shono
Advertisement

Breaking News

Nadharer Bhela

অবাধ্য, অপ্রতিরোধ্য, নিয়ম ভাঙা ছবি প্রদীপ্ত ভট্টাচার্যর 'নধরের ভেলা', কেমন হল? পড়ুন রিভিউ

কলকাতা আন্তর্জাতিক চলচ্চিত্র উৎসবে প্রদর্শিত হয় 'নধরের ভেলা'।
Published By: Arani BhattacharyaPosted: 02:46 PM Nov 14, 2025Updated: 04:21 PM Nov 14, 2025

বিদিশা চট্টোপাধ্যায়: প্রদীপ্ত ভট্টাচার্য ‘নধরের ভেলা’ নামক এমন এক চলচ্চিত্র নির্মাণ করেছেন যা বাংলা ছবির গুগল ম্যাপের বাইরে এক বিকল্প সরণি আবিষ্কার করে ফেলেছে। এমন বাংলা ছবি দেখেছি বলে ইদানীংকালে মনে পড়ছে না। এই ছবি দেখে প্রথমেই একেবারে চুপ করে যেতে হয়। মনের ভেতর যেসব তাড়াহুড়ো ছিল, একেবারে স্লো হয়ে যায়। বাইরের সব শব্দ, শোরগোল থেমে গিয়ে একটা আর্তি জেগে থাকে, গোঙানির মতো। সাত্যকি বন্দোপাধ্যায়ের সঙ্গীত সেই আর্তির মতোই। অন্তর্মুখী, শ্বাসপ্রশাসের ওঠাপড়ার মতো। ছবির দীর্ঘশ্বাসের মতো, নিংড়ে নেওয়া যন্ত্রণার মতো ।

Advertisement

এই ছবির অভিঘাত, থেকে যাওয়া খুব গভীর। প্রথমবারও যখন কাজের সূত্রেই ল্যাপটপে প্রায় তিন ঘণ্টার ‘নধরের ভেলা’ দেখেছিলাম, কোথা দিয়ে সময় বয়ে গিয়েছিল টের পাইনি। বড় পর্দায় দেখব বলে অপেক্ষায় ছিলাম। কলকাতা আন্তর্জাতিক চলচ্চিত্র উৎসব সেই সুযোগ করে দিল। এবং এবারও ছবির ‘স্লোনেস’, ‘দ্য স্লো ম্যান অ্যান্ড হিজ র‌্যাফ্ট’-এর চলনের সঙ্গে মিলে মিশে যায় । অমিত সাহার অত্যাশ্চর্য অভিনয় বাকরুদ্ধ করে। টলিউড বলেই হয়তো তাঁর মতো শিল্পী কদর পান না। ঋত্বিক চক্রবর্তীকে চেনাই যায় না। ঋত্বিক, পর্দায় কী করতে পারেন, তার পুরো হিসেবটা এখনও বোঝা বাকি। তাঁর শরীরী ভাষা সম্পূর্ণ বদলে এখানে তিনি ভিন্ন মানুষ। প্রিয়াঙ্কা সরকারকে নতুন করে চেনার আছে। তেমন সুযোগ পেলে তিনি সিনেমাকে কী দিতে পারেন এই ছবি তার প্রমাণ। শ্যামার চরিত্রে তাঁর আকুতি, বিপন্নতা মনে থাকবে। অসম্ভব ভালো নিলয় সমীরণ নন্দী, অপরাজিতা ঘোষ, শতাক্ষী নন্দী, সায়ন ঘোষ, সত্রাবিত পাল এবং অন্যরা। যে যত ছোট চরিত্রই করুক না কেন, প্রত্যেকেই এই ছবির জন্য ম্যাজিক কোশেন্ট, মণিমাণিক্যের মতো ছড়িয়ে আছেন। জয়দীপ দের ক্যামেরা এখানে ইনসাইডার, বাইরের লোক নয়। তাই প্রতিটা ফ্রেম যেন বেশি করে জীবন্ত হয়ে ওঠে। ‘নধরের ভেলা’ আসলে সব অর্থেই গোটা টিমের সম্মিলিত প্রচেষ্টার উৎকর্ষ উদাহরণ।

