shono
Advertisement

গার্হস্থ্য হিংসার অবসান কি শাস্তিতেই?

ভাবুন, ঠিক কী করলে এমন ঘটনার প্রবাহমানতায় ছেদ টানা যাবে৷ The post গার্হস্থ্য হিংসার অবসান কি শাস্তিতেই? appeared first on Sangbad Pratidin.
Posted: 10:15 PM Oct 20, 2016Updated: 04:45 PM Oct 20, 2016

মিতা, নমিতা কিংবা পায়েলের জন্য কলামের পর কলাম লেখা হচ্ছে৷ ফেসবুকের দেওয়াল লিখন থেকে শুরু করে মোমবাতি মিছিল হচ্ছে৷ কিন্তু আজ কোন অবস্থার পরিপ্রেক্ষিতে মহিলাদের এই পরিণতি হল, তা কেউ ভেবে দেখছেন কি? উত্তর খুঁজলেন উর্মি খাসনবিশ

Advertisement

বাঙালির মাতৃ আরাধনার বহর কাটেনি এখনও৷ শুধু বাঙালি কেন? ভারতের ইতিহাস বলছে মাতৃমূর্তি এবং মাতৃ আরাধনার প্রতি ভারতীয় সমাজ বরাবরই নিজেদের আনুগত্য দেখিয়েছে এসেছে৷ আর সেই ঘটনার সাক্ষী বহন করেছে ভারতের প্রত্নতাত্ত্বিক নিদর্শন৷ হরপ্পা-মহেঞ্জদরো হোক কিংবা দাক্ষিণাত্যের লক্ষ্মী দেবীর মূর্তি৷ সবই যেন প্রচ্ছন্নভাবে বুঝিয়ে দিয়েছে ভারত আজও ভীষণ রকম মাতৃতান্ত্রিক৷ যদিও দেশের পুরুষতান্ত্রিক সমাজব্যবস্থা সেই ভাবনার পথে অন্তরায়৷ সাম্প্রতিক সময়ের ঘটনার উপর আলোকপাত করলেই দেখা যাবে কেবল শারদোৎসবের সময়ই পশ্চিমবঙ্গে একাধিক মহিলার অস্বাভাবিক মৃত্যু হয়েছে কেবলমাত্র গার্হস্থ্য হিংসার কারণে৷ প্রেমে প্রত্যাখানের কারণে মহিলার মুখে অ্যাসিড ছোড়াই হোক বা গণধর্ষণ এই ঘটনাগুলিও যেন এখন আর মানুষের মনে নতুন করে কোনও আলোড়ন সৃষ্টি করতে পারেনা৷ ঘটনাগুলি এতটাই দৈনন্দিন হয়ে উঠেছে৷ যেন এমনটাই হওয়ার ছিল৷

সাম্প্রতিক সময়ে আচমকাই গার্হস্থ্য হিংসার ঘটনা নতুন করে আলোড়ন সৃষ্টি করায় ধর্ষণ এবং অ্যাসিড হামলার বাইরেও মহিলাদের উপর অন্য ধরনের যে অত্যাচার ঘটে চলেছে নিত্যদিন সেই ঘটনা প্রকাশ্যে এসেছে৷ মিতা মণ্ডল, পায়েল পাল – এই নামগুলো যেন পারিবারিক হিংসার ফলাফলের মুখ হয়ে উঠেছে আচমকা৷ এই গুটিকয়েক মহিলার মৃত্যু যেন হঠাৎ গোটা সমাজব্যবস্থাকে নাড়িয়ে দিয়ে গিয়েছে৷

অথচ পারিবারিক হিংসার এই ঘটনা কিন্তু নতুন নয়৷ পণ দিতে না পারায় বাড়ির বউয়ের গায়ে আগুন দিয়ে দেওয়া বা গলায় ফাঁস দিয়ে হত্যা করার ঘটনা নতুন নয়৷ আর এই ঘটনাগুলির ভিত্তিতেই ভারতীয় আইনের ধারায় ৪৯৮ এবং ৪৯৮ এ-এর মতো আইনগুলিকে মহিলাদের রক্ষাকবচ বানিয়ে দেওয়া হয়েছিল৷ কিন্তু সময় পাল্টেছে৷ নারীশক্তির উত্থানের কাহিনী শুনিয়েই তাই কমিয়ে দেওয়া হয়েছে এই আইনগুলির ক্ষমতা৷ কারণ হিসাবে দেখানো হয়েছে, আইনের অপপ্রয়োগের নিদর্শনগুলিকে৷

কিন্তু এতকিছুর পর যে ভাবনাগুলো ঘুরপাক খাচ্ছে, তা হল, একজন মহিলাকে তাঁর স্বামী এবং শ্বশুরবাড়ির সদস্যদের হাত থেকে বাঁচাতে হবে কেন? পুত্রবধূ কি পরিবারের সদস্য নন? আর যদি অত্যাচার করাটাই প্রবৃত্তি হয়, তবে এমন বিয়ের কী প্রয়োজন?

