shono
Advertisement

সম্পাদকীয়: ‘মার্কস হারলেন, রবীন্দ্রনাথ জিতলেন?’

মার্কসের মতোই রবীন্দ্রনাথকে প্রতিষ্ঠান বানানোর চেষ্টা হয়, তবে রবীন্দ্রনাথের মানে বদলানো সহজ হল না।
Posted: 02:00 PM May 09, 2021Updated: 02:00 PM May 09, 2021

গল্পটা অত সহজ নয়। নির্বাচনে ভোট দেন কোটি কোটি মানুষ। তাঁরা অনেকেই রবীন্দ্রনাথের নাম শুনেছেন, ছবি দেখলে চিনতে পারতে পারেন, নাম বলতে না-ও পারেন। তবু বড়-ছোট শহরের বাইরে রবীন্দ্রনাথের গানের সঙ্গেও খুব পরিচয় আছে বলে মনে হয় না। তবে মার্কসের আদর্শ যেমন দীর্ঘ উপেক্ষার ফলে অর্থশূন্য হয়ে পড়েছিল, রবীন্দ্রনাথের (Rabibdranatha Tagore) ক্ষেত্রে হয়তো সেটা হয়নি। ২৫ বৈশাখ উপলক্ষে বিশেষ প্রবন্ধ, লিখলেন রংগন চক্রবর্তী

Advertisement

২৫ বৈশাখের অভিবাদন গ্রহণ করুন। বাপ রে বাপ, কী একটা সপ্তাহই না গেল! দোসরা মে ছিল পশ্চিমবঙ্গ বিধানসভার ভোটের ফল। জাতীয় রাজনীতি আর ভারতের ভবিষ্যতের নিরিখে দেখতে গেলে বোধহয় এই প্রদেশে স্মরণকালের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ নির্বাচন। এই সপ্তাহজুড়েই ছিল তিনজন মানুষের জন্মতিথি, যে তিনজন আবার সামাজিক, রাজনৈতিক, সাংস্কৃতিক দিক থেকে বাংলার জীবনে সবচেয়ে বেশি প্রভাবশালী: সত্যজিৎ রায় (২ মে), কার্ল মার্কস (৫ মে) এবং আজ রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর (৯ মে)।

‘নিজের ভাষা ভিন্ন আর ভাষা জানা নাই’
যেহেতু এই বছর ছিল সত্যজিতের ১০০তম জন্মদিন, তাঁকে নিয়ে উৎসাহ ছিল বেশি। ভোটগণনার ফলাফলের ফাঁকে ফাঁকে নানা চ্যানেলে তাঁকে নিয়ে কথা হচ্ছিল। ভোটের ‘অভিযান’, ‘মহানগর’ বিজেপি-শূন্য, ‘হীরক রাজার দেশে’, মাস্কবিহীন ‘জনঅরণ্য’ এইরকম নানা কথা দিয়ে তাঁকে রাজনৈতিক চিত্রপটের সঙ্গে যুক্ত করা হচ্ছিল। মমতা যেন বাংলা দেখিয়ে ‘সোনার কেল্লা’-র লালমোহনবাবুর মতো বলছেন, ‘এটা আমার’। এই নির্বাচনকে অনেকে হিন্দি সম্প্রসারণবাদের বিরুদ্ধে বাঙালির আত্মপরিচয় রক্ষার লড়াই হিসাবে দেখেছেন। সেটা একেবারে উড়িয়ে দেওয়ার মতো যুক্তিও নয়। মনে পড়ে না, এর আগে আর কোনও নির্বাচনে বাংলা ভাষা ও সংস্কৃতি এইভাবে লড়াইয়ের একেবারে কেন্দ্রে উঠে এসেছিল কি না। নির্বাচনের পরে ও আগে সোশ্যাল মিডিয়ায় আমরা যে নানারকম ‘মিম’, কার্টুন দেখেছি, তার মধ্যে একটা ছিল রোমান সাম্রাজ্যের বিরুদ্ধে একটি ছোট জনপদের লড়াইয়ের গল্প, বিখ্যাত অ্যাসটেরিক্স আর ওবেলিক্স সিরিজের আখ্যান। তারা ছিল ‘গল’ (Gaul), সেই অনুসরণে বলা হচ্ছিল বাংলা যেন, ‘Ben-Gaul’। বাঙালির সাংস্কৃতিক প্রতিরোধের গল্পে অবশ্যই সত্যজিতের ভূমিকা থাকতে পারে, কিন্তু এই সাম্প্রতিক নির্বাচনের সঙ্গে মার্কস ও রবীন্দ্রনাথের যোগ ছিল আরও বেশি প্রত্যক্ষ।

