shono
Advertisement

অতীতের আয়নায় বর্তমানের বিপন্নতাকে দেখার নাটক ‘মেফিস্টো’, পড়ুন রিভিউ

প্রধান চরিত্রে মঞ্চটাকে প্রায় মুঠোয় তুলে এনেছেন অনির্বাণ ভট্টাচার্য।
Posted: 05:00 PM Apr 18, 2021Updated: 12:49 PM Apr 19, 2021

নির্মল ধর: নাটক শুরুর আগে মুখবন্ধ হিসেবে পরিচালক সুমন মুখোপাধ্যায় (Suman Mukherjee) গিরিশ মঞ্চে দাঁড়িয়ে বলেছিলেন, “সমাজের জীবনে, মানুষের জীবনে, রাজনৈতিক জীবনে এমন কিছু সময় আসে যখন সমসময়কে দেখতে হলে অতীতের আয়নার প্রয়োজন। আমরা এখন সেইরকমই একটা বিভেদকামী শাসন ও সময়ের মধ্য দিয়ে যাচ্ছি। যে কারণে অতীতের আয়নাতেই আমাদের বর্তমানকে দেখতে হচ্ছে। অতীত দিয়েই সমকালকে ধরার চেষ্টা করেছি। ক্লজ মানের লেখা ‘মেফিস্টো’ (১৯৩৬) (Mephisto) তৎকালীন জার্মানিতে হিটলার শাসনের যে ভয়ংকর ভয়ানক ছবি তুলে আনে, আমাদের দেশও যেন সেই পথেই এগোচ্ছে। এটাই এই প্রযোজনার চেতাবনি বলা যায়।”

Advertisement

আমরা এই একই লেখা অবলম্বনে ইস্তভান জাবরের ক্লাসিক ছবি ‘মেফিস্টো’ দেখেছি। তার অভিঘাত ভুলে যাইনি। সুমনের বলিষ্ঠ নির্দেশনায় আবার সেই নাটক দেখে সত্যিই আসন্ন ভয়ংকর ভবিষ্যতের ছবির আশঙ্কায় কেঁপে উঠতে হল গিরিশ মঞ্চে বসেই।

[আরও পড়ুন: ‘শাহরুখ, সলমনদের রেঁধে খাওয়াব, কিন্তু করণ জোহরকে নয়’, কেন এমন বললেন করিনা?]

হামবুর্গ শহরের ছোট নাট্য দলের সুঅভিনেতা হেনড্রিক হফজেন চেতনায় কমিউনিস্ট হয়েও, আরও বড়ো অভিনেতা হয়ে ওঠার স্বপ্নে কীভাবে বার্লিন শহরে গিয়ে হিটলারের থাবার মধ্যে পড়ে নিজের আদর্শচ্যুতই শুধু হল না। হারাল স্ত্রীকে, প্রেমিকাকে, ঘনিষ্ঠ বন্ধুকে। নিজের বিবেক, নিজের চেতনা, স্বাধীন চিন্তা, মতামত- সবকিছু হিটলারের পায়ে নৈবেদ্য দিয়ে দিতে হল। বিবেকের যন্ত্রণায় জর্জরিত হয়েও কিসসু করার ক্ষমতা তার আর নেই। বিশাল এক স্টেডিয়াম মঞ্চে সে তখন ‘মেফিস্টোফিলিস’, হেনড্রিক হফজেন নয়। স্বস্তিকা ও ঈগল লাঞ্ছিত পতাকার নিচে সে ডুবে গিয়েছে।

দর্শক হিসেবে ‘মেফিস্টো’র আয়নায় নিজেদের দেখে নিজেরাই যেন নিজেদের ভবিষ্যৎ তৈরিতে এখন থেকেই প্রস্তুত হই। এটাই এই প্রযোজনার নির্যাস। কেমন হল প্রযোজনা? ২০০২ সালে বাবরি মসজিদ ভাঙার সময় এই নাটক মঞ্চস্থ হয়েছিল। কিন্তু তখন দেখা হয়নি। এবার দেখলাম। মনে হল সুমনের পরিচালনায় আরও তীব্র, তীক্ষ্ণ ও বলিষ্ঠ হয়েছে প্রযোজনা। বক্তব্য অনেক বেশি স্পষ্ট, সরাসরি। মঞ্চের বিন্যাস, উপস্থাপনা, একটি লম্বা আয়নার ব্যবহার সত্যিই অসাধারণ। আবহ হিসেবে জার্মান ক্লাসিকের ব্যবহার নাটকের শরীরে অলঙ্কারের মতো বেজেছে। ‘রাজা লিয়ার’ থেকেই বড় ক্যানভাসে নাটক পরিচালনায় সুমন দক্ষতার পরিচয় দিয়েছিলেন। তারও আগে ‘তিস্তাপাড়ের বৃত্তান্তে’ আভাস পেয়েছিলাম। এবার তিনি প্রমাণ করে দিলেন নাটকের অন্তরকে তিনি নিজের অন্তর দিয়েই ছুঁতে পারেন পছন্দসই নাটক পেলে।

[আরও পড়ুন: বনশালী-দীপিকার সম্পর্কে চিড়! ‘দ্রৌপদী’ ছবি করার প্রস্তাব ফেরালেন পরিচালক]

আর শিল্পীদের অভিনয়! এটা তো এক কথায় ‘অনসম্বাল কাস্ট’। চেতনা,তৃতীয় সূত্র ও মুখোমুখি দলের ছেলেমেয়েরা তো ছিলেনই। নেওয়া হয়েছিল আরও একঝাঁক সমমনস্ক অভিনেতাকে। নেতৃত্ব দিয়েছেন অনির্বাণ ভট্টাচার্য (Anirban Bhattacharya), আজকের বাংলা মঞ্চের অন্যতম সেরা অভিনেতা। তিনিই হয়েছেন হেনরিক। তাঁর চলন, বলন, শরীরী বিভঙ্গ,দৃপ্ত কণ্ঠস্বরের অদল বদল, তাঁর চাউনি সব মিলিয়ে তিনি মঞ্চটাকে প্রায় মুঠোয় পুরে নিয়েছিলেন।

হিটলার জামানার মন্ত্রীর চরিত্রে নীল মুখোপাধ্যায় ইস্পাত দৃঢ় মেজাজ সুন্দর এনেছেন। শান্তিলাল মুখোপাধ্যায় হয়েছেন হামবুর্গ নাট্য দলের নতুন কর্তা, তাঁর মেজাজেও সেই এক ভঙ্গি। বাকি শিল্পীরা অনির্বাণ চক্রবর্তী, পৌলমী, ঋদ্ধি, সুরজিৎ- সব্বাই এক সুরে এক লয়ে অভিনয় করে নাটকটিকে সর্বাঙ্গসুন্দর করে তুলেছেন। এর অনেকটা কৃতিত্ব সুমন দাবি করতেই পারেন। কারণ এই ‘অনসম্বাল কাস্ট’ নিয়ে কাজের ঝুঁকিটা কম নয়। ‘মেফিস্টো’ বুঝিয়ে দিল বাংলা নাটকের সব দল এখনও শাসকের লেজুড়ধরা হয়নি, আশা করা যায় হবেও না। এটাই বাংলার সংস্কৃতি, বাঙালির চরিত্র।

ছবি – বীরেশ চন্দ্র

Sangbad Pratidin News App

খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ

Advertisement