সংবাদ প্রতিদিন ডিজিটাল ডেস্ক: কোভিডের সময়ে বাবাকে হারিয়েছেন স্বস্তিকা মুখোপাধ্যায় (Swastika Mukherjee)। বছর খানেক ধরে সেই স্মৃতি আগলেই জীবনযুদ্ধে লড়ে যাচ্ছেন অভিনেত্রী। মাথার উপর থেকে ছাতাটা সরে গেলে জীবনের বহু সমীকরণ বদলে যায়। স্মৃতি আঁকড়ে কেটে যায় বাকিটা জীবন। স্বস্তিকারও তাই। উৎসব-অনুষ্ঠান, নতুন ছবির রিলিজ, জীবনের প্রতিটা পদে বাবা সন্তু মুখোপাধ্যায়কে (Santu Mukherjee) মিস করেন তিনি। আজ বাবার জন্মদিনে কলম ধরে স্মৃতির সরণি বেয়ে হাঁটলেন স্বস্তিকা।
বাবাকে যে প্রতিটা মুহূর্তে মিস করেন অভিনেত্রী, তাঁর পোস্টই বলে দেয় সেকথা। বাবা সন্তু মুখোপাধ্যায় আজ বেঁচে থাকলে, নিজে হাতে স্বস্তিকা সাজিয়ে দিতেন তাঁর 'বার্থডে বয়'কে। অভিনেত্রীর শেয়ার করা ছবিতেই দেখা গেল, বাবার বুকে মাথা দিয়ে 'খুকু' যেন এক অদ্ভূত প্রশান্তিতে। পাঁচ বছর আগে সবটাই যেন ওলট পালট হয়ে গেল! আজও সেই স্মৃতি আঁকড়ে দেখা হওয়ার অপেক্ষায় স্বস্তিকা। লিখলেন, "হ্যাপি বার্থডে বাবা। কোথায় আছো সে তো জানি না। কে আলমারি থেকে নতুন জামা বের করে জোর করে পরিয়ে দেবে তাও জানি না। আশা করি কেউ নিশ্চয়ই আছে, আমার মতো করে তোমায় আগলে রেখেছে। প্রতি বছরের মতো, এবারেও নতুন ফতুয়া-লুঙ্গি পরো। খাদির দোকানে গেলে, গেরুয়া রংয়ের কোনও কাপড় দেখলেই মনে হয় তোমার জন্য একটা পাঞ্জাবি বানাতে দিই, তার পর মুহূর্তেই মনে পড়ে, তুমি তো নেই। আজ সন্ধে নামলে দু' পাত্তর ব্যালেন্টাইন খেও। কত ভালোবাসতে। পৃথিবীর এত জায়গায় যাই, যত ভালো স্কচ-ই কিনে আনি না কেন, সেই ব্যালেন্টাইনটাই সেরা। তোমার আর মায়ের না থাকাতে বাড়িতে খাওয়া-দাওয়া, লোকজন এর আসা-যাওয়া, আনন্দ উৎসব প্রায় উঠে গিয়েছে বললেই চলে। ঠিক ওই গানটার মতো - এত আনন্দ আয়োজন সবই বৃথা তোমায় ছাড়া। ১৩ জানুয়ারি- এই দিনটা আমার কাছে আজীবন 'আমার বাবার জন্মদিন' হয়েই রয়ে যাবে। অবশ্য শুধু একটা দিন কেন? বাকি বছরের অজস্র দিনগুলো ও তোমাদের দুজনের দিন হয়েই রয়ে গিয়েছে। জন্মদিন, বেড়াতে যাওয়ার দিন, অসুখ করার দিন, হাসপাতালে যাওয়ার দিন, সেখান থেকে ফেরার দিন, না ফেরার দিন এইসব।"
স্বস্তিকার কথায়, জীবনটাই বর্তমানে দুটো টাইমলাইনে বিভক্ত। "তখনও মা ছিল, তখন আর মা ছিল না। তখনও বাবা ছিল, তখন বাবা ছিল না। আর কটা দিন থেকে গেলে পারতে বাবা। না হয় অনেক রাত অবধি জমিয়ে আড্ডা মারতে মারতে, লোকজনের গুষ্টি উদ্ধার করতে করতে দু পেগ হুইস্কি খাওয়ার জন্যই রয়ে যেতে। না হয়, ব্রাজিল-আর্জেন্টিনার ম্যাচ দেখে চিৎকার করার জন্য রয়ে যেতে। না হয়, দরবেশ, ক্ষীরকদম্ব, মনোহরা, সীতাভোগদের জন্য রয়ে যেতে। ভাত-রুটির শেষ পাতে রোজ একটু মিষ্টি খাওয়ার পাঠও চুকে গিয়েছে। বাড়িতে আর মিষ্টি কেনা হয় না। তোমায় আরও একবার দেখার জন্য সব করতে পারি বাবা। তুমি তো ঈশ্বরের কাছে আছো, তুমি ওঁকে বোলো, এই জন্মে হোক বা পরের জন্মে, বা দু জন্মের সন্ধিক্ষণে আমাদের দেখাটা যেন হয়। কত কথা জমে আছে বাবা। এক পাহাড়। আজ তোমার ফেভারিট ব্রুট পারফিউমটা মেখেছি, তোমার জন্মদিনে তোমার গায়ের গন্ধ থাকুক গায়ে। রোজ ঘুমোতে গেলে ভাবি, চোখ খুললেই হঠাৎ যদি তোমায় দেখতে পাই, জড়িয়ে ধরে বসে থাকব, অনেকক্ষণ। বেশি কিছু চাই না, এইটুকুই। কখনও এলে 'ভেবলি' বলে ডেকো বাবা, ঠিক বুঝে নেব তুমি ডেকেছ। ভালো থেকো। তোমার পথে ঝলমলে আলো থাক, ইউডি কোলনের গন্ধ থাক, অনেকটা যত্ন আর ভালোবাসা থাক। আমার কাছে অপেক্ষা থাক, আমার সারাক্ষণের সঙ্গী", লিখলেন অভিনেত্রী।