[আরও পড়ুন: সম্পাদকীয়: কোভিড ২.০ এবং ঠেকে শেখা]

ছিনু সর্বজয়ী। হনু সর্বহারা
ছয়ের দশকের জনপ্রিয় স্লোগান ছিল, ‘আমরা কারা? সর্বহারা’। বিখ্যাত ‘ইন্টারন্যাশনাল’ গানের লাইন ছিল, ‘ছিনু সর্বহারা, হব সর্বজয়ী’। কিন্তু এই নির্বাচনে তিন দশকেরও বেশি সময় ধরে এই প্রদেশ শাসন করা এবং স্বাধীনতার আগে ও পরের প্রায় এক শতাব্দী ধরে বাংলার সামাজিক-সাংস্কৃতিক-রাজনৈতিক জীবনে জড়িয়ে থাকা কমিউনিস্ট দল আসনশূন্য হয়ে গেল। ১৯৪৮-এর পর থেকে এই প্রথম বিধানসভায় কোনও কমিউনিস্ট সদস্য থাকবেন না। ভেবে দেখবেন, ঘটনাটা কিন্তু আমাদের ইতিহাসের পরিপ্রেক্ষিতে প্রায় অবিশ্বাস্য! বলা হতেই পারে যে, নির্বাচনে হেরে যাওয়া মানেই একটা দল উৎখাত হয়ে যাওয়া নয়। হয়তো নয়। কিন্তু মনে থাকতে পারে যে, ৫০ বছর আগে নকশাল আন্দোলনের সময় কমিউনিস্ট পার্টির ভিতরে মতবিরোধের একটা প্রধান কারণ ছিল নির্বাচনভিত্তিক রাজনীতি নিয়ে দ্বন্দ্ব। নকশালপন্থীরা নির্বাচন বয়কটের ডাক দিয়েছিলেন। লেনিনকে উদ্ধৃত করে বলেছিলেন, ‘পার্লামেন্ট শুয়োরের খোঁয়াড়।’ ‘সংখ্যার দিক থেকে গরিষ্ঠ’ মার্কসবাদীরা নির্বাচনের পথেই এগিয়েছিলেন এবং রাজ্যে ক্ষমতা দখল করেছিলেন। একথা বললে বোধহয় কেউ আপত্তি করবেন না যে, নির্বাচন এবং সরকারভিত্তিক রাজনীতি মুখ্য মার্কসবাদীদের প্রধান বা একমাত্র কর্মক্ষেত্র হয়ে উঠেছিল। কাজেই নির্বাচনে হারা অবশ্যই অস্তিত্বের সংকট।

শুনেছিলাম যে, গত লোকসভা নির্বাচনে মার্কসবাদীদের অনেকেই দলের নির্দেশে হিন্দু্ত্ববাদের পক্ষে ছাপ দিয়েছিলেন। বিশ্বাস করতে কষ্ট হয়েছিল। এবার যখন সাম্প্রদায়িক, অগণতান্ত্রিক, হিংস্র দাঙ্গাবাজ রাজনৈতিক শক্তি বাংলার উপর ঝাঁপিয়ে পড়ল তখন ভেবেছিলাম, যে এবার অন্তত, তৃণমূলের সঙ্গে যত দ্বন্দ্বই থাক, বিজেপিকে আটকাতে নির্বাচনে অংশ না নিয়ে মার্কসবাদীরা সর্বনাশ আটকানোর চেষ্টা করবে। সেটা হল না। বাম মহলে যুক্তি শুনলাম, যে তৃণমূল স্থানীয় স্তরে দলীয় কর্মীদের উপর চরম অত্যাচার করেছে, করছে, তাকে আটকাতে নির্বাচন জিততে হবে। সত্যি বলতে কী, একটু অবাকই লেগেছিল। একটি মার্কসবাদী দল, যারা জনগণকে নিয়ে বিপ্লব করবে, তারা নির্বাচনে না জিতলে প্রতিরোধ তৈরি করতে পারছে না, এটা কীরকম ব্যাপার! কারণ আমরা তো দেখেছি, তেভাগা, খাদ্য আন্দোলন, উদ্বাস্তু আন্দোলন, শ্রমিক আন্দোলন, ছাত্র আন্দোলন, কৃষক আন্দোলনের সফল যুগ ছিল ১৯৬৭-র আগের সময়জুড়ে, তখন তো বামেরা সরকারে ছিল না। তবে?

