শম্পালী মৌলিক: প্রায় শেষ পর্যায়ে ৩১তম কলকাতা চলচ্চিত্র উৎসব। তার আগে বুধবার নন্দন-রবীন্দ্রসদন চত্বরে ভিড় জমালেন সিনেপ্রেমীরা। এদিন অন্যতম আকর্ষণ ছিল, 'ঋত্বিক ঘটক স্মারক কথামালা'। প্রবাদপ্রতিম চলচ্চিত্রকারের শতবর্ষ উপলক্ষে বিকেলে শিশির মঞ্চে আলোচনায় অংশ নিলেন আদুর গোপালকৃষ্ণণ, অনুপ সিং ও ‘কিফ’-এর চেয়ারম্যান গৌতম ঘোষ।
প্রসঙ্গত, আদুর ঋত্বিকের ছাত্র ছিলেন একসময়। ১৯৬৩ সালে ভারতের ফিল্ম ইনস্টিটিউটে দ্বিতীয় বর্ষের ছাত্র যখন তিনি, তখন তাঁর সঙ্গে ঋত্বিক ঘটকের আলাপ হয়। কথা বলতে গিয়ে নস্ট্যালজিক শোনাল আদুরকে। জানালেন, সব শিক্ষকের থেকে আলাদা ছিলেন ঋত্বিক ঘটক। তাঁর থিয়েটার ও সিনেমা জীবনের কৃতিত্বে ছাত্ররা মুগ্ধ ছিল। তাঁর মধ্যে ছিলেন মণি কাউল এবং কুমার সাহানিও। ঋত্বিকের প্রিয় ছিল পরিচালক লুই বুনুয়েল। বিশেষত তাঁর 'নাজারিন' ছবিটি। তবে ইঙ্গমার বার্গম্যানকে বিশেষ পছন্দ করতেন না ধর্মীয় ভাবধারার কারণে। সত্যজিৎ রায়ই নাকি ঋত্বিক ঘটককে ফিল্ম ইনস্টিটিউটে নিয়োগ করতে সুপারিশ করেছিলেন ইন্দিরা গান্ধীকে, যেটা হয়তো কম মানুষই জানেন। সত্যজিৎ এবং ঋত্বিকের মধ্যে পারস্পরিক শ্রদ্ধার সম্পর্ক ছিল। ‘অপরাজিত’ দেখার পর ঘটক সোচ্চারে প্রশংসা করেছিলেন। হাসতে হাসতে আদুর বলেন, ‘অনেকে তাঁকে মদ্যপ হিসাবে জানতেন। কিন্তু ক্লাসে তাঁকে কখনও মাতাল দেখিনি। তাঁর থেকে সিনেমা বিষয়ে বিস্ময়, ডেডিকেশন আর প্যাশন পেয়েছি। ছবিতে শব্দ ব্যবহারের গুরুত্ব বুঝেছি তাঁর থেকে।’
'ঋত্বিক ঘটক স্মারক কথামালা'য় বিশ্ববরেণ্য পরিচালক আদুর গোপালকৃষ্ণণ, ছবি- কৌশিক দত্ত।
সিনেমা বানানোর আগে থেকে কলকাতার সঙ্গে আদুরের যোগ। পরিষ্কার বললেন, ‘এখানকার মানুষের রুচিশীলতা, শিক্ষা, তাঁদের উষ্ণতা, কাইন্ডনেস আমার ভালো লাগে। আর বাঙালি আর মালয়ালিদের মধ্যে কমন যোগ হল মাছ-ভাত। দু’পক্ষই সাংস্কৃতিক আর প্রোগ্রেসিভ।’ বাংলা অনুবাদে তিনি প্রচুর বাংলা বই পড়েছেন। কিন্তু উলটোটা অর্থাৎ মালয়ালি সাহিত্যের বাংলা অনুবাদ তিনি সেভাবে পাননি। গৌতম ঘোষ যোগ করেন একসময় এখানে সবচেয়ে বেশি মালয়ালি থাকত। প্রসঙ্গত, মূলত মালয়ালি ভাষায় ছবি বানিয়ে আদুর গোপালকৃষ্ণণ বিশ্ববরেণ্য পরিচালক।
অন্যদিকে পরিচালক অনুপ সিং নিজেও ঋত্বিক ঘটককে নিয়ে একটি ছবি বানিয়েছেন (একটি নদীর নাম) সেই ছবি উৎসবে প্রদর্শিতও হয়েছে। অনুপের এক প্রশ্নের উত্তরে আদুর জানান, নবীন ফিল্ম মেকারদের নিজের পথ খুঁজতে হবে। অনুপ্রেরণা নেওয়া যায় কিন্তু অনুকরণ করলে চলবে না। এও যোগ করেন ‘এআই’ ব্যবহার করে অনেক সংখ্যক ফিল্ম বানানো যেতে পারে কিন্তু এআই যদি ছবিটাকে লিড করে তাহলে ছবিটা নষ্ট হতে বাধ্য। কথা প্রসঙ্গে তিনি জানান, এখনকার বাংলা ছবি দেখার সুযোগ হয় না তাঁর। তাই মন্তব্য করতে চান না।
