shono
Advertisement

Breaking News

Bangladesh situation

পুব সীমান্তে মৌলবাদের আঁচ

আমেরিকার সঙ্গে ভারতের কূটনৈতিক বৈঠকে তাই কি এত আগ্রহ বিশ্বের?
Published By: Kishore GhoshPosted: 12:42 AM Feb 10, 2025Updated: 12:42 AM Feb 10, 2025

মুহাম্মদ ইউনুস বলেছিলেন, ছাত্ররা ‘রিসেট’ বোতাম টিপে দিয়েছে। কিন্তু বাংলাদেশে যা চলছে, তা একপ্রকার ‘মাৎস্যন্যায়’। ‘রিসেট’ মানে কি অরাজকতায় ফিরে যাওয়া? তাহলে তো এর অবসানও দরকার। আমেরিকার সঙ্গে ভারতের কূটনৈতিক বৈঠকে তাই কি এত আগ্রহ বিশ্বের? লিখছেন সুমন ভট্টাচার্য

Advertisement

পল পটের সঙ্গে মুহাম্মদ ইউনুসের দেখা হলে– কে কাকে অভিবাদন জানাবেন? কে কাকে বলবেন– না, তুমি আমার চেয়ে ‘বেটার পারফর্ম’ করেছ! যদি আমরা ‘স্পেকুলেটিভ হিস্ট্রি’ বা কী হতে পারে, সেই নিয়ে আলোচনা করি, তাহলে বোধহয় এমন একটা দৃশ্যকল্পর কথা ভাবা যেতেই পারে।

কম্বোডিয়ার সেই বিখ্যাত বা কুখ্যাত শাসক, খেমারুজদের প্রতিষ্ঠাতা পল পট নিজের দেশকে
যে-ধ্বংসলীলার দিকে ঠেলে দিয়েছিলেন, যেভাবে নির্বিচারে সংখ্যালঘুদের উপর অত্যাচার নেমে এসেছিল, তাকে কি ছাপিয়ে যেতে পারলেন নোবেল বিজয়ী অর্থনীতিবিদ মুহাম্মদ ইউনুস? মনে হয়, আপাতত, এই প্রশ্নটাই মাথায় আসতে পারে।

পল পটকে নিয়ে একসময় ভারতের তথাকথিত ‘প্রগতিশীল’ বা বলা যায় বাম এবং অতি-বামেরা উৎসাহী ছিল, ক্রমাগত বলে চলেছিল যে, কী অসামান্য সামাজিক পরিবর্তন করছেন কম্বোডিয়ার স্বৈরতান্ত্রিক শাসক! আশ্চর্যের বিষয়, এখনও এই বাংলার কিছু বাম এবং অতি-বাম ইউনুসের শাসনকে ‘জাস্টিফাই’ বা গ্রহণযোগ্যতা দেওয়ার মরিয়া প্রচেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে, বলছে, ৩২ নম্বর ধানমণ্ডির ঠিকানা গুঁড়িয়ে দেওয়া নাকি আসলে বাংলাদেশের দক্ষিণপন্থী বনাম বামপন্থীদের রাজনৈতিক লড়াই! ঠিক যেমন পল পটের সময় এ-দেশের বামেরা সংস্কার দেখতে পেত!

পল পট আর মুহাম্মদ ইউনুসের দেখা হলে কী আলোচনা হতে পারে, সেটা না হয় ‘কাল্পনিক’ বিষয়। কিন্তু মহিলাদের শিক্ষার পক্ষে সওয়াল করে বিদেশে চলে যেতে বাধ্য হওয়া তালিবান মন্ত্রী শেখ সাবেরের সঙ্গে আমাদের প্রতিবেশী দেশের মহিলা ফুটবলারদের উপর অত্যাচার নেমে আসা বা কিংবদন্তি সাহিত্যিক হুমায়ূন আহমেদের স্ত্রী মেহের আফরোজ শাওনকে গ্রেফতার করা, এবং পরে মুক্তি দেওয়া, এগুলো ঘোরতর বাস্তব। এবং সেই বাস্তব যে আমাদের রূঢ় পৃথিবীর সামনে দঁাড় করাচ্ছে, তা বলছে যে, আফগানিস্তানে তালিবান শাসন যদি কয়েক হাজার কিলোমিটার দূরে হয়, তাহলে কয়েকশো কিলোমিটারের মধ্যে আমরা মৌলবাদী শাসন দেখতে পেয়ে গিয়েছি! যদি মহিলারা সোশ্যাল মিডিয়ায় সমালোচনা করেন, বা শাসকের মুখোশ খুলে দেওয়ার চেষ্টা করেন, তাহলে ইউনূসের সরকার তঁাদের ডেকে এনে জিজ্ঞাসাবাদ করে, বা জেলে পুরে দেওয়ার হুমকি দেয়। পল পটের কম্বোডিয়ার সঙ্গে ইউনুসের বাংলাদেশের তুলনা বা তালিবান শাসনে মহিলাদের সঙ্গে আমাদের পুবের প্রতিবেশী দেশে মহিলাদের কী ধরনের বিধিনিষেধের দিকে ঠেলে দেওয়া হচ্ছে, সেই তুলনামূলক আলোচনা, আসলে কী শেখায়? শেখায় যে, মৌলবাদের উত্থান ঘটলে তা কতটা ভয়াবহ হতে পারে।

