shono
Advertisement

Breaking News

Purulia

পূর্ব ভারত জুড়ে অপরাধের রমরমা, ২২ বছর পর পুলিশের জালে 'মোস্ট ওয়ান্টেড ঘোষদা'!

গত দু'দশকের 'বেতাজ বাদশা' সঙ্গী-সহ ধরা পড়েছে পুরুলিয়া পুলিশের জালে।
Published By: Sucheta SenguptaPosted: 09:32 PM Nov 08, 2025Updated: 12:06 PM Nov 09, 2025

সুমিত বিশ্বাস, পুরুলিয়া: বাংলা-বিহার-ঝাড়খণ্ডের অপরাধ জগতের বড় মাথাকে গ্রেপ্তার করে বড়সড় সাফল্য পেল রাজ্য পুলিশ। ধৃত 'ঘোষদা' ওরফে পিন্টু ঘোষ ওরফে দীপঙ্কর ঘোষ। পূর্ব ভারতের এই 'বেতাজ বাদশা'-র কোনও ছবি, মোবাইল নম্বর, ঠিকানা কোনও কিছুই ছিল না পুলিশের হাতে। ছিল না কোন সূত্রও। হাওয়ায় ভাসত শুধু একটা নাম - পিন্টু ঘোষ! যা তার আসল নামও নয়। অথচ দু'দশকের বেশি সময় ধরে বাংলা-ঝাড়খণ্ডের রেলের সিন্ডিকেট নিয়ন্ত্রণ করত। এই এলাকায় রেলের কাজের জন্য তারই ইশারায় খুন হয়েছিল ১০ জনেরও বেশি। অথচ বছরের পর বছর ধরে পরিচয় গোপন রেখে ছিল ফেরার। ২০০৩ সালে আদ্রায় তৃণমূল টাউন সভাপতি ধনঞ্জয় চৌবে খুনের পর থেকে রাজ্য পুলিশ তাকে হন্যে হয়ে খুঁজলেও অধরাই ছিল। কিন্তু শুক্রবার সকাল ১০ টা নাগাদ পুলিশের জালে ধরা পড়ে যায় ৫৬ বছরের ওই পিন্টু। উত্তর ২৪ পরগনার নিমতা বাজার এলাকা থেকে রেলশহর আদ্রার তৃণমূল শহর সভাপতি ধনঞ্জয় চৌবে খুনে তাকে গ্রেপ্তার করে বড় সাফল্য পেল পুরুলিয়া জেলা পুলিশ।

Advertisement

পিন্টুকে জিজ্ঞাসাবাদ করেই তার সঙ্গী বিহারের জগনু সিং-কেও ঝাড়খণ্ডের বোকারো জেলার চিড়াচাস থানা এলাকা থেকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। শনিবার ধৃত দু'জনকে রঘুনাথপুর আদালতে তোলা হলে তাদের ১২ দিনের পুলিশ হেফাজত হয়েছে। শনিবার বিকালে এই ঘটনা প্রকাশ্যে আনতে সাংবাদিকদের মুখোমুখি হয় পুরুলিয়া জেলা পুলিশ। জানা যায় 'ঘোষদা'র বৃত্তান্ত। পিন্টু ঘোষ ওরফে দীপঙ্কর ঘোষ। তার আদি বাড়ি পুরুলিয়া রেলশহর আদ্রার বেনিয়াশোলে। সংবাদপত্র বিক্রি করেই দিন গুজরান হতো তার। বর্তমানে উত্তর ২৪ পরগনার নিমতা থানার দুর্গানগরে রবীন্দ্রপল্লি এলাকায় স্ত্রীর নামে থাকা একটি বাড়িতে থাকতো পিন্টু। সেই বাড়ির চারপাশ রয়েছে সিসিটিভিতে মোড়া। ওই এলাকায় জমির ব্যবসা করায় তাকে সকলে চিনত 'ঘোষদা' নামে। ওই এলাকায় তার নামে একটি ফ্ল্যাট থাকলেও তা এখন ভাড়া দেওয়া।

অন্যদিকে, তার সঙ্গী ধৃত জুগনু সিং ওরফে ধর্মেন্দ্র সিংয়ের বাড়ি বিহারের মজফফরপুর জেলার কাটরা থানার ধনউড়ে। নিহত ধনঞ্জয়কে সরিয়ে দেওয়ার সংকেত দিয়েছিল পিন্টু। আর জুগনু শুটার খুঁজে তাকে সুপারি দিয়ে, আগ্নেয়াস্ত্র, মোটরবাইক দিয়ে সাহায্য করে। পুরুলিয়ার পুলিশ সুপার অভিজিৎ বন্দ্যোপাধ্যায় বলেন, "২০০৩ থেকে একের পর এক অপরাধ করে নিজেকে আড়াল করে ফেরার ছিল পিন্টু। নিহত তৃণমূল নেতা ধনঞ্জয় চৌবে খুনে মাস্টারমাইন্ড। ওই ঘটনায় যে শুটার ঠিক করেছিল সেই জুগনুও গ্রেপ্তার হয়েছে। ঘটনার তদন্ত চলছে।"

