আগামী বছর সিনেমার পরিকল্পনা। একাধিক সফল সিরিজের পর ওটিটিতে এল অদিতি রায়ের 'অনুসন্ধান'। তার আগে সংবাদ প্রতিদিন ডিজিটালের সঙ্গে আলাপচারিতায় পরিচালক। শুনলেন শম্পালী মৌলিক।
‘অনুসন্ধান’ নিয়ে চাপ অনুভব করছেন?
...অদিতি শান্তভাবে বললেন, না, একদম চাপ অনুভব করছি না। তার সবচেয়ে বড় কারণ, যখন কাজ করি কাজ হিসাবেই দেখি। যদি সেটা নিয়ে চাপ অনুভব করি, করতে পারব না।
‘অনুসন্ধান’ সিরিজের ক্ষেত্রে মহিলা বাহিনী চোখে পড়ছে– পরিচালক অদিতি, কেন্দ্রচরিত্র শুভশ্রী গঙ্গোপাধ্যায় এবং লেখা সম্রাজ্ঞী বন্দ্যোপাধ্যায়। এটা কি সচেতনভাবে হল?
...অদিতি বলছেন, “যদি সিজন হিসাবে ধরি, সম্রাজ্ঞীর সঙ্গে এটা আমার পাঁচ নম্বর কাজ। বম্বেতে একটা কাজ চলছে, সেটাও ‘নষ্টনীড়’ থেকেই হচ্ছে। সম্রাজ্ঞীর সঙ্গে বহুদিন ধরে কাজ করছি, ওর সঙ্গে কোলাবরেট করাটা আলাদা করে সচেতন সিদ্ধান্ত নয়। শুভশ্রীকে আমি চিনি ‘চ্যালেঞ্জ’-এর আগে থেকে। তখন ওর অনেক কম বয়স। ওর সঙ্গে অনেক সময়েই কাজ করব-করব কথা হয়েছে। কখনও কাজ করিনি। বিশেষ করে এই চরিত্র ‘অনুমিতা সেন’, যে একজন ইনভেস্টিগেটিভ জার্নালিস্ট, তার জন্য আমি শুভশ্রীর কথা ভাবিনি। মনে হয়েছিল যে, ও তো ছবির নায়িকা, ছবির অভিনেতা। সেখান থেকে সিরিজ করতে চাইবে কি? যদিও এর আগে ‘ইন্দুবালা’ করেছে। ওর নামটা আমার কাছে আসে শ্রীকান্তদার থেকে। উনি বলেছিলেন, ‘তুই শুভশ্রীর কথা ভাবতে পারিস। ও কিন্তু নানা ধরনের এক্সপেরিমেন্ট করতে ভালোবাসে।’ সেটা কাজের ধরন দেখেই বুঝতে পারি। মনে হয়েছিল, কাজটা করতে ভালোবাসবে কিন্তু এই কাজটা যে করতে চাইবে, সেটা আশা করিনি। আমি ওকে ফোন করে অ্যাপ্রোচ করি। চিত্রনাট্য অয়ন চক্রবর্তীর। গল্প সম্রাজ্ঞীর এবং অ্যাডিশনাল স্টোরি অয়নদার। তার মধ্যে মধ্যে সেরা আর আমারও ইনপুটস রয়েছে। এটা পুরোপুরি টিম ওয়ার্ক। শুভশ্রীকে প্রথমে গল্পটা দু’লাইনে বলেছিলাম। ও কিন্তু সেটাতেই ইয়েস বলেছিল। এটা বোধহয় আমার প্রথম কাজ, যেখানে শুধুই মহিলা বাহিনী সক্রিয় নয়। অনেকে মিলে কাজটার মধ্যে যুক্ত হয়েছি (হাসি)।” তাঁর স্পষ্ট উত্তর।
শুভশ্রী কেরিয়ারের এই পর্যায়ে, ইন্ডাস্ট্রির প্রথম সারিতে। তাঁকে পরিচালনা করতে কতটা চাপ অনুভব করেছেন?
...“না, শুভশ্রী প্রচণ্ডভাবে ডিরেক্টর্স অ্যাক্টর। শুভশ্রী যখন তৈরি হয়ে ফ্লোরে ‘অনুমিতা সেন’ হয়ে চলে এসেছে, তখন ও পুরোটাই টিমের ওপর ছেড়ে দিয়েছে। ও শুধু অভিনয় করেছে। একবারের জন্যও উঠে এসে মনিটর চেক করেনি। শুভশ্রী সেই তথাকথিত কমার্শিয়াল ছবির নায়িকা, সেইখান থেকে ভেঙে বেরিয়ে অন্য ভাবে নিজেকে তুলে ধরা, রিয়্যালি কমান্ডেবল’, বলছেন অদিতি।
মহিলা সংশোধনাগারে মহিলাদের অন্তঃসত্ত্বা হয়ে পড়া নিয়ে এই সিরিজের কাহিনি। অদিতি জানাচ্ছেন, বেশকিছু খবর থেকেই সিরিজের গল্প ডেভলপ করা হয়েছে। তবে সিরিজ পুরোটাই ফিকশন। অদিতির সাম্প্রতিকতম কাজ ‘পরিণীতা’ যা বেশ প্রশংসা পেয়েছে।
সেটা ছাপিয়ে যেতে পারবে ‘অনুসন্ধান’?
...হেসে বলছেন, “পরিণীতা’ খুব নরম বিষয়, আমার মনের কাছের বিষয়। আর ‘অনুসন্ধান’ একদম আলাদা। এটা অনেক ডাকাবুকো কাজ। আমি যে এরকম একটা কাজ করতে পারি, প্রথমে নিজেই বিশ্বাস করিনি। এর মধ্যে অনেক ফাইট সিকোয়েন্স আছে। আমি এবং ডিওপি রম্যদীপ মিলেই করে নিয়েছি। এই কাজটা করতে গিয়ে নতুন চ্যালেঞ্জ ফেস করেছি তবে করে ফেলেছি। এবার দর্শক বলবে কেমন লাগছে।” হেসে বললেন তিনি।
প্রায় ১৫ বছর হয়ে গেল অদিতি রায় বিনোদন ইন্ডাস্ট্রিতে। যখন বাংলা বাণিজ্যিক ছবির রমরমা সেই সময় ‘অবশেষে’-র মতো অন্য ধারার ছবি পরিচালনা করেছেন?
...ঠিক করেছি আগামী বছর করবই। কারণ, ছবি আমার এমন ভালোলাগার জায়গা, নিজের মতো করে সময় নিয়ে করতে চাই। বিগত বছরগুলোয় সেই সময়টাই করতে পারিনি। আশা, আগামী বছর করতে পারব (হাসি)।’
একাধিক সফল সিরিজ করার পর তাঁর দর্শক তৈরি হয়েছে। তবুও কেউ কেউ মনে করেন, আপনার কোনও কোনও সিরিজ সিরিয়ালের মতো। এই প্রসঙ্গে কী বলবেন?
...‘দেখো, আমি তো নিজে সিরিয়াল বানাই। সিরিয়াল বিষয়টা কীসের থেকে আলাদা আমি বুঝি না। দর্শক মিডিয়ামগুলো আলাদা করে ভাবেন। তাঁরা খুব বুঝে সচেতনভাবে বলেন কি না জানি না। দিনের শেষে সবই গল্প। টিভি, সিরিজ বা সিরিয়াল– সবেতেই গল্প বলি আমরা। আমি গল্প বলতে চাই। সেটা সিরিয়ালের মতো কি না বা সিনেমার মতো কি না এত ভেবে বলি না।’ হেসে বলছেন অদিতি।