সমস্যা হচ্ছে– জো বাইডেন যে-বয়সে মার্কিন প্রেসিডেন্ট নির্বাচন থেকে সরে গিয়েছেন, হয়তো বয়সজনিত কারণেই, সেই একই বয়সে মহম্মদ ইউনুসকে আমেরিকার ডেমোক্র্যাট দল ঢাকার কুর্সিতে বসিয়েছে। ডেমোক্র্যাটরা পৃথিবীর আন্তর্জাতিক রাজনীতিতে ‘মার্কিন ছড়ি’ ঘোরানোর নামে যা-যা তাণ্ডব করেছে– ইরাক এবং লিবিয়াতে হিলারি ক্লিনটন যা-যা ভুল সিদ্ধান্ত নিয়েছিলেন– সেই অতীতকে আবার খুঁড়ে জাগিয়ে দিয়ে গিয়েছে গত বছর বাংলাদেশে ঘটে যাওয়া তথাকথিত অভ্যুত্থান। সেই অভ্যুত্থানকে আমাদের প্রগতিশীলরা যতই ‘বামপন্থী’ মোড়কে ঢাকার চেষ্টা করুক, বা বাংলাদেশের তথাকথিত ব্লগাররা বিভিন্ন প্যাকেজে আন্তর্জাতিক মহলে বিপণনের চেষ্টা করুক, আসলে মৌলবাদের চেহারা নগ্ন হয়ে সামনে চলেই আসছে। এবং বাংলাদেশ যদি আবার ‘পূর্ব পাকিস্তান’ হয়ে যায়, তাহলে প্রতিবেশী রাষ্ট্র হিসাবে যশোর থেকে বনগঁার দূরত্বকে মাথায় রেখে ভারতকে কী-কী ব্যবস্থা নিতে হবে, সেই আলোচনাও প্রাসঙ্গিক হয়ে যাচ্ছে।

কম্বোডিয়ায় পল পটের নারকীয় অত্যাচার থেমেছিল সে-দেশে ভিয়েতনামের সেনাবাহিনীর প্রবেশের পরে। হ্যঁা, কমিউনিজমের নামে, ‘জিরো আওয়ার’ থেকে শুরু করার নারকীয় অত্যাচার, গণহত্যা চালিয়ে যাওয়া পল পটকে থামিয়েছিল প্রতিবেশী কমিউনিস্ট ভিয়েতনামের সেনাবাহিনী। বাংলাদেশে ইউনুসের তত্ত্বাবধায়ক সরকারের এই ভয়াবহ শাসনের অবসান কীভাবে ঘটবে, সেই প্রশ্নের উত্তর আমাদের এখনও পর্যন্ত জানা নেই। যদিও ঢাকায় বসে নিত্যদিন ভিডিও তৈরি হয় এবং বিভিন্ন ধরনের কাল্পনিক গল্প বাজারে ছড়িয়ে পড়ে যে ভারতে থেকেই নাকি আওয়ামি লীগ বাংলাদেশের বর্তমান শাসকদের উৎখাতের পরিকল্পনা করছে! এবং সেসব আজগুবি গল্পের রেশ ধরেই হুমায়ূন আহমেদের স্ত্রী বা সোহানা সাবার মতো অভিনেত্রীকে গ্রেফতার করা হয়। যদিও পরে দেখা যায়– সবই ভুয়া কল্পনা। হিটলারের জার্মানিতে যেরকম মিথ্যা প্রোপাগান্ডা চলত, এখনকার সোশ্যাল মিডিয়ায় সেরকম প্রোপাগান্ডাই বাংলাদেশের বর্তমান শাসকরা চালিয়ে যাচ্ছে।

তা, সেটা তারা চালাতেই পারে, কিন্তু প্রতিবেশী দেশ হিসাবে আমরা কেন উদ্বিগ্ন হব? উদ্বিগ্ন কি হব শুধু ‘নিষিদ্ধ’ জঙ্গি গোষ্ঠী হিজবুল তাহারিকের প্রকাশ্যে আসার কারণে? না, বাংলাদেশের রাস্তায় প্রকাশ্যে আইএসের পতাকা নিয়ে মিছিলের ভিডিও সামনে আসায়? এই বিষয়ে তো আর কোনও সংশয় থাকার দরকার নেই যে, বাংলাদেশের শাসনব্যবস্থার নেপথ্যে সে-দেশের পাকিস্তানপন্থী বা আরও নির্দিষ্ট করে বলতে গেলে মুসলিম মৌলবাদী শক্তিগুলির হাত রয়েছে। তারাই বর্তমানে ইউনুস সরকারের ‘নিয়ন্ত্রক’। সে কারণেই ইসকনের সন্ন্যাসী চিন্ময়কৃষ্ণ দাস এখনও জেলে। কিন্তু তাহলে বাংলাদেশের ভবিষ্যৎ কী? বনগঁা থেকে ঢিল ছোড়া দূরত্বে যশোর, সেখানে গৃহযুদ্ধর পরিস্থিতি তৈরি হয়ে গেলে আমরা কী করতে পারি?

