shono
Advertisement

পাথর ও প্রতিহিংসা

‘বন্দে ভারত এক্সপ্রেস’ জনগণের রোষের মুখে পড়ল।
Posted: 10:56 AM Jan 07, 2023Updated: 10:56 AM Jan 07, 2023

‘বন্দে ভারত এক্সপ্রেস’ জনগণের রোষের মুখে পড়ল। উন্মত্ত মানুষ রেলগাড়ির দিকে পাথর ছুঁড়ল। বিরোধী দল ও সংবাদমাধ্যমে প্রচার চলছে, এ কাজ তৃণমূলের। কিন্তু রাজ্যের শাসক দল-ই সংগঠিত ভাবে এ কাজ করেছে তা নিয়ে তদন্ত চললেও, প্রমাণিত নয়। কলমে জয়ন্ত ঘোষাল

Advertisement

 

মার বাবা পূর্ব রেলে কাজ করতেন। ঠাকুরদাও। প্রপিতামহ ছিলেন মোগলসরাইয়ের স্টেশন মাস্টার। তিন-তিনটে প্রজন্ম। আমি ডিরেল্‌ড হয়ে গেলাম। মা বলতেন, আমাদের রেলের বংশ। ছোটবেলায় মা-বাবার সঙ্গে রেলযাত্রা কম হয়নি! কাঠের তৈরি প্রথম শ্রেণির কামরা বাল‌্যকালে দেখেছি। পূর্ব রেলের ‘লোগো’ থাকত সর্বত্র। আর লেখা থাকত, ‘রেলের সম্পত্তি, জাতীয় সম্পত্তি। রেলের সম্পত্তি আপনার সম্পত্তি।’ একবার ট্রেনে উঠে দেখলাম, জানালা নেই। কাচ ভাঙা। ফ‌্যানের জায়গায় ফ‌্যানটাই বা গেল কোথায়! বিদ্রুপের ভঙ্গিতে বাবা বলেছিলেন, রেল জাতীয় সম্পত্তি। এখন সম্পত্তির ভাগ হচ্ছে। নাগরিকরা তাদের নিজেদের প্রাপ‌্য অংশ নিয়ে যাচ্ছে। পরে ইলেকট্রিক ট্রেনগুলোতেই সেই একই চিত্র দেখতাম। জানালা নেই, ফ‌্যান নেই। নাগরিকেরা তাদের প্রাপ‌্য নিয়ে যাচ্ছে।

মা বলতেন, আমাদের রেলের বংশ। রেলের সঙ্গে তাই অনেক আবেগ। ব্রিটিশ আমলে তৈরি রেল কলোনি। গেরুয়া রঙের পৃথুল উল্টোনো চিমনি লন্ডনের শহরতলির রেল-কলোনিতে দেখে ঔপনিবেশিক অতীতাসক্তি হয়। বিমল করের লেখায় রেলজীবন, এমনকী, নিমাই ভট্টাচার্য-র ‘মোগলসরাই জংশন’ এখনও মুগ্ধ করে।

[আরও পড়ুন: কোন পথে স্বর্গাদপি গরীয়সী হবে ভারত, ২০২৩ দেবে কি সন্ধান?]

সেই রেলগাড়ির দিকে উন্মত্ত মানুষ পাথর ছুড়লে মনখারাপ হয়। বেদনাহত হয়ে ভাবি, এই ধ্বংসের রাজনীতি কেন! ‘বন্দে ভারত এক্সপ্রেস’-এ পাথর ছোড়ার ঘটনা সংবাদপত্র তথা সংবাদমাধ‌্যম ও সোশ‌্যাল মিডিয়ায় যা পড়লাম, তা হল: সোম ও মঙ্গলবার পর-পর দু’দিন ট্রেন লক্ষ‌্য করে তিনবার পাথর ছোড়া হয়েছে (যদিও একবার, না দু’বার না তিনবার- তা এখনও পরিষ্কার নয়), এবং একটি ঘটনা বাংলার তথা শিলিগুড়ির কুমারগঞ্জের বলে সংবাদমাধ‌্যমের একাংশ দাবি করছে। কিন্তু রেলমন্ত্রক আনুষ্ঠানিকভাবে কোনও সিলমোহর দেয়নি এই প্রতিবেদন মুদ্রণে যাওয়া অবধি। সঙ্গে সঙ্গে কুস্তির ময়দানে নেমে পড়েছে বিজেপি। শুভেন্দু অধিকারী বললেন, এই তৃণমূলি ষড়যন্ত্রের ‘এনআইএ’ অর্থাৎ জাতীয় তদন্তকারী সংস্থাকে দিয়ে কেন্দ্রীয় তদন্ত হওয়া প্রয়োজন। উত্তরবঙ্গের সাংসদ এবং বিজেপির রাজ‌্য সভাপতি সুকান্ত মজুমদার আরও একধাপ এগিয়ে বললেন, এই ধরনের পরিকল্পিত হিংসা করতে পারে একমাত্র তৃণমূল কংগ্রেস অথবা ‘আইমিম’ (অল ইন্ডিয়া মজলিস-ই-ইত্তেহাদুল মুসলিমিন)-এর মতো দল।