গার্হস্থ্য হিংসার সবচেয়ে বড় সমস্যা হল, এই ঘটনাগুলি সম্পর্কে মানুষ প্রাথমিক পর্যায় থেকেই অবগত থাকেন৷ কিন্তু এই বিষয় নিয়ে সরব হতে পারেন না৷ সামাজিক ভাবধারা কোনও এক নিঃশব্দ শিক্ষার মাধ্যমে নারীজাতিকে শিখিয়ে দিয়ে গিয়েছে, শশুরবাড়ি নিজেরই বাড়ি৷ আর সেই বাড়ির সম্মান রাখার দায়ভার কেবল মহিলাদের৷ যে কোনওরকম দুর্ব্যবহারের সঙ্গে শান্তভাবে মানিয়ে নেওয়াই এক এবং একমাত্র কর্তব্য হয় মহিলাদের৷ এর অন্যথা হওয়া মানে যেন মহিলাদের দোষ৷ আর এই শিক্ষা এবং সামাজিকতার চেনা ছকে চলতে গিয়েই হারিয়ে যান মিতা, পায়েল, নমিতা এবং নাজিয়ারা৷ স্বামী এবং তাঁর পরিবারের অত্যাচারের কথা বলা পর্যন্ত যাবেনা৷ এক নৃশংস পরিবারের সম্মান রাখতে গিয়ে প্রাণ খোয়ান এঁরা৷

অথচ এরপরও আমরা সচেতন হব না৷ এমন কোনও ঘটনার সাক্ষী থাকলে অন্য লোকের জীবনের ব্যক্তিগত সমস্যা বলে অবহেলা করব৷ এমন ঘটনা ঘটতে দেখলে এগুলো নিয়ে প্রকাশ্যে মুখ না খোলার পরামর্শ দেব৷ প্রশাসনকে এই কথা বলার সাহস দেব, “পারিবারিক সমস্যা এগুলো৷ নিজেদের মধ্যে আলোচনা করে মিটিয়ে নিতে চেষ্টা করুন৷” আর অপেক্ষা করব আর এক মিতা, পায়েল কিংবা নমিতাকে মৃত্যুর মুখে চলে যেতে৷

একটা কথা খুব স্পষ্টভাবে এতদিনে বুঝে যাওয়া দরকার যে গার্হস্থ্য হিংসার ফলে একদিনে কারও মৃত্যু হয় না৷ প্রাথমিক পর্যায়ে ব্যাপারটিকে থামানো হয় না বলে, তা বেড়ে চলে ক্রমাগত৷ আর এই হিংসা বেড়ে চলার পিছনে সমাজের প্রচ্ছন্ন মদত রয়েছে৷ এই ঘটনাগুলির বিরুদ্ধে প্রথম থেকেই সোচ্চার না হয়ে, চরম পর্যায়ের জন্য অপেক্ষা করাটাই সেই মদত৷

আজ মিতা, নমিতা কিংবা পায়েলের জন্য কলামের পর কলাম লেখা হচ্ছে৷ ফেসবুকের দেওয়াল লিখন থেকে শুরু করে মোমবাতি মিছিল হচ্ছে৷ কিন্তু আজ কোন অবস্থার পরিপ্রেক্ষিতে মহিলাদের এই পরিণতি হল, তা কেউ ভেবে দেখছেন না৷ ভেবে দেখছেন না, প্রাথমিক পর্যায়ে যদি রুখে দাঁড়ানো যেত তবে হয়তো প্রাণে বেঁচে যেত ওঁরা৷

তাই এখন স্টেটাস দিয়ে লাইকপ্রার্থী না হয়ে একটু ভাবুন৷ ভাবুন, ঠিক কী করলে এমন ঘটনার প্রবাহমানতায় ছেদ টানা যাবে৷ মিতারা একা একাই প্রতিমা দর্শন করতে যেতে পারবে৷ খাপ পঞ্চায়েত পায়েলের মৃত্যুকে আত্মহত্যা বলে চালিয়ে দিতে পারবে না৷ আর গার্হস্থ্য হিংসা নামক শব্দটি শব্দকোষ থেকে মুছে যাবে চিরকালের নামে! জানি একদিনে ঘটনাটি ঘটিয়ে ফেলা সম্ভব নয়৷ তবু প্রাথমিক পর্যায় থেকে শুরু করে একটা চেষ্টা তো করে দেখতেই পারি আমরা! মেয়েগুলোর মৃত্যুর জন্য অপেক্ষা না করে, তাঁদের বেঁচে থাকাকালীনই তাঁদের সুরক্ষায় একটু সচেতন হতে পারি আমরা৷ এতটুকু সচেতনতা বোধ তো আমার আপনার কাছে থেকে আশা করতেই পারে মিতা, নাজিয়া, পায়েলরা৷ আমরা কি ওদের হয়ে এতটুকু করতে পারি না?

The post গার্হস্থ্য হিংসার অবসান কি শাস্তিতেই? appeared first on Sangbad Pratidin.

Sangbad Pratidin News App

খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ

Advertisement