shono
Advertisement

‘মৃত্যুর পর আমার সমস্ত সৃষ্টি ধ্বংস করা হোক’, ফেসবুকে ইচ্ছাপত্র প্রকাশ কবীর সুমনের

এই ভাবনা দার্শনিক উপলব্ধিজাত নাকি নাগরিক কবিয়ালের এ এক অভিমান?
Posted: 03:18 PM Oct 24, 2020Updated: 03:56 PM Oct 24, 2020

সংবাদ প্রতিদিন ডিজিটাল ডেস্ক: রোগশয্যায় শুয়ে বিশ্বখ্যাত দার্শনিক ফ্রানজ কাফকা (Franz Kafka) প্রিয় বন্ধুকে অনুরোধ জানিয়েছিলেন, তাঁর মৃত্যুর পর তাঁর সমস্ত সৃষ্টি যেন ধ্বংস করে ফেলা হয়। জীবনের শেষ অনুরোধটি রাখেননি কাফকার বন্ধু ম্যাক্স ব্রড। যক্ষ্মায় অকাল প্রয়াত কাফকার মৃত্যুর পর ম্যাক্স তাঁর সমস্ত লেখা প্রকাশ করেছিলেন। তাতেই ‘মেটামরফোসিস’-এর স্রষ্টার দর্শনবোধ, সাহিত্যরসের স্বাদ পেয়েছিলাম আমরা। বিশ্ব সাহিত্য এরপরই পরিচিত হয় একটি শব্দের সঙ্গে – কাফকাইস্ক। সংবেদনশীল মানুষের এমন ভাবনা কি কেবলই অভিমান নাকি কোনও দার্শনিক উপলব্ধি? এই প্রশ্ন কিন্তু আবারও উসকে দিলেন বাংলা আধুনিক গানের অন্যতম পুরোধা, সংগীতকার কবীর সুমন (Kabir Suman)। ইচ্ছাপত্র প্রকাশ করে তিনি জানিয়েছেন যে তাঁর মৃত্যুর পর যেন এতদিনকার যাবতীয় কাজ ধ্বংস করা হয়। এমনকী বাদ্যযন্ত্র, রেকর্ডিংও। স্বহস্তে লেখা চিঠি তিনি ফেসবুকে পোস্ট করেছেন। এই পোস্ট ঘিরে আপাতত তোলপাড় বঙ্গ সংস্কৃতি মহলে।

Advertisement

সপ্তমীর দিন অর্থাৎ শুক্রবার যখন আদালতের নির্দেশে নির্দিষ্ট সীমার মধ্যে দুর্গাপুজোর আনন্দে সবে গা ভাসাতে শুরু করেছেন আমবাঙালি, ঠিক সেই সময়েই সোশ্যাল মিডিয়ায় এমন একটি পোস্ট নজর কাড়ল সকলেরই। সুমনের গানের সঙ্গে যাঁরা অল্পবিস্তর পরিচিত, তাঁরাও এই পোস্ট দেখে চমকেছেন। পোস্টে ঠিক কী লিখেছেন কবীর সুমন? লিখেছেন, ‘আমার মৃতদেহ যেন দান করা হয় চিকিৎসাবিজ্ঞানের কাজে। কোনও স্মরণসভা, শোকসভা, প্রার্থনাসভা যেন না হয়। আমার সমস্ত পাণ্ডুলিপি, গান, রচনা, স্বরলিপি, রেকর্ডিং, হার্ড ডিস্ক, পেনড্রাইভ, লেখার খাতা, প্রিন্ট আউট যেন কলকাতা পুরসভার গাড়ি ডেকে তাঁদের হাতে তুলে দেওয়া হয় সেগুলি ধ্বংস করার জন্য। আমার কোনও কিছু যেন আমার মৃত্যুর পর পড়ে না থাকে। আমার ব্যবহার করা সব যন্ত্র, বাজনা, সরঞ্জাম যেন ধ্বংস করা হয়। এর অন্যথা হবে আমার অপমান’। এও লিখেছেন যে সকলের অবগতির জন্য তাঁর ওই পোস্ট।

[আরও পড়ুন: ‘সংবাদ প্রতিদিন’-এর নতুন বাংলা পডকাস্ট চ্যানেল ‘শোনো’, গল্প-গান-নাটকের নয়া ঠেক]

কিন্তু কেন আচমকা এই পোস্ট? সত্তর পেরনো কবীর সুমন এই মুহূর্তে বাংলা খেয়ালচর্চায় মনোনিবেশ করেছেন। আধুনিক গানে সম্পূর্ণ ভিন্ন ধারা বয়ে আনা রচয়িতার কথায়, সুরে তৈরি হচ্ছে সময়োপযোগী অসামান্য কিছু খেয়াল। ছাত্রছাত্রীদের নিয়ে নিয়মিত নতুন নতুন খেয়াল তৈরির ‘খেয়ালে’ মজেছেন তিনি। যে কোনও অনুষ্ঠানেই স্পষ্ট ঘোষণা করেন, বাকি জীবনটা তিনি বাংলা খেয়ালের জন্য কাজ করবেন, রেখে যাবেন নিজের সৃষ্টি। আর তার প্রবহমানতা ধরে রাখবেন ছাত্রছাত্রীরা – এই তাঁর ইচ্ছে। জীবনের অনেকটা অংশে বেশ কিছু বিতর্ক সঙ্গী কবীর সুমনের। ব্যক্তিগত অথবা রাজনৈতিক বিভিন্ন ক্ষেত্রে বহু সমালোচনার মুখেও পড়তে হয়েছে। ক্ষুরধার মেধা আর স্থিতপ্রজ্ঞ দৃষ্টিভঙ্গিতে অনায়াসে সামলেছেন সেসব। বাংলা খেয়াল নিয়েও সমস্ত সমালোচনাকে হেলায় তুচ্ছ করে চালিয়ে গিয়েছেন সাধনা।

[আরও পড়ুন: মুসলিম পরিবারের সন্তান হয়েও পুজো নিয়ে ফেসবুকে পোস্ট, মৌলবাদীদের রোষে মীর]

কিন্তু এমন কী ঘটল যে আচমকা তিনি ঘোষণা করে দিলেন, মৃত্যুর পর তাঁর সমস্ত পাণ্ডুলিপি, গানের স্বরলিপি, রেকর্ডিং এমনকী বাদ্যযন্ত্রও ধ্বংস করা হোক? এই জিজ্ঞাসা ঘনিষ্ঠজন থেকে অনুরাগী – সকলেরই। কবীর সুমনের এই ইচ্ছাপ্রকাশের নেপথ্যে তবে কি সেই ‘কাফকাইস্ক’ প্রবণতাই? আদ্যন্ত এক শিল্পীর এই প্রবণতা হয়ত সংগীত জগতে এই প্রথম। তবে প্রশ্ন থাকছেই। মৃত্যুর পর সমস্ত কাজ ধ্বংসের ভাবনা কি সত্যিই কোনও দার্শনিক উপলব্ধিজাত নাকি নাগরিক কবিয়ালের এ এক অভিমান?

Sangbad Pratidin News App

খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ

Advertisement