এই প্রসঙ্গটি প্রাসঙ্গিক, কারণ বাংলাদেশ সেই পথে হঁাটছেে। বা হিলারি ক্লিনটনের ডেমোক্র্যাট দল আমাদের পুবের প্রতিবেশী দেশকে সেই দিকে ঠেলে দিয়েছে, যা ইরাক বা লিবিয়ায় আমরা অতীতে হতে দেখেছি। বাংলাদেশের মহিলারা কেমন আছেন– এই প্রশ্নও জরুরি। কারণ, পাকিস্তানি সেনাবাহিনীর হাতে বাংলাদেশের হিন্দু এবং মুসলিম মহিলারা যখন নির্যাতিতা ও ধর্ষিতা হয়েছিলেন, তারপরে বাংলাদেশ স্বাধীন হওয়ার পর শেখ মুজিবুর রহমান বলেছিলেন যে, প্রত্যেক ধর্ষিতা মহিলা তঁার ঠিকানা হিসাবে যেন ‘৩২, ধানমণ্ডি’ লেখেন। সেই ৩২, ধানমণ্ডিকে গুঁড়িয়ে দিয়ে এবং তার সামনে দঁাড়িয়ে ভিডিও করে উত্তেজিত জনতা প্রমাণ করে দিয়েছে– তারা আসলে বাংলাদেশকে কোন যুগে ঠেলে দিতে চাইছে। অর্থাৎ, তাদের প্রবণতা পাকিস্তানের দিকে কতটা ঝুঁকে রয়েছে। বাংলাদেশ যদি আবার ‘পূর্ব পাকিস্তান’ হয়ে উঠতে চায়, তাহলে ভারতের জন্য চ্যালেঞ্জ ঠিকই, কারণ ভারতীয় গণতন্ত্র গত ৭৭ বছরে অনেক কঠিন পরীক্ষা-নিরীক্ষার মধ্যে দিয়ে গিয়েছে।

আমেরিকার তথাকথিত ‘মুক্তমনা’গণ বাংলাদেশে যে ‘বিষবৃক্ষ’ প্রতিষ্ঠা করেছে, সেই বিষবৃক্ষ থেকে মুক্তির দায়িত্বও কি তাহলে অতি দক্ষিণপন্থী রাজনীতির ‘আইকন’ ডোনাল্ড ট্রাম্পকেই নিতে হবে? হয়তো-বা। এবং সে কারণেই ফেব্রুয়ারিতে নরেন্দ্র মোদির সঙ্গে ডোনাল্ড ট্রাম্পের সাক্ষাৎকার আন্তর্জাতিক রাজনীতিতে এতটা গুরুত্ব পাচ্ছে। ডোনাল্ড ট্রাম্পের প্রশাসন ইতিমধ্যেই তথাকথিত ‘বেআইনি’ অনুপ্রবেশকারী ভারতীয়দের চেনে বেঁধে দেশে ফেরত পাঠিয়ে যথেষ্ট বিতর্কে ইন্ধন জুগিয়েছে। তারা কি বাংলাদেশের প্রশ্নে নয়াদিল্লিকে এবার একটু স্বস্তির বাতাস দেবে? নরেন্দ্র মোদির সঙ্গে হোয়াইট হাউসের নতুন প্রেসিডেন্টের সাক্ষাৎকারের দিকে সেজন্য তাকিয়ে দক্ষিণ এশিয়া। বাংলাদেশে যে-‘মাৎস্যন্যায়’, যে-নৈরাজ্য এবং যে-অরাজকতা চলছে, তার থেকে সেই দেশের সাধারণ মানুষও মুক্তি পেতে পারে। পল পট বলেছিলেন– তিনি ‘জিরো অাওয়ার’ থেকে সংস্কার শুরু করেছেন, আর মুহামদ্দ ইউনূস বলেছেন, ছাত্ররা ‘রিসেট’ বোতাম টিপে দিয়েছে। ‘জিরো অাওয়ার’ বা ‘রিসেট’ মানে তাই যদি ‘নৈরাজ্য’ বা ‘মাৎস্যন্যায়’ হয়, তাহলে সেই অরাজকতার অবসান হওয়াও দরকার। আর, সে কারণেই ট্রাম্প-মোদি সাক্ষাৎকারের দিকে বিশ্বের নজর, এত সাগ্রহ প্রতীক্ষা!

(মতামত নিজস্ব)
লেখক সাংবাদিক
suman09bhattacharyya@gmail.com

Sangbad Pratidin News App

খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ

হাইলাইটস

Highlights Heading
  • সমস্যা হচ্ছে– জো বাইডেন যে-বয়সে মার্কিন প্রেসিডেন্ট নির্বাচন থেকে সরে গিয়েছেন।
  • প্রতিবেশী দেশ হিসাবে আমরা কেন উদ্বিগ্ন হব?
Advertisement