shono
Advertisement

পাকিস্তানের বিরুদ্ধে আদৌ কোনও দেশকে পাশে পাবে ভারত?

বিশ্বের প্রবল ক্ষমতাধর রাষ্ট্রগুলি পাকিস্তানের বিরুদ্ধে যাওয়ার সাহস দেখাতে পারবে না আগামী ১০ বছরেও! The post পাকিস্তানের বিরুদ্ধে আদৌ কোনও দেশকে পাশে পাবে ভারত? appeared first on Sangbad Pratidin.
Posted: 10:03 PM Oct 19, 2016Updated: 04:37 PM Oct 19, 2016

সার্জিক্যাল স্ট্রাইক-এ যতই সমর্থন জানাক না কেন, লম্বা রেসে ‘জেহাদিস্ট স্টেট অফ পাকিস্তান’-এর বিরুদ্ধে ভারত পাশে পাবে না রাশিয়া বা আমেরিকাকে! তবে ভারতের রোডম্যাপ ঠিক কী হওয়া উচিত? কেনই বা বিশ্বের প্রবল ক্ষমতাধর রাষ্ট্রগুলি পাকিস্তানের বিরুদ্ধে যাওয়ার সাহস দেখাতে পারবে না আগামী ১০ বছরেও? উত্তর খুঁজলেন দীপেন্দু পাল৷  

Advertisement

ক্ষমতার মসনদে বসার পর থেকে প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির একজন তুখোড় কূটনীতিবিদের পরিচয় দিয়েছেন৷ যার তুলনা বলতে জওহরলাল নেহেরু ছাড়া আর কারও নাম আলোচনায় সেভাবে উঠে আসে না৷ কিন্তু মোদিও বিলক্ষণ জানেন, তাঁর লাখো চেষ্টা সত্ত্বেও কোনও বৃহৎ শক্তি পাকিস্তান নির্ভর জেহাদি সন্ত্রাসের সরাসরি বিরোধিতা করবে না!

তার মানে এই নয় যে প্রধানমন্ত্রীর দৌত্যে কোনওরকম খামতি রয়েছে৷ বিশ্বের প্রথম সারির দেশগুলি ভারতের পাশে দাঁড়ানোর আশ্বাস অবশ্যই দিয়েছে৷ উরি হামলার পর আমেরিকা, ইউরোপিয়ান ইউনিয়ন, রাশিয়া এমনকী চিনের কাছ থেকেও খানিকটা সমর্থন পেয়েছে ভারত৷ কিন্তু উপরোক্ত কোনও দেশই পাকিস্তানের বিরুদ্ধে গিয়ে তাদের নিয়ন্ত্রণ করার কথা ভাবতে পারবে না৷

এর জন্য মোদি সরকারকে দোষারোপ করলে চলবে না৷ এর জন্য দায়ী গত ১৫ বছর ধরে বিশ্বব্যাপী ক্ষমতার পালাবদল ও জেহাদি আক্রমণের ক্রমবর্দ্ধমান হুমকি৷ বিশেষ করে ৯/১১-র পর থেকে৷ পাকিস্তান-নীতি কেমন হওয়া উচিত সে বিষয়ে আমাদের দেশের অন্দরেই এখনও বহুমত রয়েছে৷ কিন্তু এ কথা সকলেই একবাক্যে স্বীকার করবে যে স্বাধীনতার পর থেকে আজ পর্যন্ত পাক-নীতিতে আহামরি কোনও পরিবর্তন আসেনি৷ ২০১৬-তে দাঁড়িয়ে সেই নীতি নেহাত বস্তাপচা কাগজ ছাড়া আর কিছুই নয়! বিশ্বের ক্ষমতা বন্টন-নীতির নয়া সমীকরণ অনুযায়ী ঢেলে সাজাতে হবে পাকিস্তান-নীতিকে৷

৯/১১ ও ইরাক হামলার আগে পর্যন্ত আমেরিকায় ছিল বিশ্বের একমাত্র গ্লোবাল-সুপারপাওয়ার৷ কিন্তু তার প্রায় দেড় দশক পর বিশেষত ২০০৮-এর ‘লেম্যান ক্রাইসিস’-এর পর মার্কিন অর্থনীতির সূর্য যখন অস্তাচলে, তখন মানচিত্রে উঁকি দিচ্ছে এক নতুন সুপার-পাওয়ার৷ তার নাম চিন৷ মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের মোট জিডিপি-র প্রায় অর্ধেক ও সমতুল্য সামরিক ক্ষমতা নিয়ে বেজিংয়ের উদয়৷ এদের পরেই তৃতীয় সর্বোচ্চ ক্ষমতাধর রাষ্ট্রের জোট হিসাবে ধরা হত ইউরোপীয় ইউনিয়নকে৷ কিন্তু ইউরোপ-জুড়ে একই মুদ্রা প্রথা চালু ও একটি ত্রুটিপূর্ণ ‘মানিটরি ইউনিয়ন’কে প্রতিষ্ঠা করতে গিয়ে নিজের পায়েই গুলি করল ইইউ৷

