সংবাদ প্রতিদিন ডিজিটাল ডেস্ক: বাংলা সঙ্গীতজগতে নক্ষত্রপতন। শনিবার প্রতুল মুখোপাধ্যায়ের প্রয়াণে (Pratul Mukhopadhyay Passed Away) শোকের ছায়া নেমে এসেছে বাংলা সঙ্গীতদুনিয়ায়। শ্রদ্ধাজ্ঞাপনের জন্য প্রয়াত শিল্পীর মরদেহ বিকেল চারটে পর্যন্ত শায়িত থাকবে রবীন্দ্র সদনে। এর পর সেখান থেকে এসএসকেএমে নিয়ে যাওয়া হবে মরণোেত্তর দেহ দানের জন্য। প্রতুলের প্রয়াণে মন ভালো নেই বাংলা সঙ্গীতদুনিয়ার। সোশাল মিডিয়ায় লোপামুদ্রা মিত্র লিখেছেন, যাঁদের জন্য আমি বাংলায় গান গাই, তাঁদের মধ্যে প্রতুলদা একজন। স্মৃতির সরণি বেয়ে প্রয়াত শিল্পীকে নিয়ে স্মৃতিচারণা করলেন কবীর সুমন, ব্রাত্য বসু এবং অনুপম রায়রা।
সংবাদ প্রতিদিন ডট ইন-এর সঙ্গে ফোনে কথা বলতে গিয়ে আবেগপ্রবণ কবীর সুমন। বললেন, "খুব ভুগছিলেন প্রতুলদা। উনি শান্তি পেলেন। কিন্তু তৎসত্ত্বেও মন তো মানে না। আর কোনওদিন ওঁকে দেখতে পাব না। ওঁর সঙ্গে বসে কোথাও হাসাহাসি করতে পারব না। উনি ছিলেন একজন আনপ্যারালাল পারফর্মার। এমন কিছু কবিতায় উনি সুর দিয়েছেন যেমন 'বাবরের প্রার্থনা', যেগুলো প্রতুলদা ছাড়া অন্য কেউ ভাবতে পারবেন না। প্রকৃত নীরিক্ষামনস্ক বাঙালি নাগরিক, বাংলাভাষী সঙ্গীতকার যদি এজীবনে দেখে থাকি, তিনি প্রতুল মুখোপাধ্যায়। ওঁর ধারেকাছে শুধু আমি কেন, কেউ নেই। ওঁর সঙ্গে একটি দুটি অনুষ্ঠানে আমি কিবোর্ডও বাজিয়েছি। সে বহুদিন আগের কথা। অনেকে হয়তো জানেনও না। উনি খালি গলাতেও সুরে গাইতেন। প্রতুল মুখোপাধ্যায়ের গানের কোনও রিমেক নেই। করা যাবেও না। 'ছোকরা চাঁদ' গানটার কথা মনে করে গায়ে কাঁটা দিচ্ছে। ওটাও কবিতা থেকেই করা।"
স্মৃতিচারণা করতে গিয়ে ব্রাত্য বসু ফিরে গেলেন কলেজের দিনগুলোতে। বিশিষ্ট নাট্যকার জানালেন, "প্রতুলদা বাংলা গানের কাছে, বাঙালির কাছে অমর। প্রতুলদার থিওরি ছিল, কোনও মিউজিক্যাল বাদ্যযন্ত্র ছাড়াই উনি দিব্যি গান গাইতেন। প্রতুলদাকে এর কারণ জিজ্ঞেস করায়, উনি বলেছিলেন- পাখি তো গান গায়, তার কি কোনও বাদ্যযন্ত্র লাগে? কোনও মিউজিশিয়ান লাগে? আমাদের মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়কেও খুব স্নেহ করতেন উনি। প্রতুলদা এই মা-মাটি সরকারের সঙ্গে সবসময় থেকেছেন। ওঁর একটা নিজস্ব রাজনৈতিক দৃষ্টিভঙ্গিও ছিল। প্রতুলদাকে দেখেছি, কখনও নন্দীগ্রাম, কখনও সিঙুরে সরকারের নানা জনমুখী প্রকল্পের জন্য ছুটে যেতেন। ওঁর চিকিৎসার যাবতীয় দায়ভার বহন করেছে রাজ্যসরকার। তবে বড় আক্ষেপ, একুশে ফেব্রুয়ারিতে আর ওঁর কণ্ঠ শোনা যাবে না।"
উল্লেখ্য, 'আমি বাংলার গান গাই' অনুপম রায়ের কণ্ঠেও শুনেছেন শ্রোতারা। যে গানের স্রষ্টা প্রতুল মুখোপাধ্যায়। তাঁর প্রয়াণে শোকজ্ঞাপন করে অনুপম রায় জানালেন, "প্রতুল মুখোপাধ্যায় এমন একটা নাম, এমন একটা শিল্পী, যিনি আজীবন অমর হয়ে থাকবেন তাঁর সৃষ্টির মধ্য দিয়ে। তাঁর গালের মধ্যে দিয়ে। উনি হয়তো চলে গেলেন, কিন্তু ওঁর সৃষ্টি, ওঁর কণ্ঠস্বর বারবার শুনব আমরা। আমি প্রতুলদার বড় ভক্ত। খুবই ব্যতিক্রমী শিল্পী ছিলেন। ওঁর গান গাওয়ার ধরন আর পাঁচজনের থেকে আলাদা ছিল। সঙ্গীতজগতের অপূরণীয় ক্ষতি। 'লাল কমলা হলদে সবুজ' বলে যে গানটি উনি কবিতা থেকে অনুবাদ করে সুর দিয়েছিলেন, সেটা আমার বড় প্রিয়। গানের সঙ্গে যেভাবে গল্প করে বলতেন, সেটা আমার আজীবন মনে থাকবে।"