shono
Advertisement

এক দেশ, অগত্যা এক আইন!

তিন তালাক ও বহুগামিতাকে হুকুমত-এ-পাকিস্তানও সায় দেয় না৷ তাহলে বিশ্বের বৃহত্তম গণতান্ত্রিক দেশ ভারতে কেন নিষিদ্ধ হবে না এগুলি? The post এক দেশ, অগত্যা এক আইন! appeared first on Sangbad Pratidin.
Posted: 09:04 PM Oct 16, 2016Updated: 04:07 PM Oct 16, 2016

গোটা দেশে একই আইন থাকবে৷ সব জাতি-ধর্ম নির্বিশেষে সেই অভিন্ন দেওয়ানি বিধি মানতে হবে৷ তবে তার জন্য দেশের জনগণের কাছে মতামত চাইছে বিজেপিশাসিত কেন্দ্রীয় সরকার৷ তাতেই রে রে করে উঠেছে সর্বভারতীয় মুসলিম পারসোনাল ল’ বোর্ড৷ বিরোধিতা করছে কংগ্রেসও৷ এমন অবস্থায় কী করবেন মোদি? লিখছেন শুভময় মণ্ডল

Advertisement

দেশের ভিতরেই গৃহযুদ্ধ বাধিয়ে দেওয়ার তাল করেছেন নরেন্দ্র মোদি!

এমন কথা শুনলেই মোদিভক্তরা রে রে করে উঠবেন বৈকি৷ কিন্তু আপাত দৃষ্টিতে দেখতে গেলে অভিন্ন দেওয়ানি বিধি চালু করা নিয়ে কেন্দ্রীয় সরকারের পদক্ষেপে এখন দেশের ভিতরেই অন্তর্দ্বন্দ্ব প্রকাশ্যে চলে আসছে৷ আগে জানা দরকার, এই অভিন্ন দেওয়ানি বিধি খায় না মাথায় দেয়! দেশের সব ধর্ম-জাতি নির্বিশেষে একই আইনের ছাতার তলায় আনার পদ্ধতিই হল অভিন্ন দেওয়ানি বিধি৷ গোটা দেশেই ধর্মভেদে আলাদা আলাদা আইন চালু রয়েছে৷ হিন্দুদের জন্য আলাদা দেওয়ানি বিধি৷ ইসলাম ধর্মাবলম্বীদের জন্য আলাদা৷ খ্রিস্টানদের জন্য আলাদা৷ এইভাবে দেখতে গেলে সব ধর্মাবলম্বীদের জন্য পৃথক আইন চালু রয়েছে ভারতে৷

হিন্দু বা খ্রিস্টানদের বিষয়ে জানা নেই, তবে অভিন্ন দেওয়ানি বিধি বা ইউনিফর্ম সিভিল কোড প্রথা চালু করার আগে খেপে গিয়েছে দেশের মুসলিম সম্প্রদায়ের মানুষ৷ খেপারই কথা, কারণ কেন্দ্রে ক্ষমতায় আসার পর থেকেই বিজেপির হিন্দুত্ববাদী এজেন্ডা প্রকট থেকে প্রকটতর হয়েছে৷ তা সে অযোধ্যায় ফের রামমন্দির নির্মাণ ইস্যু মাথাচাড়া দেওয়াই হোক কিংবা গোহত্যা নিষিদ্ধই হোক৷ সবেতেই নরেন্দ্র মোদির উপর চটে রয়েছে মুসসিম সম্প্রদায়ের মানুষ৷ প্রকাশ্যে, সোশ্যাল মিডিয়ায় সর্বত্রই মোদির মুণ্ডপাত করতে উঠেপড়ে লেগেছে তাঁরা৷ এবার মোদি হঠাও এজেন্ডায় ঘৃতাহুতি করল অভিন্ন দেওয়ানি বিধি চালুর সিদ্ধান্ত৷ অল ইন্ডিয়া মুসলিম পারসোনাল ল’ বোর্ড সবার আগেই সরকারের তীব্র সমালোচনায় মুখর হয়েছে৷ তিন তালাক, বহুগামিতার মতো স্পর্শকাতর ইস্যুতে হাত দিলে কেন্দ্রেরই হাত পুড়বে বলে হুঁশিয়ারি দিয়ে দিয়েছে সর্বভারতীয় মুসলিম পারসোনাল ল’বোর্ডের নেতা-মাতব্বররা৷ কারণ, অভিন্ন দেওয়ানি বিধি চালু হলে সবার আগে বিলুপ্ত হবে শরিয়ত আইনে উল্লেখিত তিন তালাক ও বহুগামিতা৷ শরিয়ত আইন মেনেই নীতি-নির্ধারণ করে মুসলিম পারসোনাল ল’ বোর্ড৷ অভিন্ন দেওয়ানি বিধি চালু হলে গুরুত্ব হারাবে এই বোর্ড৷ আর তাতেই লম্ফঝম্ফ শুরু হয়েছে নেতা-মাতব্বরদের৷