আর এই সবের মধ্যেই সকলের অলক্ষ্যে একটি চতুর্থ সুপার-পাওয়ার জন্ম নেয়৷ ‘গ্লোবাল ইসলামিজম’৷ একথা বললে অত্যুক্তি হয় না যে, প্রায় সবকটি ইসলামিক রাষ্ট্রই কম-বেশি উত্তেজনাপ্রবণ৷ বহু গোষ্ঠী ও রাষ্ট্রই ক্ষমতা দখলের জন্য ইসলামকে ব্যবহার করেছে ও করছেও৷ এই গ্লোবাল ইসলামের একটি ছোট কিন্তু খুবই শক্তিশালী ‘কোর’ গ্রুপ হল ‘জেহাদি ইসলামিজম’৷ তাদের বেপরোয়া মনোভাব ও ভিন্ন ধর্মালম্বীদের নীরব করে দেওয়ার নৃশংস ক্ষমতা তাদের কার্যত অপ্রতিরোধ্য করে তুলেছে৷ ইসলামের বিভিন্ন রূপের মধ্যে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ শক্তি হল তার সহিংসতা৷ ১৯৩০-এর নাৎসিবাদের মতো কোনও একক বা শনাক্তকরণযোগ্য শক্তি নয়৷ মুসলিম রাষ্ট্রগুলির নেতাদের অনেকের পকেট ভর্তি করতে পারে এই শক্তি, যে কোনও প্রদেশের নেতাদের ক্ষমতা থেকে হঠিয়ে দিতে পারে এই শক্তি!

আজ বিশ্বজুড়ে ইসলামিক জঙ্গিদের এতই বাড়বাড়ন্ত শুধুই সংখ্যার উপর ভিত্তি করে নয়৷ কারণ, সেদিক থেকে হয়তো জেহাদিদের সংখ্যাটা কয়েক হাজারের বেশি হবে না৷ কিন্তু তিনটি অতি-পরিচিত ইসলামিক রাষ্ট্রের কাছ থেকে এই জঙ্গিরা নিয়মিত অর্থ সাহায্য পায়৷ সৌদি আরব, ইরান ও পাকিস্তান-যাদের মধ্যে শেষের রাষ্ট্রটি আবার পারমাণবিক ক্ষমতাধর৷ এই প্রত্যেকটি রাষ্ট্রই কোনও না কোনও চরমপন্থী ইসলামিক জঙ্গিগোষ্ঠীকে সমর্থন করে৷ কারও লক্ষ্য বিশুদ্ধ ইসলামি মতাদর্শ স্থাপন, আবার কারও টার্গেট কোনও প্রাদেশিক রাষ্ট্রনেতাকে ক্ষমতার মসনদ থেকে উৎখাত করা৷ যেমন পাকিস্তানের লক্ষ্য কাশ্মীর দখল বা সৌদি আরবের লক্ষ্য সিরিয়ায় বাশাদ আসাদকে ক্ষমতাচ্যুত করা-ইত্যাদি৷ এখন ইরানকে বাদ দিলে(কারণ তাদের পার্সি শিকড় ও অনন্য সংস্কৃতি) সৌদি আরব বা পাকিস্তান-কারও ভবিষ্যৎই সুরক্ষিত নয়৷ যেটা তাদের আরও ভয়ঙ্কর করে তুলেছে৷ নিজেদের অখণ্ড রাখতে এই দুই দেশই জেহাদকে ব্যবহার করতে পারে যে কোনও সময়৷

মুসলিম রাষ্ট্রগুলি দীর্ঘদিন ধরেই ইসলামকে শক্তির একক হিসাবে ব্যবহার করে আসছে৷ কিন্তু সে বিষয়ে কোনও স্পষ্ট ধারণা নেই পশ্চিমী রাষ্ট্রগুলির৷ ইরাকে সাদ্দাম হোসেন বা লিবিয়ার গদ্দাফিকে নিকেশ করায় জেহাদিদের নিয়ন্ত্রণ করতে পারত এমন নেতাদের সংখ্যা ক্রমশই কমে আসছে৷ সিরিয়ায় আসাদকে টার্গেট করেও সেই একই ‘ভুল’ তারা করতে যাচ্ছিল, কিন্তু রাশিয়ার মধ্যস্থতায় তা কোনওমতে ঠেকানো গিয়েছে৷

