shono
Advertisement

Film Review: রামকমলের ‘রিকশাওয়ালা’যেন এক সামাজিক দলিল

কেমন হল পরিচালক রামকমলের 'রিকশাওয়ালা'?
Posted: 02:08 PM Jun 30, 2021Updated: 02:20 PM Jun 30, 2021

নির্মল ধর: কলকাতা শহরটার অনেক অনেক বদল ঘটেছে গত একশো বছরে। মানুষজন, গাড়ি, যানবাহন এমনকি শহরটার চেহারা চরিত্রে। এখন কলকাতার মেট্রো শহরটার প্রায় শিরদাঁড়া। অন্তত যাতায়াতের ক্ষেত্রে। অটো টোটো এখন কলকাতার রাস্তার শাসক বলতে পারি। কিন্তু কলকাতার রিকশা! না, সেটি এখনও বিরল প্রজাতির যানবাহন হলেও, শহরটার শরীর জুড়ে ছড়িয়ে থাকা শিরা-উপশিরায় অসময়ের একমাত্র উদ্ধারকর্তা হাতে টানা রিকশা এবং বিহারী এক রিকশাওয়ালা! বিমল রায় থেকে রোলান্ড যোফ পর্যন্ত কলকাতার আদি অকৃত্রিম রিকশা এবং রিকশাওয়ালার কোনও পরিবর্তন ঘটেনি। না, এখনও নয়।

Advertisement

 

তরুণ পরিচালক রামকমল মুখোপাধ্যায় এখনকার কলকাতার প্রায় হারিয়ে যেতে বসা পেশা পরিবর্তনের স্বপ্ন দেখা এক তরুণ রিকশাওয়ালা মনোজের যন্ত্রণাক্লিষ্ট, বেদনা মাখা স্বপ্ন ভঙ্গের গল্প দেখালেন মাত্র ছেচল্লিশ মিনিটের এক শর্ট ফিচার বানিয়ে! বাবার পেশাকে খুব একটা পছন্দ করে না। বাবাও চান না, ছেলে রিকশা চালাক, তাই কলেজে ভর্তি হয়েছে, চাকরির চেষ্টাও করছে। বাবা প্রথমত বয়স্ক, দুর্ঘটনায় অসুস্থ হওয়ায় ছেলেকেই বাধ্য হয়ে রিকশা চালাতে হয়। তার স্বপ্ন ‘বাবু’ হওয়ার। বড়লোক প্রেমিকা চুমকিকে পরিচয় লুকিয়েছে, বলেছে বাবা বিজনেসম্যান। চাকরির ইন্টারভিউতেও স্পষ্ট বলতে পারেনি বাবার পেশা। বাড়িতে দিন আনা দিন খাওয়ার অবস্থা। একদিন অবশ্য মনোজের স্বপ্ন ভেঙে যায়, চুমকির বাবা তাকে রিকশা চালাতে দেখলে! রামকমল এই তরুণকে ঘিরেই এখনকার কলকাতার একটা সামাজিক পারিবারিক রাজনৈতিক অবস্থার বাস্তব ও সুন্দর কোলাজ তৈরি করেছেন। মনোজের মিথ্যাচারকে ব্যবহার করেই তিনি তুলে এনেছেন সমাজ বিন্যাসের এক বাস্তব দলিল, যার মধ্যে রয়েছে এক নারীর অতৃপ্তি, প্রেমিকা চুমকিরও আশাভঙ্গ, বাঙালির আত্মতৃপ্তির সমালোচনা এবং শেষ পর্যন্ত স্থিতাবস্থার প্রতিষ্ঠা। সেটা আর এড়াতে পারলেন না পরিচালক, কাহিনিকার রামকমল। যেমন লোভ সামলাতে পারলেন না স্বপনের দোহাই দিয়ে ছাত্রীর মায়ের সঙ্গে ঘনিষ্ট দৃশ্যের সংযোজন। পরে সেই দৃশ্যকেই তিনি কিন্তু সুন্দর ভাবে সাজিয়েছেন। ছোট্ট ছোট্ট আঁচড়ে রামকমল আজকের কলকাতার ‘আন্তরিক’ চেহারাটাও তুলেছেন, তাঁর পরিমিতি বোধের প্রশংসা করতেই হয়। ছবির সাবলীল গতি একটি গানের ব্যবহারে কিঞ্চিৎ ব্যাহত হলেও “যদি চাইলেই এত সহজে পাওয়া যেত সব….” গানটি কিন্তু বড্ড ভাল। আরও ভাল মধুরা পালিতের সাবলীল ক্যামেরার কাজ। ঘরে বাইরে সর্বত্র মধুরা দারুণ ব্যালেন্স রেখে কাজ করেছেন। অভিনয়ে অবিনাশ দ্বিবেদী খুবই স্বাভাবিক, স্বপ্রাণ, স্বচ্ছন্দ, চরিত্রটির অন্তর ছুঁতেও পেরেছেন। প্রেমিকার চরিত্রে সঙ্গীতা সিনহাকেও ভাল লাগে। খুবই অল্প সময়ে পাড়াতুতো ফুটো রাজনীতির মাস্তানিমার্কা ছোকরার চরিত্রের অভিনেতা কিন্তু বেশ চোখে পড়ে!! এই ছবি ওম পুরির স্মৃতিতে উৎসর্গ করা, ভাল কথা, কিন্তু বলরাজ সাহনিকে ভুলবো কী করে!

[আরও পড়ুন: ৪৯ বছর বয়সে প্রয়াত মন্দিরা বেদীর স্বামী প্রযোজক রাজ কৌশল ]

বলরাজ সাহানিই প্রথম কলকাতার রিকশাওয়ালাকে ভারতীয় সিনেমায় অমর প্রতিষ্ঠা দিয়ে গিয়েছেন! দুর্ভাগ্য, এমন একটি সুন্দর ও সামাজিক দলিলকে ওটিটি প্ল্যাটফর্মের স্ক্র্যাচ নিয়ে দর্শকের সামনে আসতে হল। ‘রিকশাওয়ালা’ কিন্তু আরও অনেক বেশি দর্শক দাবি করে। তবু একটু আনন্দের খবর- বিদেশের কিছু কিছু উৎসবে ঠাঁই পাচ্ছে রামকমলের এই আন্তরিক প্রয়াস।

[আরও পড়ুন: অরূপ বিশ্বাস ও রাজ চক্রবর্তীর মধ্যস্থতায় কাটল জট, বুধবার থেকে শুরু নতুন সিরিয়ালের শুটিং]

Sangbad Pratidin News App

খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ

Advertisement