shono
Advertisement
Alcohol

নেশাচক্র

বাংলার ২৭ লক্ষ মানুষ মদ্যপানে আসক্ত, তথ্যের সত্যাসত্য নিয়ে রাজনৈতিক চাপানউতোর।
Published By: Kishore GhoshPosted: 05:02 PM Feb 06, 2025Updated: 05:02 PM Feb 06, 2025

সোশ্যাল জাস্টিস অ্যান্ড এমপাওয়ারমেন্ট মন্ত্রক জানিয়েছে, বঙ্গে মদ্যপানে আসক্ত ২৭ লক্ষ মানুষ। শুরু হয়েছে রাজনৈতিক তর্ক। 

Advertisement

চার বন্ধু। চার কোলিগ। চার স্কুলশিক্ষক। মধ্যবয়সের ক্লান্তি তাদের ছেয়ে রেখেছে। উদ্যমের অভাব, অথবা গয়ংগচ্ছভাবে জীবনের বাকি স্রোতকে বইয়ে দেওয়ার উপায়হীনতা– এই তাদের পরিচয়। স্কুলে পড়াতে ভাল লাগে না। পড়ানোর মধ্যে আনন্দও খুঁজে পায় না তারা। ছাত্রছাত্রীরা জানে, ক্লাস শুধু করার জন্য করা। উপভোগ করার কিছু নেই। মাঝে মাঝে ছাত্রছাত্রীদের অভিভাবক এসে বলেন, শিক্ষকদের পড়ানোর ভঙ্গিতে আকর্ষণ নেই। এমন সময় এই চার বন্ধুর জীবনে আছড়ে পড়ল নরওয়েজিয় সাইকায়াট্রিস্ট ফিন স্কারডেরুডের তত্ত্ব। রক্তে যদি অ্যালকোহলের মাত্রা (‘ব্লাড অ্যালকোহল কনটেন্ট’) ০.০৫ শতাংশর কম না-থাকে, তাহলে মানুষের ক্রিয়াশীলতা বাড়ে। কেমন হয়, এমনটা করলে? অভিনব নিরীক্ষা কিন্তু! এই ভাবনা থেকে চারজন ঠিক করে, সারা সপ্তাহের কাজের দিনগুলোয় তারা রক্তে অ্যালকোহলের মাত্রা কিছুতেই ০.০৫ শতাংশর তলায় নামতে দেবে না।

ছুটির দিনে আর মদ খাবে না, মদ খেয়ে গাড়িও চালাবে না। কিন্তু পরিণতি হয় উলটো। তারা হয়ে পড়ে মদ্যাসক্ত বা অ্যালকোহলিক। সৃজনাত্মক ভাবনার আঁচ যেমন আশপাশে ছড়িয়ে পড়ে, তেমনই অনিয়ন্ত্রিত মদ্যপানের অভ্যাস তাদের আগের শপথ ভুলিয়ে দেয়। তারা একসময় মদ খেতে থাকে সবসময়। ‘বিএসি’ বা ‘ব্লাড অ্যালকোহল কনটেন্ট’ ক্রমশ তারা আরও বাড়াতে থাকে। এই নিয়ে পরিবারের কাছের মানুষের সঙ্গে তাদের কথা কাটাকাটি হয়, দূরত্ব বাড়তে থাকে।

এমনই আশ্চর্য কথাবস্তু অবলম্বনে ড্যানিশ চিত্রপরিচালক থমাস ভিনটারবার্গ বানিয়েছিলেন ‘অ্যানাদার রাউন্ড’, যা ‘ব্ল্যাক কমেডি ড্রামা’ ঘরানার প্রতিনিধি, এবং সিনেমাটি মুক্তি পেয়েছিল ২০২০ সালে। অ্যালকোহল, সৃজনশীলতা এবং নিয়ন্ত্রণরেখার বিচিত্র ত্রিভুজটি আমাদের কখনও আহ্লাদিত করে, কখনও-বা করে তোলে শঙ্কিত। জীবনের চেয়ে বড় নেশা কি অ্যালকোহলে রয়েছে?– হয়তো ঘুরিয়ে এমন প্রশ্নও তুলে ধরতে চায়। বস্তুত, মদ্যপান নিয়ে ভারতীয় সমাজে যে বিবমিষার অনুভব কাজ করে, তার কারণ নেশায় নিয়ন্ত্রণের অভাব। মদ্যপায়ী ব্যক্তি নেশার ঘোরে কী কী কাণ্ড ঘটাতে পারে, তার অজস্র নমুনা প্রাত্যহিক জীবনে আকছার দেখতে পাওয়া যায়।

জনপ্রিয় সিনেমাতেও মদ্যপানের অতি-স্বভাবকে প্রকটভাবে দেখানো হয়েছে। নেশার আওতায় বুঁদ হয়ে মানুষ অপরাধে প্রবৃত্ত হচ্ছে, এ-ও খুব স্বাভাবিক প্রতিফলন। গৃহহিংসা ও ধর্ষণের হার ভীষণভাবে বৃদ্ধি পাওয়ার নেপথ্যের কারণ হিসাবে এখন মদ্যপানকে চিহ্নিত করা হয়। আমাদের দেশে যেসব রাজ্য মদ্যপানের সংস্কৃতিকে জনজীবনের পরিসর থেকে বিদায় দেওয়ার পক্ষপাতী ও সংযমের পাঠ দিতে প্রয়াসী, সেক্ষেত্রেও যুক্তি– গৃহহিংসা, নারী নির্যাতন, ধর্ষণ-সহ একাধিক নারী নিগ্রহের ঘটনা।

সম্প্রতি, খবরে প্রকাশ, এই রাজ্যের ২৭ লক্ষ মানুষ মদ্যপানে আসক্ত। তথ্যের সত্যাসত্য নিয়ে চলছে রাজনৈতিক চাপানউতোর। এই আলোচনায় মদ ও শুল্কের সম্পর্কটি কি অনালোচিত থেকে যাবে?

Sangbad Pratidin News App

খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ

হাইলাইটস

Highlights Heading
  • অ্যালকোহল, সৃজনশীলতা এবং নিয়ন্ত্রণরেখার বিচিত্র ত্রিভুজটি আমাদের কখনও আহ্লাদিত করে, কখনও-বা করে তোলে শঙ্কিত।
  • জনপ্রিয় সিনেমাতেও মদ্যপানের অতি-স্বভাবকে প্রকটভাবে দেখানো হয়েছে।
Advertisement