তার মানে কি সরকার-নির্ভরতা বাংলার মার্কসবাদীদের এক ধরনের অন্তঃসারশূন্য সংগঠনে পরিণত করেছে? সরকারি মেশিনারি, আমলা, পুলিশ ছাড়া আর যারা কিছু করতে পারে না। উত্তরটা অত সহজ না হতেও পারে, কারণ সরকারনির্ভরতা মানেই জনসাধারণের সঙ্গে দূরত্ব, এটা না-ও হতে পারে। কেরলের নির্বাচনে বামেদের বিপুল জয় আমাদের মার্কসবাদ, কমিউনিজম নিয়ে আরও জটিল কিছু প্রশ্নের মুখোমুখি দাঁড় করায়।

বিপ্লব চলছে, Zানতি পারো না
আমরা যেভাবে সমাজকে তৈরি করেছি হাজার বছর ধরে তার গোড়ার কথাই হল প্রতিষ্ঠান। আর এই প্রতিষ্ঠান সবসময়ই কিছু নীতির কথা বলে, যা আসলে মেনে চলা সম্ভব নয়। মজাটা হল, এই প্রতিষ্ঠান তার শক্তি পায় আমাদের অপারগতা থেকে, কারণ সে আমাদের অপরাধী করে তুলতে পারে, ভীতু করে তুলতে পারে, মিথ্যাচারী করে তুলতে পারে। যেমন ধরুন, বিয়ে। বহু দম্পতি জানে যে, আজীবন একগামিতা কঠিন, প্রায় অসম্ভব। যত পা পিছলোয়, তারা নিজেকে অপরাধী ভাবে, মুখে আরও বেশি বিবাহ নামক প্রতিষ্ঠানের জয়গান গায়, এক কঠিন দেউলিয়া জীবন কাটায়। কৌমার্য ব্রত এইভাবে আমরা দেখি অনেক ধর্মযাজকদের যৌনরাক্ষস করে তোলে, মুখে পবিত্রতার বাণী চলতে থাকে। প্রশ্ন হল, মার্কসবাদকে এইভাবে ‘প্রাতিষ্ঠানিক’ করে তোলা হয়েছিল কি? যদি আপনারা গত ৫০ বছরের মার্কসবাদী মুখপত্রের সম্পাদকীয় পাতার লেখা পড়েন, তবে দেখবেন তার ভাষা, আখ্যান ভয়ানকভাবেই শাস্ত্রীয় টীকার মতো, যেন আরেক সংস্কৃত। কেবল নির্বাচনবাদীদের দোষ দিয়ে লাভ নেই, বয়কটবাদীদের রাগী সম্পাদকীয়তেও সেই একই প্রাতিষ্ঠানিক অচলায়তনের নির্মাণ।

