বিশ্বজ্যোতি ভট্টাচার্য, শিলিগুড়ি: শীতশেষে ফের কুয়াশার দাপট শুরু হতেই চিতাবাঘের আতঙ্ক জাঁকিয়ে বসেছে উত্তরের চা বলয়ে। ইতিমধ্যে দুজন শ্বাপদের হামলায় জখম হয়েছেন। আবহাওয়া দপ্তর সূত্রে জানা গিয়েছে, সোমবার থেকে আরও বাড়তে চলেছে কুয়াশার দাপট। দৃশ্যমানতা নেমে আসতে পারে পঞ্চাশের নিচে। সোমবার থেকে উত্তরে শুরু হচ্ছে এবারের চা মরশুম। ক্ষুদ্র চা চাষি সংগঠনের কর্তারা জানিয়েছেন, শ্বাপদের উপদ্রব বেড়ে গেলে চা পাতা তোলার কাজ বিঘ্ন হতে পারে।
বনদপ্তর সূত্রে জানা গিয়েছে, ৮ ফেব্রুয়ারি দুপুরে নাগরাকাটা ব্লকের আংরাভাষা এক নম্বর গ্রাম পঞ্চায়েত এলাকার অন্তর্গত কলাবাড়ি চা বাগানে কাজ করার সময় চিতাবাঘের হামলায় গুরুতর জখম হন এক মহিলা চা শ্রমিক। চিতাবাঘ অতর্কিতে তার উপর ঝাঁপিয়ে পড়ে। ওই ঘটনার আগের দিন মেটেলি ব্লকের বড়দিঘি চা বাগানে জ্বালানি কাঠ সংগ্রহ করতে গিয়ে চিতাবাঘের হামলায় জখম হন এক মহিলা। গত বছর উত্তরের চা বাগান এলাকায় চিতাবাঘের হামলায় মৃত্যু হয়েছে চারজনের। জখম হয়েছেন অন্তত ২৫ জন। চলতি বছরের শুরুতে আলিপুরদুয়ার জেলার মথুরা চা বাগানে তিনটি চিতাবাঘ খাঁচাবন্দি হয়েছে। চিতাবাঘের আতঙ্কে ঘুম ছুটেছে শিলিগুড়ি মহকুমা পরিষদের ফাঁসিদেওয়া ব্লকের মুন্সিবাড়ি, ভিলকুজোত, নয়নজোত, ভুষিভিটা-সহ পার্শ্ববর্তী এলাকার মানুষের।
গত বছর ২৯ আগস্ট শিলিগুড়ি পুরনিগমের ৪৬ নম্বর ওয়ার্ডের শ্রীগুরু বিদ্যামন্দির সংলগ্ন এলাকায় চিতাবাঘ ঢুকে পড়ে। ২৭ ডিসেম্বর শিলিগুড়ি মহকুমা পরিষদের ভারত-বাংলাদেশ সীমান্তের ফকিরগঞ্জ গ্রামের সেহারা খাতুন নামে এক মহিলার উপর চিতাবাঘ হামলা চালায়। বিএসএফ এবং গ্রামবাসী মহিলাকে উদ্ধার করে। খড়িবাড়ির থানঝোরা ও ফুলবাড়ি চা বাগানে অন্তত চারজন চা শ্রমিক চিতাবাঘের হামলায় জখম হন। বনদপ্তর সূত্রে জানা গিয়েছে, গত বছর চিতাবাঘের হামলার ঘটনা বেশিরভাগ ঘটেছে চা বাগান এলাকায়। চা শ্রমিক সংগঠনের অভিযোগ, ডুয়ার্সের রামসাই, ক্রান্তি, বানারহাট, লক্ষ্মীপাড়া, সোনগাছি, মোরাঘাট, দলগাঁও, মেটেলি, তাসাটি, সিংহানিয়া, বীরপাড়া, সাইলি, বাতাবাড়ি, ভগতপুর চা বাগান এলাকায় এবারও রীতিমতো বিড়ালের মতো ঘুরে বেড়াতে শুরু করেছে চিতাবাঘ।
একই পরিস্থিতি হয়েছে শিলিগুড়ির বাগডোগরার কাছে তাইপু চা বাগান, ফাঁসিদেওয়া, নকশালবাড়ি, মাটিগাড়া, শালুগাড়া এলাকার। কনফেডারেশন অব ইন্ডিয়ান স্মল টি গ্রোয়ার্স অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি বিজয়গোপাল চক্রবর্তী বলেন, "দ্রুত ব্যবস্থা গ্রহণের জন্য এবারও আমরা বনমন্ত্রীকে অনুরোধ করে চিঠি পাঠাব। কারণ, এই অবস্থা চলতে থাকলে চা বাগানে কোনও শ্রমিক যাবে না। কাজ বন্ধ হবে।"