shono
Advertisement

মূল্যবৃদ্ধির সঙ্গে লড়াই, গভীর অনিশ্চয়তার মুখে দেশ

বাজারে সাধারণ মানুষের পণ্য কিনতে এখন নাভিশ্বাস উঠছে।
Posted: 06:44 PM Jul 23, 2021Updated: 06:44 PM Jul 23, 2021

আমেরিকার অর্থনীতিতে সামান্য প্রাণ ফিরে এলেও তার শক্তি অনেক। ঠিক যেমন একই ফুটবলে পেলের পা লাগা আর আমার আপনার পা লাগার মধ্যে অনেকটা তফাত। তাই আমেরিকা এবং হয়তো আরও অন্যান্য ধনী দেশে কোভিড সামান্য দমন করা গেলে মন্দা জর্জরিত বাজার কিছুটা মাথা তুলে দাঁড়াতে পারে। বিশেষজ্ঞরা মনে করেন, এই মুহূর্তে এমনই কিছু হতে চলেছে। লিখছেন দীপঙ্কর দাশগুপ্ত

Advertisement

 

আমেরিকার অর্থনীতি কিছুটা ঘুরে দাঁড়ানোর লক্ষণ দেখাচ্ছে। সেখানে কোভিড সম্পূর্ণ দমন করা গিয়েছে, এমনটা না হলেও তারা মনে করছে যে, ২০২১ সালে তাদের বৃদ্ধির হার ৬ থেকে ৭ শতাংশ হয়ে যেতে পারে। অবশ্যই এই সংখ্যাটি অতিরিক্ত বেশি, কারণ সেদেশে বৃদ্ধির হার সাধারণত ২ থেকে ৩ শতাংশের আশপাশে ঘোরাফেরা করে। তবে কোভিডের আঘাতে ২০২০ সালে সেখানে বৃদ্ধির হার খুব বড়রকমের আঘাত খেয়ে নেমে গিয়েছিল (-) ৩.৫১ শতাংশে। অনেক নিচে পড়ে গিয়ে সামান্য ঘুরে দাঁড়ালেও শতাংশের হিসাবে বৃদ্ধির হারকে অনেক বেশি মনে হয়। যেমন ১ টাকা ১০ টাকার ১০ শতাংশ, কিন্তু ১০০ টাকার সামান্য ১ শতাংশ।

[আরও পড়ুন: এত ‘খিল্লি’ কেন! ওরা ফেল করলে কি বেশি খুশি হতেন?]

আমেরিকার অর্থনীতিতে সামান্য প্রাণ ফিরে এলেও তার শক্তি অনেক। ঠিক যেমন একই ফুটবলে পেলের পা লাগা আর আমার-আপনার পা লাগার মধ্যে অনেকটা তফাত। তাই আমেরিকা এবং হয়তো আরও অন্যান্য ধনী দেশে কোভিড সামান্য দমন করা গেলে মন্দা-জর্জরিত বাজার কিছুটা মাথা তুলে দাঁড়াতে পারে। বিশেষজ্ঞরা মনে করেন, এই মুহূর্তে এমনই কিছু হতে চলেছে। কিন্তু বাজার ঘুরে দাঁড়ালে তার হাত ধরে উঠে দাঁড়ায় তেলের দাম। ২০২০ সালের এপ্রিল মাসে ব্রেন্ট ক্রুড তেলের মূল্য নেমে হয়েছিল ব্যারেল প্রতি ২৩.৩৩ ডলার। তারপর হয়তো তেল সরবরাহকারী দেশগুলি থেকে জোগান কমে গিয়ে পুনর্বার তেলের দাম বাড়তে শুরু করে। ক্রমান্বয়ে বৃদ্ধি পেয়ে ২০২১-এর জুনে দাম দাঁড়িয়েছে ৭৩.০৬ ডলার। আমেরিকার অর্থনীতি ঊর্ধ্বমুখী হওয়ার ফলে বাজারে চাহিদা বেড়েছে। একই সঙ্গে তেলের দাম বৃদ্ধি পেয়ে উৎপাদনী খরচ বেড়েছে। ফলে চাহিদার জন্যও বটে, জোগানের জন্যও বটে মূল্যবৃদ্ধি ঘটছে। ঘটছে পৃথিবী জুড়েই।

আমেরিকাতে মূল্যবৃদ্ধি ঘটলে ফেডারেল রিজার্ভ ব্যাংক মুদ্রানীতির লাগাম টেনে ধরে। অর্থাৎ বাজারে অর্থের জোগান কমিয়ে সুদের হার বাড়িয়ে দেয়। সুদের হার উঠতে থাকলে ক্রেতা শ্রেণির ঋণ করে কেনাকাটার প্রবণতা কমে। চাহিদা কমে মূল্যবৃদ্ধির হার কমার লক্ষণ দেখা যায়। কিন্তু আমেরিকায় সুদের হার বেড়ে গেলে বিশ্বের সর্বত্র শেয়ার বাজারে বিনিয়োগকারীদের দুশ্চিন্তা জাগে। তারা অন্যান্য দেশ থেকে ডলার সরিয়ে নিয়ে গিয়ে বিনিয়োগ করে আমেরিকায়। যেমন, ভারতের শেয়ার বাজার থেকে ধরা যাক বিনিয়োগকারীরা আমেরিকাতে চলে গেল। এই ‘চলে যাওয়া’-র অর্থ ভারতীয় টাকার বিনিময়ে মার্কিন ডলার কেনা। তার ফলে ভারতীয় টাকায় ডলারের মূল্য বেড়ে যাবে। অন্যভাবে বললে, বিশ্ব বাজারে এর ফলে ভারতীয় মুদ্রার দাম কমে যাবে।

