শম্পালী মৌলিক: কথাতেই আছে, বাণিজ্যে বসতি লক্ষ্মী। বিগত দেড় দশকে একাধিকবার বাংলার সিনেইন্ডাস্ট্রিকে চাঙ্গা করার জন্য আন্তর্জাতিক মহলের কাছে বিনিয়োগের প্রস্তাব নিয়ে গিয়েছেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। বৃহস্পতিবার কলকাতা আন্তর্জাতিক চলচ্চিত্র উৎসবের উদ্বোধনী অনুষ্ঠানের মঞ্চেও বিদেশি অতিথি এবং বলিউড শিল্পীদের উপস্থিতিতে সেপ্রসঙ্গ উত্থাপন করেন মুখ্যমন্ত্রী। এবার সেই প্রস্তাবে সায় দিয়েই বলিউড-টলিউড কোল্যাবের সম্ভাবনার কথা জানালেন রমেশ সিপ্পি।
উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় বাংলা ছবিতে বিনিয়োগ করার প্রস্তাব দিয়ে বলেন, "ছবি সকলের কথা বলে, ছবির কোনও সীমানা হয় না। ভাষা যাই হোক। যৌথ প্রচেষ্টায় তৈরি হোক ছবি।" এবার উৎসবের পয়লা দিনে মুম্বই-কলকাতার 'সিনে কোল্যাব' প্রস্তাবে আগ্রহ প্রকাশ করে রমেশ সিপ্পি বলেন, "মুম্বই এবং কলকাতার যৌথ প্রযোজনায় কিছু করা যায় কিনা সেই বিষয়ে ফেস্টিভ্যালের উদ্বোধনের দিন মমতাজির সঙ্গে আমার কথা হয়েছে। তবে তার জন্যে ভালো বিষয়, সঠিক চিত্রনাট্য প্রয়োজন, যার সঙ্গে বিভিন্ন ভাষাভাষীর মানুষ একাত্ম হতে পারবেন।" এদিনের বক্তৃতায় তাঁর পরিচালক ও প্রযোজক সত্ত্বা দু'টোই স্পষ্ট হয়। ওটিটি এবং ফোনে সিনেমা দেখার যুগেও মানুষ যে এখন দামী টিকিট কেটে হলে যাচ্ছে, তাতেই বোঝা যায় সিনেমা ভীষণভাবে বেঁচে আছে, বক্তব্য তাঁর। তিনি আরও জানান, বাণিজ্য আর শিল্পের মেলবন্ধন ঘটলে ভালো সিনেমা হবে। বোঝা গেল মুম্বই-বাংলার সম্ভাব্য মেলবন্ধন নিয়ে তিনি আশাবাদী।
কলকাতা আন্তর্জাতিক চলচ্চিত্র উৎসবে রমেশ সিপ্পি। নিজস্ব ছবি
সিনে উৎসবের পয়লা দিনে, ৭ নভেম্বর শিশির মঞ্চ কানায় কানায় পূর্ণ ছিল। গৌতম ঘোষের তত্ত্বাবধানে 'সত্যজিৎ রায় স্মরণে' বক্তৃতা রাখার জন্য বিশেষ অতিথি হিসেবে যোগ দেন 'শোলে' পরিচালক রমেশ সিপ্পি। কলকাতা আন্তর্জাতিক চলচ্চিত্র উৎসবে এসে মুম্বই-কলকাতা সিনেশিল্পের মেলবন্ধনের কথা ভাগ করে নিলেন বর্ষীয়ান পরিচালক।
এর মাঝেও এদিন তাঁর প্রতিটি বাক্যে জুড়ে রইল ‘শোলে’-র প্রসঙ্গ। ‘শোলে’-র মতো অননুকরণীয় ক্লাসিক তৈরির নানা নেপথ্য কাহিনি ভাগ করে নিলেন রমেশ সিপ্পি। সিনেমা তৈরির ক্ষেত্রে টিমওয়ার্ক এবং গল্প বলার দক্ষতার দিকে জোর দেন তিনি। কথায় কথায় রমেশ জানালেন, দু-চার লাইনের ভাবনা থেকেই ‘শোলে’র সূত্রপাত। অ্যাকশন সিকোয়েন্সগুলো খুবই বিপজ্জনক ছিল। প্রতিটা টেক-এর দু'টো ভার্সন ছিল, একটা ৭০ মিমি, আরেকটা ৩৫ মিমি-তে তোলা। বাইক নিয়ে অমিতাভ বচ্চনের শটের কথা তুলে আনেন– মিস্টার বচ্চন এক শটেই ওকে করেছিলেন! আর একটা ‘শোলে’ বা সিক্যুয়েল বানালেন না কেন? প্রশ্নটা সকলের মনেই ঘুরছিল, রমেশ যেন বুঝতে পেরেছিলেন, হাসতে হাসতে নিজেই জবাব দিলেন, “শোলে’র জনপ্রিয়তা ছাপিয়ে যেতে পারে, এমন কিছু বানানো আর সম্ভব নয়। ৫০ বছর পরেও একটা ছবি নিয়ে চর্চা হচ্ছে, প্রথম ‘শোলে’ যখন মানুষ ভোলেনি, আরেকটা করব কীভাবে!”