এই ডামাডোলে আসাদের ক্ষমতা হ্রাস পেতেই ইসলামিক স্টেট ও সমতুল্য চরমপন্থী জঙ্গি সংগঠনগুলিকে নিয়ন্ত্রণ করা কঠিন হয়ে পড়েছে৷ মার্কিন নেতারা বোঝার চেষ্টাই করেন না যে আকাশ থেকে বোমা ফেলে বা কামান দেগে এই মুসলিম জঙ্গিদের সমূলে উৎখাত করা যাবে না৷ আবু বকর আল-বাগদাদিকে হত্যা করলে মতো আরও নৃশংস জঙ্গি নেতারা জন্ম নেবে৷ ‘ইসলামিজম’ হল অনেকটা রক্তবীজের মতো৷

মোদ্দা কথা, উপরোক্ত কারণেই আমাদের দেশের পাক-নীতি অর্থহীন হয়ে পড়েছে৷ আন্তর্জাতিক প্রেক্ষাপটে পাকিস্তানকে কোণঠাসা করার সাধ্য আমাদের নেই৷ কারণ, পাকিস্তানে সহিংস ইসলামপন্থা এখন প্রাপ্তবয়স্ক হয়ে উঠেছে৷ রাষ্ট্রসংঘের নিরাপত্তা পরিষদের তিন স্থায়ী ও ‘ভেটো’ প্রদানে সক্ষম আমেরিকা, চিন ও রাশিয়া মোটেও পাকিস্তানের সঙ্গে দূরত্ব তৈরি করতে চায় না৷ বরং চায় তার মাথায় হাত বুলিয়ে নিজেদের বাড়ির উঠোনকে সাফ-সুতরো রাখতে৷ যাতে তাদের সাজানো-গোছানো রাজপথ জঙ্গি হামলায় রক্তাক্ত না হয়৷

একইভাবে সৌদি আরব, ইরানকে ইসলামিক রাষ্ট্র হিসাবে ধরলে কোনও ক্ষমতাধর রাষ্ট্রই তাদের কোণঠাসা করবে না৷ কারণটা আর নতুন করে নাই বা বললাম৷ ঠিক একইভাবে পারমাণবিক ক্ষমতাধর পাকিস্তানের সঙ্গেও দূরত্ব তৈরি করতে রাজি নয় কোনও রাষ্ট্র৷ ইরান প্রতিশ্রুতি মাফিক নিউক্লিয়ার প্রোগ্রামে রাজি না হওয়ায় কয়েক ঘন্টার মধ্যে আমেরিকা তাদের উপর নিষেধাজ্ঞা চাপায়৷ ফের প্রতিশ্রুতি মিলতেই যাবতীয় নিষেধাজ্ঞা উঠে যায়৷ বিশ্বের প্রথম সারির তিন শক্তিধর দেশই একটা বিষয়ে সতর্ক যে জেহাদিদের রক্তমাখা পায়ের ছাপ যেন তাদের দেশে না পড়ে৷

এই দ্বন্দ্বে চিনের প্রসঙ্গে আসা যাক, যারা প্রকাশ্যে পাকিস্তানকে আর্থিক, সামরিক ও কূটনৈতিকভাবে সমর্থন জানাচ্ছে৷ এর পিছনে চিনের সবচেয়ে বড় উদ্দেশ্য হল ভারতীয় ভূখণ্ডে ডামাডোল অব্যাহত রাখা৷ কারণ, বেজিং বিলক্ষণ জানে ভারত ভবিষ্যতে তাদের সামনে প্রবল অর্থনৈতিক চ্যালেঞ্জ তৈরি করতে পারে৷ শুধু অর্থনৈতিকই নয়, জনসংখ্যা ও সাংস্কৃতিক দিক থেকেও ভারত তাদের কাছে বড় বিপদ! এশিয়ায় নিজের কর্তৃত্ব স্থাপনের স্বপ্ন দেখে চিন৷ কিন্তু দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ায় চিনের চেয়েও ভারত অনেক বেশি গ্রহণযোগ্য৷ বিশেষত, জাপানের সঙ্গে নরেন্দ্র মোদি জমানায় ভারতের মেলামেশায় চিন বিপদঘণ্টা দেখতে পাচ্ছে৷ আর তাই পাকিস্তানকে সবরকম সাহায্যে তারা তৈরি৷