মার্কসের বয়স দুশো পেরিয়েছে, মার্কসবাদের বয়সও কম নয়। সময়টা বদলে গিয়েছে। মার্কস অবশ্যই অসীম গুরুত্বপূর্ণ অর্থনৈতিক শোষণের মূল সূত্রটা ধরিয়ে দিয়েছিলেন, তাই তিনি আজও আছেন, থাকবেন। কিন্তু সবটা তো তিনি পুরোটা বোঝেননি, সম্ভব ছিল না। তিনি জন্মেছিলেন এক সময় যখন শ্রমিক ছিল সমাজের চালিকাশক্তি, আজ তাঁদের ভূমিকা বিপন্ন। মেয়েরা পিতৃতন্ত্রকে প্রশ্ন করছে, আমাদের দেশে শ্রেণির পাশাপাশি সম্প্রদায়, ধর্মের কারণে অসাম্য ইত্যাদি সামনে উঠে আসছে। রাজনীতির ক্ষেত্রে কমিউনিজমের একনায়কতন্ত্রের ধারণা নানা গণতান্ত্রিক আন্দোলনের পক্ষে ক্ষতিকর কি না, প্রশ্ন উঠছে। বিশাল পার্টি মানেই ‘দমনযন্ত্র’– এই ধারণাও মাথাচাড়া দিচ্ছে। শ্রমিক শ্রেণির ক্ষমতা দখল, সশস্ত্র বিপ্লবের সম্ভাব্যতা শুধু নয়, কাম্যতা নিয়েও মানুষ সন্দিগ্ধ। কিন্তু বাংলায় কমিউনিস্টদের মধ্যে আমরা এই নিয়ে তত আলোচনা দেখিনি। তাঁরা ক্ষমতার ওম, দাপটের নেশায় বুঁদ ছিলেন।

[আরও পড়ুন: সম্পাদকীয়: টু ছিঃ অর নট টু ছিঃ]

আসলে, এই মুহূর্তে রাষ্ট্র, স্বায়ত্তশাসন, পঞ্চায়েত এইগুলো নিয়ে বড় আলোচনার পাশাপাশি জরুরি প্রয়োজন হল সমাজ পরিচালনা বা গভর্নেন্সের। বিপ্লব কিন্তু রোজ ঘটছে, আমাদের বামপন্থীরা লক্ষ করছেন না, কারণ তাঁরা তাতে বিশ্বাস করেন না। যে মেয়েরা সাইকেল চালিয়ে স্কুলে যাচ্ছে, বিয়ে না করে বাড়ির লোককে তাদের পড়াতে বাধ্য করছে, তারা যে বিপ্লব করছে–তার গুরুত্ব কিন্তু কোনও রেভোলিউশনের তুলনায় কম নয়, বরং হয়তো বেশি স্থায়ী। এই মুহূর্তে কৃষক আন্দোলন, দলিত আন্দোলন– নানা আন্দোলনের কথা মাথায় রেখেও বলতে পারি, আমাদের বাম-ডান সব রাজনীতি বড় বেশি ‘পিতৃতান্ত্রিক’, এটা একটা সমস্যা।

এইসব বদলের মুখে দাঁড়িয়ে আমাদের বাংলার বামপন্থীরা আরও বেশি বেশি করে প্রাতিষ্ঠানিক মন্ত্র আঁকড়ে ধরেছেন, ক্ষমতা বজায় রাখার সরকারি যন্ত্র ব্যবহার করেছেন। মূল কোরাপশন হল: রাজনৈতিক দেউলিয়াপনা। যত দূর দেখি, বুঝি, কেরলের বামেরা গভর্নেন্সের উপর জোর দিয়েছেন, প্রাতিষ্ঠানিক অচলায়তনে আটকে না থেকে নানা বাস্তব সংকটে হাত লাগিয়েছেন, ফল পেয়েছেন। বাংলার বামেরা কিন্তু একসময় সংকটে পাশে দাঁড়িয়েই জনপ্রিয় হয়েছিলেন। আজকে নিজেদের ভেঙে, বহুবাদী, বহুমুখী গণতান্ত্রিক নতুন রাজনীতি কি তাঁরা মার্কসকে জন্মদিনে উপহার দিতে পারবেন? মনে রাখা দরকার, এককালীন সোভিয়েত এলাকায় মানবিক অধিকার হানি সত্ত্বেও এখনও যে কিছুটা মার্কসবাদী আদর্শের সম্মান টিকে আছে তার কারণ তাঁরা স্বাস্থ্য, শিক্ষা নিয়ে বিশালভাবে কাজ করেছিলেন। সেটা মানুষ মনে রেখেছে।