বিজেপি বিজেপির কাজ করেছে। বর্তমান রাজনীতির এটাই দস্তুর। রিসার্চ-প্রমাণ এসব সংগ্রহ করে অভিযোগ তুললে দেরি হয়ে যায়। সংবাদমাধ‌্যমে প্রচারের ফুটেজ ‘মিস’ হয়ে যায়। বিরোধী দলের কাজ বিরোধিতা করা। অতএব ভিড়তন্ত্রে চিৎকারই গণতন্ত্রের বড় গলা। আমি এক অনাবাসী বাঙালি সাংবাদিক, আটত্রিশ বছর একটানা দিল্লিতে থাকা ‘নন-রেসিডেন্ট বং’। তাই বাঙালির নিন্দে হলে খুব গায়ে লাগে। এটাও নির্মম সত‌্য। উনিশ শতকের এই রেনেসাঁ-শহরকে নিয়ে নিন্দে শুনে আসছি চিরকাল। আমার পুত্র তখন স্কুলপড়ুয়া। সৌরভ গঙ্গোপাধ‌্যায় যেদিন কম রানে আউট হয়ে যেত, সেদিন স্কুলেই যেতে চাইত না। কাঁদত। বলত, বাবা, স্কুলে গেলেই বন্ধুরা দুয়ো দেবে। বলবে, বাঙ্গালি ক্যায়া কিয়া!

আজ যখন শুনলাম, বাংলায় এই ঘটনা হয়েছে, তখন মনে হল, আবার বাংলার নিন্দে শুরু হয়ে যাবে। সত্যিকথা বলতে কী, বাংলার সঙ্গে ধ্বংসের নেতিবাচক অনুষঙ্গ সৃষ্টির দায় কিন্তু ঐতিহাসিকভাবে বাম দলের। এ-রাজ্যে বাস-ট্রাম জ্বালানো-পোড়ানো, এই শহরকে ‘ইনকিলাব জিন্দাবাদ’-এর শহরে পরিণত করে পার্টিতন্ত্রের নামে এক নতুন ভিড়তন্ত্র গড়ে তোলা, হরতাল-বন্‌ধকে বঙ্গ সংস্কৃতিতে রূপ দেওয়ার দায় অনেকটাই বাম শক্তির। শেষ অধ‌্যায়ে বুদ্ধদেব ভট্টাচার্যও এই সংস্কৃতি থেকে বাংলা তথা নিজের দলকে মুক্ত করতে গিয়ে ব‌্যর্থ হন।

একদিকে জাতীয় স্তরে বহুল প্রচারিত বাংলার এই বদনাম আর মূলস্রোত থেকে বাঙালির ক্রমিক অপসারণ- এ বড় নির্মম সত‌্য। আর এখন তো মন্ত্রিসভায় একজনও বাঙালি ক‌্যাবিনেট মন্ত্রী নেই। বাঙালি রাজ‌্যপাল নেই। কোনও সরকারি ও আধা-সরকারি সংস্থার প্রধানের পদে মনোনয়নের সময় যত সহজে হিন্দি বলয় থেকে পশ্চিম ভারতের ব‌্যক্তিত্বর নাম মনে পড়ে, তত সহজে বাঙালি নাম মনোনীত হয় না।

এজন‌্য বাঙালি নামক ‘কাঁকড়ার জাত’, অর্থাৎ আমরাই নাকি দায়ী। আমরা ব‌্যস্ত বাংলা ও বাঙালিকে আরও অপমানিত করতে। ‘গোরা’ উপন‌্যাসে রাজভক্ত পানুবাবুর চরিত্র ছিল, গোরা যাকে বলেছিল যে, পাউরুটি চিবোতে চিবোতে ভারতীয়দের নিন্দে করতেই আপনি ব‌্যস্ত। কিন্তু দেশের মানুষের সেবায় আপনি কী করছেন? আমারও প্রশ্ন, বাংলা ও বাঙালির জন‌্য আমরা কী করছি? আর যাই হোক, পানুবাবু হতে চাই না।