তবে যে কারণটি আমেরিকা, চিন ও রাশিয়াকে একসূত্রে বেঁধে রেখেছে সেটি হল ইসলামিক সন্ত্রাস হানার হুঁশিয়ারি৷ উপরোক্ত তিন দেশেই বহু ইসলামপন্থী মানুষের বসবাস৷ জেহাদিদের নিয়ন্ত্রণে পাকিস্তানের ভূমিকাকে কিছুতেই অস্বীকার করতে পারে না উপরোক্ত কোনও রাষ্ট্রই৷ পাকিস্তানের পিছনে তাদের নীরব সমর্থনের লক্ষ্যই হল, জেহাদি বন্দুকের নল যেন তাদের দেশের অভিমুখে ঘুরে না যায়৷

সহজ করে বললে, আমেরিকা চায় চিনের বিরুদ্ধে মাথা তুলে দাঁড়াক ভারত৷ কিন্তু পাকিস্তানকে সম্পূর্ণ অগ্রাহ্য করার ক্ষমতাও তাদের নেই৷ কারণ, আমেরিকা ও আফগানিস্তানে জেহাদি হামলার ভয়৷ একই দশা রাশিয়ারও৷

সবমিলিয়ে ভারত বৃহৎ শক্তিধর রাষ্ট্রগুলির কাছ থেকে মুখে মিষ্টি মিষ্টি আশ্বাস পেলেও কোনও বড় ধরনের সাহায্যের আশা যেন না রাখে৷

এখন ভারতের কী করা উচিত?

১. পাকিস্তানের বিরুদ্ধে তলে তলে অভিযান চালিয়ে যাওয়া৷ যে কাজটি দীর্ঘদিন ধরে নিপুণভাবে করে এসেছে কেন্দ্রীয় গোয়েন্দা সংস্থা ‘র’৷ বালুচিস্তান হোক বা সিন্ধ, বা পাক অধিকৃত কাশ্মীর- পাকিস্তানের জেহাদিতন্ত্রের বিরুদ্ধে গোপনে অভিযান চালিয়ে যাওয়া উচিত ভারতের৷ কিন্তু প্রকাশ্যে যেন তা কখনই না আসে৷

২. আগামী ১০ বছরে অর্থনৈতিক ও সেনা পরিকাঠামোকে ঢেলে সাজাতে হবে৷ ৫-৬ ট্রিলিয়ন ডলারের অর্থনীতিতে পরিণত হতে পারলে জিডিপি-র বিচারে ভারত বিশ্বে তিন নম্বর প্রভাবশালী রাষ্ট্র হয়ে উঠতে পারবে৷

৩. আমেরিকা, রাশিয়া ও ইজরায়েলের সঙ্গে সামরিক সু-সম্পর্ক অব্যাহত রেখে চলতে হবে৷ পাশাপাশি নতুন সামরিক বন্ধু বানাতে হবে জাপান ও চিনকে পাশে নিয়ে৷ চিনে কম জন্মহার এখন তাদের সবচেয়ে বড় সমস্যা৷ এই পরিস্থিতিতে ভারতে চিনা সংস্থাগুলিকে বিনিয়োগের জন্য ডেকে এনে ভারতের প্রতি তাদের আর্থিক নির্ভরতা আরও বাড়িয়ে তুলতে হবে৷ চিনের সঙ্গে ভারতের সম্পর্ক হতে হবে চিনের সঙ্গে আমেরিকার সম্পর্কের মতো৷ চিনের সঙ্গে মুখে ভাল সম্পর্ক বজায় রাখতেই হবে ভারতকে৷ কিন্তু তলে তলে চিন ও পাকিস্তানের বিরুদ্ধে সবরকমভাবে প্রস্তুত থাকতে হবে৷ রাষ্ট্রসংঘের নিরাপত্তা পরিষদে স্থায়ী আসন পাওয়ার জন্য চিনের আপাত সমর্থন পাওয়া খুব জরুরি৷

আগামী ১০ বছর কূটনৈতিক, অর্থনৈতিক ও সামরিক পরিকাঠামোয় বিশেষ নজর দিতে হবে নয়াদিল্লিকে৷ নিজেকে চতুর্থ সুপার-পাওয়ার হিসাবে তুলে আনতে হবে৷ কারণ, আমেরিকা, চিনের পর তৃতীয় সুপার-পাওয়ার কে হবে তা নিয়ে আগামী ১০ বছর বিশ্বজুড়ে বিভিন্ন সমীকরণ তৈরি হবে ও ভাঙবে৷ তৃতীয় স্থানের দখল নিতে পারে নয়া ইউরোপীয় ইউনিয়ন বা ‘গ্লোবাল ইসলামিজম’৷

The post পাকিস্তানের বিরুদ্ধে আদৌ কোনও দেশকে পাশে পাবে ভারত? appeared first on Sangbad Pratidin.

Sangbad Pratidin News App

খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ

Advertisement