সৌরভ মাজি, বর্ধমান: বিবাহবর্হিভূত সম্পর্কের জেরে বাড়ির পরিচারককে খুনের দায়ে এক ব্যক্তিকে যাবজ্জীবন কারাদণ্ডের সাজা দিল বর্ধমান আদালত। শুক্রবার বর্ধমান আদালতের ফাস্ট ট্র্যাক আদালতের বিচারক দেবাঞ্জন ঘোষ এই সাজা ঘোষণা করেন। তবে বেকসুর খলাস পেয়েছেন সাজাপ্রাপ্ত বাপ্পাদিত্য পানের প্রেমিকা তথা নিহতের স্ত্রী তুলসী মাঝি। আদালতের রায়ের পরেও বাপ্পাদিত্য নিজেকে নির্দোষ বলে দাবি করেছে।
সরকারি আইনজীবী উদয় কোঙার জানান, ঘটনাটি ঘটেছিল ২০১৭ সালের ৪ অক্টোবরে। পূর্ব বর্ধমানের মাঝবডিহি থানার বর্ধমান-আরামবাগ রোডের একটি নয়ানজুলিতে উদ্ধার হয়েছিল হুগলি জেলার গোঘাট থানার পানপাতা গ্রামের খোকন মাঝির দেহ। মাধবডিহি থানার পুলিশ তদন্তে নেমে জানতে পারে পানপাতা গ্রামের বাসিন্দা বাপ্পাদিত্যর বাড়িতে খোকন ও তাঁর স্ত্রী মজুরের কাজ করতেন। ঘটনার পরদিন বাপ্পাদিত্য ও তুলসী বাস ধরে পালানোর সময় পুলিশ তাদের ধরে। ঘটনার দিন বাপ্পাদিত্যর বাড়িতেই শ্বাসরোধ করে খোকনকে খুন করা হয় বলে অভিযোগ ওঠে। তারপর বস্তায় ভরে সাইকেলে চাপিয়ে পাশের জেলার মাধবডিহি থানা এলাকায় রাস্তার ধারে দেহ ফেলে পালায় বাপ্পাদিত্য। বাপ্পাদিত্য তুলসীর সহযোগিতায় খুন করেছিল বলে দাবি করে পুলিশ।
পুলিশের তদন্তে জানতে পারে, তুলসীর সঙ্গে বাপ্পাদিত্যর বিবাহবহির্ভূত সম্পর্ক গড়ে উঠেছিল। বাপ্পাদিত্যর স্ত্রী, সন্তান রয়েছে। বিবাহবহির্ভূত সম্পর্কের কথা অবশ্য তাঁরা জানতেন না। তবে খোকন ও তাঁর সন্তানরা সেই সম্পর্কের কথা জানতে পেরেছিলেন। খোকন এই নিয়ে প্রতিবাদ করেন। তুলসীর সঙ্গে তাঁর অশান্তিও হতো। বিষয়টি বাপ্পাদিত্য জানতে পেরে খোকনকে দুনিয়া থেকে সরিয়ে দেওয়ার পরিকল্পনা করে। বাপ্পাদিত্যকে হেফাজতে নিয়ে রহস্যের উন্মোচন করে পুলিশ।
এই ঘটনায় বিচার পর্ব শুরু হয় বর্ধমান আদালতে। সরকারি আইনজীবী জানান, খোকনের নাবালিকা কন্যাও এই বিবাহবহির্ভূত সম্পর্কের বিষয়ে আদালতে সাক্ষ্য দিয়েছেন। বৃহস্পতিবার বিচারক বাপ্পাদিত্যকে দোষী সাব্যস্ত করেন। তবে তুলসীকে বেকসুর খালাস করেছেন বিচারক।
সরকারি আইনজীবী জানান, খুনের ঘটনায় যাবজ্জীবন সাজা ও ২০ হাজার টাকা জরিমানা করেছে আদালত। জরিমানা অনাদায়ে আরও ৬ মাসের কারাদণ্ডের নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। প্রমাণ লোপাটের চেষ্টার দায়ে ৭ বছর কারাদণ্ড ও ৫ হাজার টাকা জরিমানা করেছে আদালত। জরিমানা অনাদায়ে আরও ৬ মাসের কারাদণ্ডের আদেশ দিয়েছে আদলত। তবে দুটি সাজাই একসঙ্গে চলবে বলে আদালত নির্দেশ দিয়েছে। এদিন সাজা ঘোষণার পর পুলিশ গাড়িতে তোলার সময় বাপ্পাদিত্য চিৎকার করে বলতে থাকে, "আমি নির্দোষ। আমাকে ফাঁসানো হয়েছে।" রায়ের বিরুদ্ধে উচ্চ আদালতে যাবেন কি না প্রশ্নের উত্তরেও বলেন, "আমি নির্দোষ।"