বন্দে ভারত এক্সপ্রেসে পাথর ছোড়ার সঙ্গে সঙ্গে সোশ‌্যাল মিডিয়ায় বিজেপির প্রচার শুরু হল- উদ্বোধন অনুষ্ঠানে ‘জয় শ্রীরাম’ স্লোগান দেওয়ার বদলায় পাথর ছোড়া। অসাধারণ আলেখ‌্য নির্মাণ! দিল্লির ও বাংলার বহু চ‌্যানেলে তখন শুরু হয়ে গিয়েছে প্রচার। কেন পাথর ছোড়া? কেন তৃণমূল এটা করল? এর মধ্যে তৃণমূলের মুখপাত্র কুণাল ঘোষ প্রথম পরিসংখ‌্যান দিয়ে প্রতিপ্রশ্ন তোলেন, বন্দে ভারত ট্রেন উদ্বোধনের পরপরই উত্তরপ্রদেশে বহু পাথর ছোঁড়ার ঘটনা হয়েছে। তা নিয়ে কেন্দ্রীয় তদন্ত হবে না কেন? ভাল লাগল, সাম্প্রতিক পাথর ছোঁড়ার ঘটনার নিন্দা করলেন কুণাল। এমনকী, রাজ‌্য সরকারের প্রতিনিধি গুরুত্বপূর্ণ মন্ত্রী কলকাতার মেয়র ফিরহাদ ববি হাকিমও তৎক্ষণাৎ পাথর ছোড়ার নিন্দে করেন। তদন্ত দাবি করেন। বলেন, তৃণমূল এ কাজ করেনি। বিজেপি বদনামের চেষ্টা করছে।

সে-সময় চ‌্যানেলে চ‌্যানেলে যখন ‘কেষ্ট বেটাই চোর’- এই প্রচার চলছে, তখন হিন্দি চ‌্যানেলের সাংবাদিক আমাকে প্রশ্ন করলেন, কেন তৃণমূল এই কাজ করল? কোনও প্রমাণের আগেই প্রশ্নতেই অভিযোগ। অনেকটা সেই প্রশ্নের মতো- আপনার স্ত্রীকে কি আপনি রোজ প্রহার করেন? না কি মাঝে মাঝে?

[আরও পড়ুন: বাতাসে বিষ! কমছে সবুজের পরিমাণ, দূষণে ধুঁকছে কলকাতা]

আমি বললাম, ‘জয় শ্রীরাম’ স্লোগান হাওড়া স্টেশনে রেলের সরকারি অনুষ্ঠানে দেওয়াও গর্হিত অপরাধ ছিল। কিন্তু তার বদলায় তৃণমূল পাথর ছুঁড়লে তা-ও অনুচিত। কিন্তু তৃণমূল সংগঠিতভাবে পাথর ছুঁড়েছে, এ-কথা কে বলল? তদন্ত চলছে। রিপোর্ট তো এখনও আসেনি। আগাথা ক্রিস্টির ডিটেকটিভ কাহিনিতে তদন্তের প্রথম সূত্র ছিল, ‘হু ইজ দ‌্য বেনিফিশিয়ারি’। খুন হয়েছে। কে করেছে? প্রথম জানতে হবে, এ হত‌্যায় লাভ কার?

আমি বললাম, পাথর ছুড়লে তৃণমূলের লাভ না লোকসান? না কি বিজেপি রাজনীতির রুটি সেঁকতে চাইছে? ববি হাকিম মমতা-ঘনিষ্ঠ। তিনি ঘটনার নিন্দে করেছেন মমতার অনুমোদন ছাড়া? হতেই পারে না! তাহলে এবার প্রশ্ন, এই ঘটনায় মুখ‌্যমন্ত্রী নীরব কেন?

মমতা বন্দ্যোপাধ‌্যায় কেন নীরব, তা জানা গেল তিনদিন পর। বুধবার রাতে রেলমন্ত্রক থেকে আনুষ্ঠানিকভাবে বিবৃতি দিয়ে জানিয়ে দেওয়া হল- বন্দে ভারত এক্সপ্রেসে পাথর ছোঁড়া হয়েছিল বিহার থেকে। বাংলা থেকে নয়। রেল নিজে ভিডিও ফুটেজ পর্যন্ত প্রকাশ করল। হামলায় যুক্ত বিহারের চার কিশোরকে চিহ্নিত করা হয়েছে। তিনজনকে গ্রেপ্তার করে এদিক কিসানগঞ্জ জুভেনাইল কোর্টে হাজির করেছে রেল। বাকি একজনের খোঁজ চলছে।