কিন্তু সরাসরি সংঘাতের পথে যায়নি সরকার৷ তিন তালাক, বহুগামিতা বিষয়গুলি নিয়ে জনমত সংগ্রহ করতে চাইছে কেন্দ্র৷ কেন্দ্রীয় মন্ত্রী বেঙ্কাইয়া নাইডু বলেও দিয়েছেন, সরকার জোর করে কোনও কিছু জাতি-ধর্ম নির্বিশেষে সাধারণ মানুষের উপর চাপিয়ে দেবে না৷ অভিন্ন দেওয়ানি বিধি চালু নিয়ে জনগণের মতামত চেয়েছেন৷ আর তাতেই সেরা চাল খেলেছেন মোদি৷ জনগণ, বিশেষ করে মুসলিম মহিলারা তিন তালাক, স্বামীদের বহুগামিতা থেকে মুক্তি পেতে অভিন্ন দেওয়ানি বিধিতে আপত্তি জানাবেন না তা মোদি বিলক্ষণ জানেন৷ মোদির হাতে আরও তাস রয়েছে৷ কারণ দেশের মধ্যে গোয়াই একরাত্র রাজ্য যেখানে আগে থেকেই ইউনিফর্ম সিভিল কোড চালু রয়েছে৷ আর গোয়া যে বর্তমানে বিজেপিশাসিত রাজ্য তা সবাই জানে৷ ল’ বোর্ডের অভিন্ন দেওয়ানি বিধিতে আপত্তি থাকলে গোয়ার উদাহরণ দিতে পারেন মোদি৷ সেখানকার ইসলাম ধর্মাবলম্বীদের সমস্যা তো হচ্ছে না, তাহলে শরিয়ত আইনকে কেন আঁকড়ে ধরে রাখতে চাইছে ল’ বোর্ড?

অভিন্ন দেওয়ানি বিধিতে আপত্তি রয়েছে দেশের সবচেয়ে প্রাচীন রাজনৈতিক দল কংগ্রেসের৷ কংগ্রেসের বক্তব্য, অভিন্ন দেওয়ানি বিধি প্রণয়ন করে আরেকটা ক্রুসেড বাধাতে চাইছেন মোদি অ্যান্ড কোং৷ ধর্মীয় ভাবাবেগে আঘাত দিয়ে দলের হিন্দুত্ববাদী এজেন্ডাকেই গুরুত্ব দিচ্ছেন মোদি৷ কিন্তু বরাবরের মতো এবারেও চালে ভুল করেছে শতাব্দীপ্রাচীন দল কংগ্রেস৷ এই কথা বলার আগে ইতিহাসটা একবার ঘেঁটে দেখা উচিত ছিল রাহুল গান্ধীদের৷ কারণ, স্বাধীন ভারতের প্রথম প্রধানমন্ত্রী জওহরলাল নেহেরুই প্রথম অভিন্ন দেওয়ানি বিধি চালু করার পক্ষে সওয়াল করেছিলেন৷ কিন্তু ব্রিটিশ উত্তর ভারতে বিভিন্ন ধর্মের মানুষকে চটিয়ে এই বিধি চালু করার পক্ষে সায় মেলেনি সংসদে৷ তাই তা সিন্দুকেই তোলা ছিল৷ মোদি শুধু ধুলো পড়া দস্তাবেজ ফের খুলতে চেয়েছেন৷ নিজেদের ইতিহাস ভুলে যাওয়া কংগ্রেসের বরাবরেরই রোগ৷ ঠিক তেমনই ভোটব্যাঙ্কের রাজনীতির অভিযোগ তোলা কংগ্রেস এটাও ভুলে গেল, বিজেপি মুসলিম ভোট কম পায়নি লোকসভা ভোটে৷ যদি অভিন্ন দেওয়ানি বিধি চালু হয় তাহলে সব ধর্মের মানুষই কেন্দ্রের উপর চটবে৷ তিন তালাক ও বহুগামিতাকে হুকুমত-এ-পাকিস্তানও সায় দেয় না৷ তাহলে বিশ্বের বৃহত্তম গণতান্ত্রিক দেশ ভারতে কেন নিষিদ্ধ হবে না এগুলি? যাঁরা অসহিষ্ণুতা ইস্যুতে এতদিন চিল চিৎকার জুড়েছিলেন, সেই বিদ্বজ্জনদেরও দেখা যাচ্ছে অভিন্ন দেওয়ানি বিধি নিয়ে নীরব থাকতে৷ কেন মুক্তমনারাই বা নীরব যেখানে মুসলিম মহিলাদের তিন তালাকের শাপমোচন করতে চাইছে কেন্দ্র?

সার্জিক্যাল স্ট্রাইক থেকে শুরু করে সব পদক্ষেপেই মোদি সরকারকে নিশানায় দাঁড় করিয়েছে বিরোধীরা৷ এবার কেন্দ্রর সঙ্গে ল’ বোর্ডের সংঘাতে জড়াতে চাইছে না কেউ৷ কংগ্রেস সরাসরি বিরোধিতা করলেও ধরি মাছ না ছুঁই পানি মত বামপন্থীদের৷ মুখোশধারী মুক্তমনাদের নিয়ে আর কিছু বলার নেই৷ তাঁরা হোমেও লাগে না যজ্ঞেও না৷ তবে এখন বিড়ালের গলায় ঘণ্টা বাঁধবে কে? অভিন্ন দেওয়ানি বিধি দেশে আদৌ চালু করতে পারবেন কি না মোদি তা তো সময়ই বলবে৷ কিন্তু এমন অসাধ্যসাধন করতে পারলে তাঁর ছাপান্ন ইঞ্চি ছাতি ফুলে দ্বিগুণ হতে বেশি দেরি হবে না!

The post এক দেশ, অগত্যা এক আইন! appeared first on Sangbad Pratidin.

Sangbad Pratidin News App

খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ

Advertisement