shono
Advertisement
Indian Cricket Team

‘সেলেব সংস্কৃতি’ থেকে মুক্ত হবে ভারতীয় ক্রিকেট দল?

‘সেলেব সংস্কৃতি’ গোষ্ঠীজীবনের পক্ষে শুধুই কি আশীর্বাদ?
Published By: Biswadip DeyPosted: 04:43 PM Jan 16, 2025Updated: 04:43 PM Jan 16, 2025

ভারতীয় ক্রিকেট দলকে সংস্কারমুখী করে ‘স্টার কালচার’ কবল থেকে মুক্ত করার প্রয়াস দেখা যাচ্ছে। এই উদ্যোগ প্রশংসনীয়। আমরা সেই গাড়িই তো চাইছি, যা নিজ গুণে সমাদর কিনবে। অহেতুক ‘সেলেব’-ঠেলার কী দরকার?

Advertisement

প্রথিতযশা অ্যাড এজেন্সির সদস্যরা চলেছে প্রোডাক্টের রিসার্চ দেখাতে– ক্লায়েন্টের সমীপে। রিসার্চ করা হয়েছে একটি গাড়ির মার্কেটিং নিয়ে। যদি গাড়িটি বাজারে আসে, তাহলে কেন মানুষ তার প্রতি আগ্রহী হবে? এজেন্সির কৃতবিদ্য বিশেষজ্ঞরা সেটি হাতেকলমে প্রমাণ করতে চায়। এয়ারপোর্টে এই টিমের সঙ্গে হঠাৎ দেখা হয়ে গেল রিসার্চ উইংয়ের যে-মাথা, তার। কী কাজ করেছ দেখি? সে টেনে নেয় কাগজপত্র, পাওয়ার পয়েন্ট প্রেজেন্টেশন। সব খতিয়ে দেখে, মাথা যায় ঘুরে।

এ কী তৈরি করেছ তোমরা? ভর্ৎসনা করে ভদ্রলোক বলে টিমের উদ্দেশে– যদি ভেবে থাকো, এসব বকওয়াশ দেখিয়ে তোমরা ক্লায়েন্টকে জব্দ করে ফেলবে, তোমরা তাহলে মূর্খের স্বর্গে বাস করছ! দেখেই তো বোঝা যাচ্ছে– এই গাড়িতে কোনও বিশেষ গুণ নেই, যা বাজারের অন্য গাড়ির থেকে এই প্রোডাক্টকে আলাদা প্রতিপন্ন করবে। তাহলে? এই অবস্থায় আমরা সাজেস্ট করতে পারি, ‘সেলেব্রিটি এনডোর্সমেন্ট’-এর কথা। মানে, একজন সুপারস্টার যদি এই গাড়ির অ্যাড করে, তাহলে মধ্যবিত্ত জনতা আকৃষ্ট হবে, এবং গাড়ির মধ্যে চমৎকৃত করার মতো গুণ না-থাকলেও তা আর কারও চোখে পড়বে না। পোড়-খাওয়া মাথার এই তত্ত্বপ্রস্তাব বাস্তবে কাজেও লেগেছিল। ক্লায়েন্ট মুগ্ধ হয়েছিল এমন নতুন ধারার প্রেজেন্টেশনে। খুঁতো না হলেও সাদামাঠা প্রোডাক্ট, কিন্তু সেলেবকে দিয়ে এনডোর্স করিয়ে সেই অনাড়ম্বর প্রোডাক্টের দর বাড়িয়ে নেওয়া গেল! সুধীর মিশ্র-র ‘ইনকার’ সিনেমায় এমনই দেখানো হয়েছিল। সঙ্গে দেখানো হয়েছিল– কী করে বসের দেওয়া আইডিয়া, তারই দলের এক অধস্তন অন্যভাবে ব্যবহার করে বাজি মেরে দিয়েছিল, কিন্তু সে-আলোচনা অন্য। আমাদের এখনকার অন্বিষ্ট: ‘সেলেব ভ্যালু’।

‘সেলেব্রিফিকেশন’ বলে একটি কথা আছে। এর অর্থ, যে প্রক্রিয়ার মধ্য দিয়ে একজন সাধারণ মানুষ, বা একজন ‘পাবলিক ফিগার’ ক্রমশ হয়ে ওঠে সেলেব্রিটি। যার কথা শোনার জন্য, যাকে দেখার জন্য, যাকে একবার স্পর্শ করার জন্য উথালপাথাল হয়ে যাবে। উত্তমকুমার বা অমিতাভ বচ্চন, বা রজনীকান্ত অবশ্যই এমন ধারার নাম। কিন্তু গ্ল্যামার দুনিয়ার সাহচর্য না-থাকলে যে ‘সেলেব’ নির্মাণ সম্ভব নয়, এমনও নয়। মারাদোনা, বা মাইক টাইসন, বা শচীন, খেলায় অক্লান্ত পরিশ্রম করে হয়ে উঠেছেন সুপার সেলেব। কখনও রাজনীতিবিদ উন্নীত হতে পারেন এমন উচ্চতায়। যেমন, মহাত্মা গান্ধী বা নেলসন ম্যান্ডেলা। কখনও আবার কোনও লেখক অর্জন করেন সেলেব-স্থান। যেমন, রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর বা সলমন রুশদি। হাল আমলে সমাজমাধ্যমের কল্যাণে, প্ররোচনায়, সারবত্তাহীন প্রচারে, নিয়মিত আমরা নতুন সেলেবকে জন্মাতে ও বিস্মৃতির গভীরে চলে যেতে দেখছি। প্রশ্ন হল, ‘সেলেব সংস্কৃতি’ গোষ্ঠীজীবনের পক্ষে শুধুই কি আশীর্বাদ? সম্প্রতি ভারতীয় ক্রিকেট দলকে সংস্কারমুখী করে ‘সেলেব সংস্কৃতি’-র বলয় থেকে মুক্ত করার প্রয়াস শুরু হয়েছে। উদ্যোগ প্রশংসনীয়। আমরা সেই গাড়িই তো চাইছি, যা নিজ গুণে সমাদর কিনবে। অহেতুক ‘সেলেব’-ঠেলার কী দরকার?

Sangbad Pratidin News App

খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ

হাইলাইটস

Highlights Heading
  • ভারতীয় ক্রিকেট দলকে সংস্কারমুখী করে ‘স্টার কালচার’ কবল থেকে মুক্ত করার প্রয়াস দেখা যাচ্ছে। এই উদ্যোগ প্রশংসনীয়।
  • আমরা সেই গাড়িই তো চাইছি, যা নিজ গুণে সমাদর কিনবে।
  • অহেতুক ‘সেলেব’-ঠেলার কী দরকার?
Advertisement