মৃত্যুর জন্য শাস্তি পায়।”
মৃতের দিদি সুপ্রিয়া দেবনাথ বলেন, “চিরঞ্জিতের স্ত্রী তাকে ঠকিয়ে অন্য একজনের সঙ্গে বিয়ে করে চলে গিয়েছে। এই ধাক্কা সামলাতে না পেরে মানসিকভাবে ভেঙে পড়ে ও আত্মঘাতী হয়। বন্ধুর সঙ্গে বিবাহ বহির্ভূত এই সম্পর্ক আমরা কখনও বুঝতে পারিনি। আমার ভাই তাঁর স্ত্রীকে প্রাণের থেকেও বেশি ভালোবাসত। যখন যা চাইতো তাই দিত। কোনও কাজে বাধা দেয়নি। এই পরিস্থিতির ওদের কঠিনতম শাস্তির দাবি জানাই।” মৃতের পরিবার জানায়, এই নিয়ে এর আগে কোনও অশান্তির ঘটনাও ঘটেনি। তাই বন্ধুর সঙ্গে সম্পর্কের গভীরতা নিয়ে তারা টেরও পাননি।