এদিকে আমরা আগেই বলেছি যে, তেলের ডলার মূল্য কিছুকাল ধরে বেড়ে চলেছে। উপরন্তু ২০২০ সালের মার্চ থেকে মে মাসের মধ্যে, যখন বিশ্ববাজারে অপরিশোধিত তেলের দাম কম ছিল, তখন ভারত সরকার পেট্রোলিয়ামের উপর শুল্ক বাড়িয়ে দিয়েছিল, যে-শুল্ক এখনও কমেনি। ২০২০-তে এই শুল্ক বৃদ্ধি নিয়ে খুব একটা অসুবিধা হয়নি। কারণ বিশ্ববাজারে তেলের দাম ছিল কম। কিন্তু এখন তেলের দাম দিন-দিন বাড়ছে। ফলে ভারতেও পেট্রোল, ডিজেল সবকিছুর মূল্য বেড়ে চলেছে। এদিকে পেট্রোল কিনতে ডলার লাগে। ডলারের মূল্যও বেড়ে গিয়েছে, যেটা আমরা আগেই দেখেছি। কাজেই একাধারে তেলের মূল্যবৃদ্ধি, অন্যদিকে যে-মুদ্রা দিয়ে তেল কিনতে হয় তারও মূল্যবৃদ্ধি ঘটে। ধনী দেশগুলির মূল্যবৃদ্ধির সমস্যা হাজার হাজার মাইল পেরিয়ে এদেশে এসে হাজির। পেট্রোল বা ডিজেলের দাম বাড়লে পণ্য পরিবহণের খরচ বাড়ে। ফলে বাজারে সাধারণ মানুষের পণ্য কিনতে এখন নাভিশ্বাস উঠছে। এই মূল্যবৃদ্ধি আরও কতদিন চলবে? কমার সম্ভাবনা আছে অদূর ভবিষ্যতে?

প্রশ্নটির উত্তর সহজ নয়। কারণ, আর ক’দিনের মধ্যেই কেন্দ্রীয় সরকার সপ্তম আয় কমিশনের সুপারিশ মতো সরকারি চাকুরে ও পেনশনধারীদের মহার্ঘ ভাতা বাড়াতে চলেছে। এই বিপুল অর্থ হাতে পেলে বাজারে চাহিদা বাড়বে। কেবল কোভিডের দাপটে দেশি পণ্যের জোগান কতটা বাড়বে বলা যায় না। চাহিদা বাড়ল, কিন্তু জোগান তেমন বাড়ল না। এর অর্থ কী? এই প্রশ্নের উত্তর দিতে অর্থনীতির ছাত্র হতে হয় না। তাই আমাদের অনুমান, নিত্য প্রয়োজনীয় থেকে শুরু করে অন্য সমস্ত জিনিসপত্রেরই দাম আরও উপরে উঠবে। শ্রমিক ইউনিয়নগুলির এই দাবি সরকারকে পূরণ করতেই হবে। তাই যে-অর্থ দিয়ে হয়তো বা কোভিড যুদ্ধে আরও এগনো যেত, সেই অর্থ সরকারের ভাঁড়ার থেকে উধাও হয়ে যাবে। এখানে কাউকেই দোষ দেওয়া চলে না। কোভিডের আক্রমণে সরকারি আয় কমে গিয়েছে, এটা সহজেই বোঝা যায়। এই অবস্থায় মহার্ঘ ভাতা কোথা থেকে আসবে, আমরা জানি না। কিছুদিন বাদে বকেয়া মহার্ঘ ভাতা দেওয়ার প্রশ্নও হয়তো উঠে আসবে। অবশ্য খরচ বাড়লে বেকারত্ব কিছুটা কমতে পারে। কিন্তু যতদিন না কোভিড বিদায় নিচ্ছে, বেকার মানুষকে কাজে পাঠিয়ে তার জীবনযাত্রার মানোন্নয়ন কতটা সম্ভব? বহু প্রশ্নই উঠে আসছে, যার কোনওটারই সহজ জবাব নেই। তবে একটা কথা নিশ্চিতভাবে বোঝা যায়। যে গভীর অনিশ্চয়তার মুখোমুখি আমরা এসে দাঁড়িয়েছি, তা অদূর ভবিষ্যতে নিশ্চিত রাস্তা দেখাবে না।

[আরও পড়ুন: মোদিবিরোধী রাজনীতির খেলায় পিকে’র গেম প্ল‍্যান কী?]

Sangbad Pratidin News App

খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ

Advertisement