রাজর্ষি গঙ্গোপাধ্যায়: বাংলাদেশ ক্রিকেটকে কার্যত গোড়া ধরে নাড়িয়ে দেওয়ার মতো অভিযোগ তুলেছেন জাহানারা আলম। সেদেশের ক্রিকেটার জাহানারা প্রথমে বাংলাদেশ অধিনায়ক নিগার সুলতানা জ্যোতির বিরুদ্ধে এবং মহিলা দলের প্রাক্তন নির্বাচক ও ম্যানেজার মঞ্জুরুল ইসলামের বিরুদ্ধে বিস্ফোরক অভিযোগ এনেছেন। যা নিয়ে মুখ খুলেছেন বাংলাদেশের প্রাক্তন ক্রিকেটার তামিম ইকবাল। তাঁর সাফ বক্তব্য, জাহানারা যে অভিযোগগুলো তুলেছেন, সবগুলোই গুরুতর এবং সেসব সত্যি হলে তা কোনোভাবেই মেনে নেওয়ার মতো নয়।
একের পর এক হেনস্তার অভিযোগে বিদ্ধ বাংলাদেশের মহিলা ক্রিকেট। জুনিয়রদের র্যাগিং করার অভিযোগ উঠেছে সুলতানার বিরুদ্ধে। পাশাপশি জাহানারার কথায়, তিনি জাতীয় দলে খেলার সময়ে দিনের পর দিন যৌন নির্যাতনের শিকার হয়েছেন। অভিযোগের তীর মঞ্জুরুল ইসলামের বিরুদ্ধে। যা নিয়ে রীতিমতো উদ্বিগ্নভাবে তামিমের বক্তব্য, "শুধু একজন জাতীয় ক্রিকেটার বা সাবেক অধিনায়ক বলেই নয়, যে কোনও পর্যায়ের ক্রিকেটার হোক বা যে কোনও খেলার ক্রীড়াবিদ কিংবা যে কোনও নারী, কারও প্রতিই এমন আচরণ কোনোভাবেই গ্রহণযোগ্য নয়।"
ইতিমধ্যে বাংলাদেশ ক্রিকেট বোর্ডের তরফ থেকে তদন্তের আশ্বাস দিয়ে কমিটি তৈরি করা হয়েছে। কিন্তু সেটাই কি যথেষ্ট? তামিমের বক্তব্য, "আমি মনে করি, এসব অভিযোগ খতিয়ে দেখতে জাতীয় ক্রীড়া পরিষদ কিংবা সরকারি পর্যায়ে একটি স্বাধীন তদন্ত কমিটি গঠন করা উচিত, যেখানে বিসিবি সংশ্লিষ্ট কেউ থাকবেন না, যাতে বিন্দুমাত্র পক্ষপাতের সুযোগ না থাকে। যত দ্রুত সম্ভব এই কমিটি গঠন করা উচিত ও সর্বোচ্চ গুরুত্ব দিয়ে ব্যাপারটিকে দেখা উচিত। দ্রুততার সঙ্গে তদন্ত শেষ করে দোষী যে-ই হোক, যার যতটুকু দায় থাকুক, উপযুক্ত ও দৃষ্টান্তমূলক ব্যবস্থা নিশ্চিত করতে হবে।"
সদ্যসমাপ্ত বিশ্বকাপে বাংলাদেশ আট দলের মধ্যে সপ্তম স্থানে শেষ করেছে। অধিনায়ক নিগার সুলতানাকে নিয়ে তাঁর অভিযোগ, জুনিয়রদের তিনি র্যাগিং করতেন। বিসিবি অব তামিম বলছেন, "কয়েকদিন আগে জাতীয় দলের পরিবেশ নিয়েও জাহানারা কিছু অভিযোগ করেছেন, যা বিসিবি পরে উড়িয়ে দিয়েছে। একজন ক্রিকেটার যখন দল নিয়ে এত গুরুতর অভিযোগ করেন, সেসব অবশ্যই খতিয়ে দেখা উচিত। কিন্তু যাচাই না করেই বিসিবি যেভাবে অতি দ্রুত উড়িয়ে দিয়েছে, কখনই তা কাম্য নয়।"
এরপরই যৌন নির্যাতনের বিস্ফোরক অভিযোগ। তামিম সরাসরি জাহানারার পাশে দাঁড়িয়ে কার্যত আমূল বদলের ডাক দিয়ে ফেললেন। তিনি বলেন, "জাহানারার অভিযাগের পর আরও বেশ কিছু ঘটনার কথা জানতে পারছি নানা মাধ্যমে। আমি প্রতিটি নারী ক্রিকেটারকে অনুরোধ করব, যারা নানা সময়ে এসব ঘটনার শিকার হয়েছেন, সেটা সরাসরি হোক বা আকারে-ইঙ্গিতে, যে কোনওভাবে হেনস্তার শিকার হয়েছে, সবাই মুখ খুলবেন এবং সাহস নিয়ে এগিয়ে আসবেন। দেশের ক্রিকেট তথা ক্রীড়াঙ্গনের স্বার্থে, বর্তমান আর ভবিষ্যৎ প্রজন্মের স্বার্থে এটা প্রয়োজন। কথা দিচ্ছি, আমাকে ও আমাদেরকে আপনাদের পাশে পাবেন। জাহানারার অভিযোগগুলোর প্রেক্ষিতে যথাযথ ব্যবস্থা যদি না নেওয়া যায়, যদি ন্যায়বিচার নিশ্চিত না করা যায়, তাহলে ভবিষ্যতে কোনও মেয়ে ক্রিকেট বা যে কোনও খেলায় আসতে ভয় পাবে, খেলাকে পেশা হিসেবে বেছে নিতে পিছপা হবে। আমরা সেটা হতে দিতে পারি না।"