ধৃত পিন্টু ঘোষ ও জুগনু সিং। ছবি: দীপক রাম।

২০০৩ সালে বাম আমলে রেলের কাজ নিয়ে রেলশহর আদ্রায় যে জোড়া খুন হয়েছিল সেই আশিস-আসলাম খুনের 'কিংপিন' ছিল এই পিন্টু। ২০১৬ সালে পিন্টু ভার্মা খুনেও তার যোগ। এই দু'দশকের বেশি সময়ে ধৃত পিন্টু কতজনকে যে 'থ্রেট কল' দিয়েছে সেই তথ্য একত্রিত করতেই হিমশিম অবস্থা পুলিশের। রেলের বিভিন্ন কাজের নিলাম, দরপত্র আহ্বানে শেষ কথা বলত উত্তর ২৪ পরগনার জমি ব্যবসা করা এই 'ঘোষদা'। দরপত্র প্রক্রিয়া শেষ হলেই মোটা টাকার প্যাকেট চলে আসত পিন্টুর কাছে। বাংলা-ঝাড়খণ্ডে 'ডন' হয়ে উঠেছিল পিন্টু। সমান দাপট ছিল বিহারেও। বিহারের লালন ঠাকুর, অন্নু ঠাকুর, ঝাড়খণ্ডের জিতেন্দ্র প্রসাদের সঙ্গে ওঠাবসা ছিল তার। যাদের নাম শুনলেই বিহার-ঝাড়খণ্ডবাসীর বুকে কাঁপুনি ধরে। পাটনা, মহুদা, দ্বারভাঙ্গা মজফফরপুর, রাঁচি, বোকারো, পুরুলিয়া কোটশিলা, আদ্রা রেলের সিন্ডিকেটের শেষ কথা ছিল পিন্টু। তার নামে ১০ টি খুনের মামলা ছাড়াও ঝাড়খন্ড, বিহারে একাধিক অসামাজিক কার্যকলাপের মামলা রয়েছে। নিজেকে আড়াল করে রাখতে এক সময় নেপালেও গা ঢাকা দেয়।

ধনঞ্জয় চৌবে খুনে খুব স্বাভাবিকভাবে পিন্টুর নাম উঠে আসায় তাকে খুঁজতে জেলা পুলিশের বিভিন্ন দল ২ বছর ৫ মাস ধরে ঝাড়খণ্ড-সহ দেশের বিভিন্ন প্রান্তে হানা দেয়। কিন্তু দিলে হবে কি? পিন্টু এতটাই স্মার্ট যে কোনওরকম ইলেকট্রনিক্স গেজেট নিজের কাছে রাখত না। যাতে পুলিশ ট্র্যাক করতে না পারে। পুলিশ সুপার বলেন, "দুষ্কৃতীরা কোনো না কোনো একটা ভুল করবেই। সেই ভুলের জন্য অপেক্ষা করে থেকেই এই সাফল্য।" তার কোনও ছবি না থাকায় এক্সপার্টরা তার একটা স্কেচ করেছিলেন। গ্রেপ্তারের পর সেই স্কেচ মিলিয়ে দেখা যায়, তার সঙ্গে আসল চেহারার খুব একটা মিল নেই।

পিন্টুর সঙ্গী জুগনুর নামেও বিহারে প্রায় ১০ টি মামলা রয়েছে। ফেরার ছিল সেও। বিহার পুলিশ তার গ্রেপ্তারে ৫০ হাজার টাকা পুরস্কার ঘোষণা করে। ধনঞ্জয় চৌবে খুনে শুটার ঠিক করার পর বোকারোতে খুনিদের সঙ্গে বৈঠক করেছিল এই জুগনু। জেলা পুলিশ সূত্রে জানা গিয়েছে, ওই ঘটনায় প্রাথমিক চার্জশিটেই পিন্টু ও জুগনুর নাম রয়েছে। ২০১৮ সালের ডিসেম্বরে হামিদ আনসারি নামে যে তৃণমূল নেতা খুন হয়েছিল সেটিতেও জড়িত ছিল এই জুগনু।

Sangbad Pratidin News App

খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ

হাইলাইটস

Highlights Heading
  • ২ দশক ধরে ফেরার থাকার পর অবশেষে পুলিশের জালে পূর্ব ভারতের অবৈধ জমি ব্যবসায়ী।
  • সঙ্গী-সহ গ্রেপ্তার অপরাধ জগতের বড় মাথা।
  • সম্পূর্ণ ক্লুলেস অবস্থায় তাকে গ্রেপ্তার করাটা পুলিশের বড় সাফল্য।
Advertisement