রেলমন্ত্রক জানানোর পর গঙ্গাসাগর থেকে মুখ‌্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ‌্যায় মুখ খুললেন। তিনি অপেক্ষা করছিলেন। তদন্তর পর যখন সত‌্য জানা গেল, তিনি ক্ষোভে ফেটে পড়লেন ন‌্যায‌্যভাবে। বন্দে ভারত এক্সপ্রেসের অত‌্যাধুনিক প্রযুক্তির ট্রেনের বাইরে লাগানো উন্নত মানের সার্কিট ক‌্যামেরার ছবি দেখে দোষীদের চিহ্নিত করা হয়েছে। মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় তিনদিন ধরে ‘ভুয়ো খবর’ বা ফেক নিউজ ছড়িয়ে বাংলার বদনাম করার জন‌্য সংবাদমাধ‌্যমের একাংশকেও দোষী সাব‌্যস্ত করেছেন এবং তাদের বিরুদ্ধে আইনি ব‌্যবস্থা নেওয়া হবে বলে জানানো হয়েছে। নিজে সাংবাদিক হয়েও আমি এই ধরনের সাংবাদিকতার জন‌্য লজ্জাবোধ করছি।

রেলের তরফে আসা বিবৃতি এবং মুখ‌্যমন্ত্রীর বিবৃতির পরও কোনও কোনও সংবাদমাধ‌্যমে বলা হয়েছে, ‘রেল পুলিশের শীর্ষকর্তারা জানান, প্রথমদিন শিলিগুড়ির কাছে কুমারগঞ্জে ঘটনা ঘটলেও পরের দিন ঘটনাটি ঘটেছে বিহারের কিসানগঞ্জে।’ রেল পুলিশের এই ‘শীর্ষকর্তা’-রা ঠিক কারা? বিহার সম্পর্কে রেল কর্তৃপক্ষ ফুটেজ ও বিবৃতি দিলেও শিলিগুড়ি সম্পর্কে দিল না কেন? তৃণমূলের প্রতি ভালবাসায়?

চ‌্যানেলে-চ‌্যানেলে ভাইরাল হয়ে যাওয়া খবর প্রদর্শিত হয়। সঙ্গে বলাও হয়, এই খবরের সত‌্যতা আমরা যাচাই করে দেখিনি। এ বড় বিপজ্জনক প্রবণতা। যাচাই না-করা খবরের টিআরপি বাড়তে পারে, কিন্তু তাতে অসত‌্য প্রচারের যে ঝুঁকি থাকে, তা আমজনতাকে গেলানো হচ্ছে, তার দায়টা কে নেবে?

সেদিন সন্ধ‌্যায় এক নৈশভোজে কলকাতার এক বিখ‌্যাত বিজ্ঞাপন সংস্থার কর্ণধার এই বিতর্কে সম্পূর্ণ ভিন্ন একটি প্রেক্ষিত দিলেন। তিনি বললেন, পাথর ছোঁড়া নিয়ে চাপানউতোর তো হল, কিন্তু আমরা বোধহয় প্রধান ডিসকোর্সটাই মিস করছি। মানুষ রেলের উপর পাথর ছুঁড়ছে কেন? রাজধানী বা শতাব্দীতে এমনটা হয়েছে বলে তো মনে পড়ছে না!

আমি বললাম, মুখ‌্যমন্ত্রী তো বিহারের ক্ষোভ সম্পর্কেও সহানুভূতি ব‌্যক্ত করে বলেছেন, বোধহয় বিহারের অভিযোগ, পাটনায় কেন এমন ট্রেন হবে না? সেই অসন্তোষের প্রকাশ হচ্ছে। বিহারে বিজেপি নেই বলে ওখানে রেল হবে না? বিজ্ঞাপন-গুরু বললেন, মানুষের এই অসন্তোষের বহিঃপ্রকাশ হচ্ছে এই পাথরবৃষ্টিতে। সেটাই আসল বিষয়।

আমি একমত। প্রচারের ঢক্কানিনাদ যাই হোক, দেশের অর্থনীতি শোচনীয়। কর্মহীনতা, মূল‌্যবৃদ্ধি, মুদ্রাস্ফীতি, ক্ষুধা। জিএসটি-র টাকা নেই। রাজ্যে-রাজ্যে ‘এনরেগা’-র (ন‌্যাশনাল রুরাল এমপ্লয়মেন্ট গ‌্যারান্টি অ‌্যাক্ট) টাকা আসছে না। তাই ভিড়তন্ত্র। নৈরাজ‌্য। পাথরবৃষ্টি। শিরা ফুলিয়ে চিৎকার না করে আমরা এই আলোচনার আবহ কি গড়ে তুলতে পারি না? কেন এই অহৈতুকী পাথর ছোঁড়া?

(মতামত নিজস্ব)
লেখক বিশিষ্ট সাংবাদিক
redhat.jayanta@gmail.com

[আরও পড়ুন: অরুণাচলে গালওয়ান মডেলের পুনরাবৃত্তি, নতুন নাট্যমঞ্চ তৈরি করে কী বার্তা চিনের?]

Sangbad Pratidin News App

খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ

Advertisement
toolbarHome ই পেপার toolbarup রাজধানী এক্সপ্রেস toolbarvideo ISL10 toolbarshorts রোববার