এত রক্ত কেন?
আজ পঁচিশে বৈশাখ। জয়ের পর মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় ঘোষণা করেছেন যে, এখন বিজয়োৎসব হবে না, তবে তিনি মানুষকে নিজের মতো করে রবীন্দ্রজয়ন্তী পালন করতে বলেছেন। মমতার আত্মপরিচয়ে, তাঁর বক্তৃতায় রবীন্দ্র-অনুগামী ছাপ সুস্পষ্ট। এই নির্বাচনে তৃণমূলের একটি স্লোগান ছিল: ‘জয় বাংলা’। স্মরণে থাকতে পারে পাকিস্তানের ধর্মভিত্তিক দমনমূলক নাগরিক পরিচয়ের বিরুদ্ধে ১৯৭১ সালে স্বাধীন বাংলাদেশের আন্দোলনের স্লোগানও ছিল ‘জয় বাংলা’।

মার্কসের মতোই রবীন্দ্রনাথকে প্রতিষ্ঠান বানানোর চেষ্টা নতুন কিছু নয়। স্বাধীনতার পর থেকেই ভারত রাষ্ট্র তার সাংস্কৃতিক পরিচয় বলে যে কিছু প্রতীক বা উপাদান ব্যবহার করেছিল, রবীন্দ্রনাথের সৃষ্টি তার মধ্যে প্রধান ছিল। রবীন্দ্রনাথ নিজে ছিলেন জাতীয়তাবাদের কঠোর সমালোচক, কিন্তু তাতে কারও কিছু যায় আসেনি। এছাড়াও কিছু প্রতিষ্ঠান, যেমন বিশ্বভারতী ইত্যাদি রবীন্দ্রনাথের প্রাতিষ্ঠানিক মাহাত্ম্য সংরক্ষণে মরিয়া ছিল, কারণ এতে বহু লোকের প্রতিফলন-অর্জিত ক্ষমতা টিকেছিল। বাংলা বিজয়ে নেমে হিন্দি জাতীয়তাবাদ রবীন্দ্রনাথকে নিয়ে একটু গোলমালে পড়েছিল। মনে থাকতে পারে, একদম প্রথম দিকের সোশ্যাল মিডিয়ার প্রচারে তাঁকে ‘চরিত্রহীন’ বলে দেখানোর চেষ্টা হয়েছিল। খুব সুবিধা না হওয়ায় ‘রবিন্দরনাথ’ তৈরি হল। আসলে ‘মিথ’ তৈরির কায়দা হল একটা পুরনো অবয়বে নতুন মানে ভরে দেওয়া। কিন্তু রবীন্দ্রনাথের মানে বদলানো সহজ হল না।

তাহলে ঘটনাটা কী হল? ৫ মে যাঁর জন্মদিন, সেই মার্কস সাহেব হারলেন আর আজ যাঁর জন্মদিন, সেই রবীন্দ্রনাথ জিতলেন এই নির্বাচনে? গল্পটা অত সহজ নয়। নির্বাচনে ভোট দেন কোটি কোটি মানুষ, শহর-গ্রামে কিছু কিছু ঘুরে বেড়ানোর অভিজ্ঞতা থেকে মনে হয় তাঁদের মধ্যে নানা সূত্রে অনেকেই হয়তো নাম শুনেছেন, ছবি দেখলে চিনতে পারতে পারেন, নাম বলতে না-ও পারেন। কেউ কেউ হয়তো গানও শুনেছেন। কিন্তু বড়-ছোট শহরের বাইরে রবীন্দ্রনাথের গানের সঙ্গেও খুব পরিচয় আছে বলে মনে হয় না। তবে মার্কসের আদর্শ যেমন দীর্ঘ উপেক্ষার ফলে অর্থশূন্য হয়ে পড়েছিল, রবীন্দ্রনাথের ক্ষেত্রে হয়তো সেটা হয়নি। সাইকেল চড়ে স্কুলে যেতে যেতে ঝাড়গ্রামের একটি মেয়ে গানটা না জেনেই টের পেয়েছে, এই আকাশে আমার মুক্তি আলোয় আলোয়। কিংবা নমাজ পড়ার পর মাথা তুলে মালদহের একজন মুসলমান হয়তো ভেবেছেন, তোমার অসীমে প্রাণ মন লয়ে যত দূরে আমি ধাই…
(মতামত নিজস্ব)
লেখক প্রাবন্ধিক
rangan.chakravarty@gmail.com

Sangbad Pratidin News App

খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ

Advertisement