সুস্মিতা চট্টোপাধ্যায়: ঘাটে ঘাটে আলোর চাদর। ইতি-উতি ফুল-প্রদীপের অলঙ্কারে আভূষিত গঙ্গাবক্ষ। এ যেন বারানসীর এক মায়াবী রূপ। পুরাণমতে, কার্তিক পূর্ণিমার দিন মহাদেব ত্রিপুরাসুরকে বধ করেছিলেন। আর সেই আনন্দেই দেবতারা এদিন স্বর্গে দীপাবলি পালন করেন। যা 'দেব দীপাবলি' বলে পরিচিত। বারাণসীর এই বাৎসরিক আলোক উৎসব দেখতে প্রতিবছর হাজার হাজার ভক্ত ভিড় করেন, এবছর আমিও সেই তালিকায়।
দেব দীপাবলিতে যোগ দেওয়া আমার কাছে স্বপ্নপূরণের এক অন্য আখ্যান। দীর্ঘদিনের ইচ্ছে ছিল, দেব দীপাবলির সময়ে বারানসীতে কাটাব। শহরের মায়াবী রূপ চাক্ষুষ করব। এযাবৎকাল যদিও প্রচুর ছবি-ভিডিও দেখেছি কিন্তু সশরীরে আধ্যাত্মিক অনুভূতিতে নিমজ্জিত হওয়ার ইচ্ছে ছিল বহুদিনের। আসলে যতক্ষণ না সশরীরে উপস্থিত হয়ে নিজে চোখে কিছু দেখা যায়, ততক্ষণ অনুভব করা যায় না। সেই জন্যই দেব দীপাবলি উপলক্ষে এবার বারানসীতে আসা। 'উইশ লিস্ট'-এ ছিল, সেটাই পূরণ হল। আমার বিশ্বাস, মহাদেবের আশীর্বাদের হাত আমার মাথায় উপর রয়েছে বলেই আমি নিজে এখানে এসে দেব দীপাবলি উপভোগ করার সুযোগ পেলাম। শিবভক্ত হিসেবে আমার কাছে এটা পৃথিবীর সেরা অনুভূতি। বারানসীতে এই বিশেষ দিনে সাক্ষী থাকাটাই এক অনন্য অভিজ্ঞতা। এতটা ম্যাজিক্যাল, স্পিরিচ্যুয়াল, ইমোশনাল, যে আমার নিজেকে ভাগ্যবান বলে মনে হচ্ছে।
বুধসন্ধ্যায় কার্তিক পূর্ণিমার দিন নৌকাবিহার করলাম। সঙ্গী আমার মেকআপ আর্টিস্ট কাজু। ও আমার ভালো বন্ধুও। তো নৌকা থেকে গোটা শহরটাকে যেভাবে দেখার সুযোগ পেলাম, সে এক অনন্য অভিজ্ঞতা। অসাধারণ। মনে হল, বারানসী যেন আলোয় আলোয় কনে সাজে সেজেছে। আর গোটা শহরটার বিয়ে হচ্ছে। কী সুন্দর শৃঙ্গার, ম্যাজিক্যাল! উপরি পাওনা, কার্তিক পূর্ণিমার চাঁদ। এদিন 'শশধরবাবু' যেন দ্বিগুণ উজ্জ্বল হয়ে উঠেছিলেন। মনে হচ্ছিল যেন, এই তো হাত বাড়ালেই ছুঁতে পারব। এই অনুভূতিটা ভাষায় লিখে ঠিক প্রকাশ করতে পারব না। তবে দেব দীপাবলির বারানসীতে মা-বাবাকে খুব মিস করছি। পরেরবার ইচ্ছে আছে ওঁদের নিয়ে আসার।
আর বারানসী মানেই তো প্রচুর খাবারের সম্ভার। এর আগে যেমন এখানে ঘুরতে এসেছি, তেমন কাজেও এসেছি। সকলেই জানেন, বারানসীর চাট ভীষণ জনপ্রিয়। স্ট্রিটফুড প্রেমী হিসেবে বারবার 'তাদের' প্রেমে পড়ি। এবারও তাই পুজোআর্চার পাশাপাশি রসনাতৃপ্তির সুযোগ হাতছাড়া করিনি। প্রচুর রকমের চাট চেখে দেখেছি। তার মধ্যে আমার সবথেকে প্রিয় 'চূড়া মটর' এবং 'মটর চাট'। বাকিগুলোও ভালো লাগে। আর এখানে এলে 'মালাই' খাওয়া মাস্ট! তবে বারানসীতে এসে এই প্রথমবার দেখলাম, ঘাটে ধোসা-ইডলির দোকান বসেছে। অগত্যা দক্ষিণী খাবার খাওয়ার সুযোগও ছাড়িনি। আমার পেটপুজোর তালিকায় ঝালমুড়ি, ফুচকাও রয়েছে। আরেকটা জিনিস না বললেই নয়, সেটা হচ্ছে দুপুরবেলা বাঙালি ভেজ থালি খেলাম। বেশ লাগল। আজ কাশী বিশ্বনাথের পাশাপাশি বাকি সব মন্দিরগুলিতেও পুজো দিচ্ছি। বেরনোর আগে 'টুক' করে লেখাটা সেরে ফেললাম। হর হর মহাদেব!
