shono
Advertisement

শৌচাগারের চেম্বারে ঢুকে টাকা উদ্ধারের চেষ্টাই কাল, কেরলে বিষাক্ত গ্যাসে মৃত্যু বাংলার ২ ভাইয়ের

পেটের টানে কেরলে রাজমিস্ত্রির কাজে গিয়েছিলেন তাঁরা।
Posted: 04:14 PM Jun 28, 2022Updated: 04:45 PM Jun 28, 2022

ধীমান রায়, কাটোয়া: শৌচকর্মের সময় শৌচাগারে পকেট থেকে পড়ে গিয়েছিল টাকার বান্ডিল। জলের তোড়ে তা সরাসরি চলে যায় চেম্বারে। সেপটিক ট্যাঙ্কে নেমে সেই টাকার বান্ডিল উদ্ধার করতে গিয়ে ঘটে গেল মর্মান্তিক দুর্ঘটনা। মৃত্যু হল কেরলে কাজে যাওয়া বাংলার দুই ভাইয়ের। একই পরিবারের দুই সন্তানের মৃত্যুর ঘটনায় শোকের ছায়া পূর্ব বর্ধমান জেলার ভাতার থানার এরুয়ার গ্রামে।

Advertisement

এরুয়ার গ্রামের বাসিন্দা আলকাসরা চার ভাই। চার ভাই-ই বিবাহিত। বড় ভাই রূপচাঁদ শেখ বাড়িতে থাকেন। গত দু’ বছর ধরে বাকি তিন জন সঞ্জীব শেখ, আলকাস ও আসরাফুল কেরলে রাজমিস্ত্রির কাজ করেন। মাস চারেক আগে শেষবার বাড়িতে এসেছিলেন তাঁরা। আপাতত কেরলের মালাপ্পুরম জেলার ত্রিশূল এলাকায় অন্যান্য পরিযায়ী শ্রমিকদের সঙ্গে থাকতেন তাঁরা। সোমবার সন্ধে নাগাদ পরিবারের কাছে দুঃসংবাদটি আসে। ময়নাতদন্তের পর দুই ভাইয়ের দেহ এরুয়ার গ্রামে ফিরবে। মৃত দুই ভাইয়ের নাম আলকাস শেখ (৩২) ও আসরাফুল শেখ (২৯) ওরফে বচ্চন। দিন আনা দিন খাওয়া পরিবারটির পাশে দাঁড়িয়েছেন ভাতারের বিধায়ক মানগোবিন্দ অধিকারী।

[আরও পড়ুন: ‘তিস্তা, জুবেইদকে গ্রেপ্তার কেন?’ আসানসোলের কর্মিসভা থেকে বিজেপিকে তোপ মমতার]

কেরলে থাকা আরেক ভাই সঞ্জীব জানান, সোমবার কাজ সেরে ফেরার পর শৌচকর্ম সারতে গিয়েছিলেন তিনি। তখন আলকাস ও আসরাফুল রান্নার কাজে ব্যস্ত ছিলেন। সঞ্জীবের অন্তর্বাসের পকেটে পলিথিনে মোড়ানো ছিল ১৪ হাজার ৮০০ টাকা। শৌচকর্ম সেরে তিনি দেখেন সেই টাকার বান্ডিল প্যানে পড়ে গিয়েছে। জলের তোড়ে ভেসে গিয়ে সেই টাকার বান্ডিল চলে যায় শৌচাগারের চেম্বারে। দুই ভাইকে সেই কথা জানান সঞ্জীব। এরপরই টাকার বান্ডিলটি উদ্ধারের চেষ্টা করে তিন ভাই।

 

তিনজন মিলে শাবল দিয়ে চেম্বারের ঢাকনা খোলেন। দেখেন ভিতরে পলিথিন মোড়ানো বান্ডিলটি ভাসছে। সঞ্জীবের কথায়, “মই এনে আলকাস প্রথমে নিচে নামে। টাকার গোছা নিয়ে মই বেয়ে উঠে আসার সময় হঠাৎ পড়ে তলিয়ে যায়। তা দেখে আসরাফুল সঙ্গে সঙ্গে নিচে নেমে দাদাকে উদ্ধার করতে যায়। সেও আর উঠে আসতে পারেনি। একইভাবে তলিয়ে যায়।” দুইভাইকে ওভাবে পড়ে যেতে দেখে সঞ্জীবও নামতে যান। কিন্তু তাঁকে অন্যান্য কয়েকজন পরিযায়ী শ্রমিক ধরে আটকে দিয়েছিলেন। খবর দেওয়া হয় পুলিশকে। পুলিশ ও দমকলবাহিনী আলকাস ও আসরাফুলকে উদ্ধার করে চিকিৎসকের কাছে নিয়ে গেলে তাঁদের মৃত বলে ঘোষণা করা হয়। প্রাথমিকভাবে জানা গিয়েছে, চেম্বারের বিষাক্ত গ্যাসের কারণেই দু’ জন এভাবে জ্ঞান হারিয়ে তলিয়ে যান।

[আরও পড়ুন: ‘১৭ হাজার শিক্ষকের চাকরি আছে, আদালত অনুমতি না দিলে কী করব?’, নিয়োগ নিয়ে পালটা মমতার]

এই ঘটনায় মঙ্গলবার এরুয়ার গ্রামে নেমে আসে শোকের ছায়া। প্রতিবেশীরা জানান আলকাসরা সম্প্রতি বাড়ি তৈরি করছিলেন। টাকার অভাবে বাড়ি অসম্পূর্ণ। তাই তারা ভিনরাজ্যে কাজে গিয়েছিলেন কিছু রোজগারের আশায়। জুলাই মাসের প্রথমেই বাড়ি ফেরার কথা ছিল। তারপর ঘরের বাকি কাজ শুরু করার কথা। দুই উপার্জনকারীকে হারিয়ে গরিব পরিবারটি কার্যত অথৈ জলে পড়েছে। ভাতারের বিধায়ক মানগোবিন্দ অধিকারী এদিন সকালেই মৃতদের পরিবারের সঙ্গে দেখা করেন। দেহদু’টি গ্রামে আনার জন্য বিধায়ক নিজে তদারকি করছেন। তিনি ওই পরিবারের পাশে থাকার আশ্বাস দিয়েছেন।

Sangbad Pratidin News App

খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ

Advertisement
toolbarHome ই পেপার toolbarup রাজধানী এক্সপ্রেস toolbarvideo ISL10 toolbarshorts রোববার