আলাপন সাহা: কলকাতা শহরটা তাঁর বড্ড প্রিয়। দীর্ঘদিন কেকেআরের হয়ে খেলেছেন। এই শহর তাকে অনেক কিছু দিয়েছে। গতবার আইপিএল ট্রফি জিতেছেন কেকেআর মেন্টর হিসেবে। শহরটাকে এতটাই ভালবেসে ফেলেছিলেন যে একটা সময় এখানে বাড়ি কেনার কোথাও ভেবে ফেলেছিলেন। কলকাতা আর গৌতম গম্ভীরের রোমান্সের কথা এখন আর অজানা নয়। সেই নিজের প্রিয় শহরে এমন একটা সময় ভারতীয় টিমের ডাগআউটে বসবেন, যখন তাঁর কোচিং কেরিয়ার গভীর সংকটে।
ভারতীয় টিমের কোচ হওয়ার পর থেকে সুখের সময় যাচ্ছে না গম্ভীরের। শ্রীলঙ্কায় হার। ঘরের মাঠে নিউজিল্যান্ডের কাছে টেস্টে হোয়াইটওয়াশ। অস্ট্রেলিয়ায় গিয়ে হার। তারপর আবার টেস্ট চ্যাম্পিয়নশিপ ফাইনাল থেকে ছিটকে যাওয়া। কোচ হিসেবে একেবারে ফায়ারিং স্কোয়াডের সামনে যে তিনি দাঁড়িয়ে, সেটা বুঝতে গেলে ক্রিকেট বিশেষজ্ঞ হওয়ার দরকার পড়ে না। গম্ভীর নিজেও জানেন, চ্যাম্পিয়ন্স ট্রফির আগে ইংল্যান্ড সিরিজে একটু এদিক থেকে ওদিক হলেই চাপটা আরও বেড়ে যাবে। তাই নিজের সেকেন্ড হোম থেকেই ঘুরে দাঁড়ানোর রসদ খুজছেন তিনি।
টিম শনিবার সন্ধ্যায় কলকাতা চলে এসেছিল। রোববার সূর্যকুমার যাদবদের ইডেনে ঢোকার সময় ছিল সাড়ে চারটে। কিন্তু তার কিছুক্ষণ আগেই ঢুকল টিম। কোচ গৌতম যেন আরও গম্ভীর হয়ে গিয়েছেন। প্র্যাকটিস শুরুর আগেই একটা মিনিট দশেকের টিম হার্ডল হল। বোলিং কোচ মর্নি মর্কেল থেকে শুরু করে কোচিং স্টাফের প্রত্যেকেই কিছু না কিছু বললেন। আসলে শুধু গম্ভীর একা নন, পুরো কোচিং স্টাফ প্রবল চাপে রয়েছে। সিতাংশু কোটাককে এই সিরিজ থেকে ব্যাটিং কোচ হিসাবে টিমের সঙ্গে জুড়ে দেওয়া হয়েছে। তাঁকে দেখা গেল ব্যাটারদের নিয়ে বেশ কিছুক্ষণ পড়ে থাকতে। ইংল্যান্ড আর মাঠমুখো হয়নি। শনিবার রাতেই জানিয়ে দেওয়া হয়েছিল, জস বাটলারের টিম প্র্যাকটিস করবে না। সূর্যরা অবশ্য ঘণ্টা তিনেক পুরোদমে ট্রেনিং করে গেলেন। সেন্টার পিচের পাশের নেটে আলাদা করে রেঞ্জ হিটিং প্র্যাকটিস চলল।
এর মধ্যে আবার কিউরেটর সুজন মুখোপাধ্যায়ের সঙ্গে বেশ কিছুক্ষণ কথা বললেন গম্ভীর। ভারতীয় কোচকে কিউরেটর আশ্বস্ত করে বলে দেন, ভালো উইকেট হবে। চিন্তার কোনও কারণ নেই। সিএবি প্রেসিডেন্ট স্নেহাশীষ গঙ্গোপাধ্যায় বলছিলেন, “আমাদের এখানে যেমন পিচ হয়, তেমনই হচ্ছে। ম্যাচে বড় স্কোর হবে।” অর্থাৎ, বুধবার বড় রানের ম্যাচ দেখতে চলেছে ইডেন।
আরেকজনের কথা তো এতক্ষণ বলাই হয়নি। গম্ভীরের মতোই এই শহরটা তাঁরও খুব প্রিয়।আসলে তাঁর ক্রিকেটীয় উত্থান তো কলকাতা থেকেই। এই শহর, এই মাঠ ঘিরে প্রচুর স্মৃতি রয়েছে। এখানে বাংলার হয়ে অনেক ম্যাচ খেলছেন। এমনকী তাঁর টেস্ট অভিষেকও এই স্টেডিয়ামেই। সেই ইডেনেই আবার আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে প্রত্যাবর্তন হতে চলেছে তাঁর।
আশা করি বুঝতেই পারছেন, কার কথা বলা হচ্ছে? মহম্মদ শামি।
চোট আঘাত সমস্যা কাটিয়ে একবছর পর ফিরেছেন। বাংলার হয়ে বেশ কিছু ঘরোয়া ম্যাচ খেলা হয়ে গিয়েছে। এবার ভারতীয় জার্সিতে মাঠে ফেরার পালা। শনিবার বিকেলে আমরোহ থেকে ঘণ্টা তিনেক ট্রাভেল করে এয়ারপোর্ট। সেখান থেকে ফ্লাইটে কলকাতায় পৌঁছান। শামির ঘনিষ্ঠ মহলে খোঁজ নিয়ে জানা গিয়েছে, প্রত্যাবর্তনের ম্যাচটা ইডেনে হওয়ায় তিনি একটু বেশিই খুশি। আর নেটে যে রকম বোলিং করলেন শামি, তাতে স্বস্তিতে থাকতে পারেন গম্ভীর। পুরোদমেই হাত ঘোরালেন শামি।
কী দাঁড়াল? কোচ গৌতম গম্ভীরের মতো মহম্মদ শামিও ইডেন থেকেই প্রত্যাবর্তনের রসদ খুজছেন।