ছবিতে দেখি একটা গ্রাম, সেখানে একদিকে রয়েছে খুব ধীরগতির এক মানুষ নধর (অমিত সাহা) আর উল্টোদিকে কিছু নারী-পুরুষ। এই নারী-পুরুষের মধ্যে আছে হায়রার্কি, আছে পারস্পরিক সম্পর্কের জটিলতা, আছে প্রেম, আছে চরম হিংস্রতা, আছে খিদে, আছে হিংসে, আছে ঠকানো, সর্বোপরি আছে বেঁচে থাকার আপ্রাণ লড়াই। সবাই লড়াই করছে একটু নিজেরটা গুছিয়ে নেবে বলে। চেষ্টা করছে এই দাসত্বের বেঁচে থাকায় যদি একচিলতে মর্যাদা আনা যায়। নধরের উল্টোদিকে থাকা মানুষগুলো একটা সার্কাসের মধ্যে থাকে। নধরের জীবনে একমাত্র গাছের ছায়ার মতো যে মানুষটা ছিল, সেই মা মারা যাওয়ার পর নধর এই সার্কাসের মধ্যে গিয়ে পড়ে। এবার তাকেও এই জীবন ধারনের নোংরা খেলায় নামতে হবে। মর্যাদাহীন, মনুষ্যত্বহীন, নীতিহীন, ভালোবাসাহীন এক খেলা। ‘জল নাই, মাছ নাই, কেহ নাই’ গানের আত্মা ঘুরে ঘুরে যেন সেই কথাই বলে। তবে এখানে জহ্লাদের মতো এক নির্ণায়ক-কর্তা আছে। অন্তত সে মনে করছে তার হতেই ক্ষমতা। সব ক্ষমতাশালীরাই তাই মনে করে। এখানে সে সার্কাসের ম্যানেজার হারাধন (ঋত্বিক চক্রবর্তী)। তার আছে দিকবিদিকশূন্য রাগ আর হিংস্রতা। এই হিংস্রতা ভয় ধরাবে। কিন্তু একটা দৃশ্য আছে যেখানে হারাধন একা মদ খাচ্ছে আর রাগে বিড়বিড় করছে। তখন তাকে দেখলে করুণা হয়। নেড়েচেড়ে দেখতে ইচ্ছে করে তার এই রাগের পিছনে কী আছে, তবে সে ক্ষেত্রে সেটা একেবারে অন্য ছবি হবে।


দর্শক হিসাবে এই ছবিটা আসলে খুব ব্যক্তিগত হয়ে দাঁড়ায় শেষমেশ। নধরের স্লোনেস, এই আধাগ্রাম, এই সার্কাস, হারাধন, ভালু (সমীরণ নিলয় নন্দী), হারাধনের স্ত্রী (অপরাজিতা ঘোষ দাস), লালু (সত্রাবিত পাল), রূপা (শতাক্ষী নন্দী), রহমান (সায়ন ঘোষ) এবং শ্যামা (প্রিয়াঙ্কা সরকার)– এদের মধ্যেই আমি নিজেকে খুঁজে পাই। খুঁজে পাওয়া যায় বর্তমান মানব সভ্যতাকে, এই বাংলাকে। খুঁজে পাওয়া যায় আমাদের এই আপস করে, মর্যাদাহীন, পরাধীন বেঁচে থাকা। প্রদীপ্ত ভট্টাচার্য, বর্তমান পৃথিবীর এই বেঁচে থাকার সবটা আশ্চর্য ভাবে এই গ্রামীণ সার্কাসের মধ্যে নিয়ে এসেছেন। তাঁর গল্প, চরিত্ররা বর্তমান পৃথিবীর যে কোনও প্রান্তের বাসিন্দা হতে পারেন। এই ছবির বিস্তার এমনই।

Sangbad Pratidin News App

খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ

হাইলাইটস

Highlights Heading
  • বড় পর্দায় দেখব বলে অপেক্ষায় ছিলাম। কলকাতা আন্তর্জাতিক ফিল্ম ফেস্টিভাল সেই সুযোগ করে দিল।
  • এবং এবারও ছবির ‘স্লোনেস’, ‘দ্য স্লো ম্যান অ্যান্ড হিজ র‌্যাফ্ট’-এর চলনের সঙ্গে মিলে মিশে যায় ।
  • অমিত সাহার অত্যাশ্চর্য অভিনয় বাকরুদ্ধ করে। টলিউড বলেই হয়তো তাঁর মতো শিল্পী কদর পান না।
Advertisement