shono
Advertisement

Anusandhan review: তারকাদের উজ্জ্বল অভিনয়ে সমৃদ্ধ কমলেশ্বরের ছবি ‘অনুসন্ধান’

ছবির পরতে পরতে অন্ধকার ও আলোয় মেশা জীবন।
Posted: 04:42 PM Dec 04, 2021Updated: 06:59 PM Jan 20, 2022

নির্মল ধর: ফ্রিডরিশ ড্যুরেনম্যাটের সুইশ ভাষায় লেখা উপন্যাস ‘আ ডেঞ্জারাস গেম’ থেকে ‘ট্র্যাপ’, ‘জাজমেন্ট অ্যান্ড দ্য হ্যাংম্যান’, ‘প্লে হাউস’ ইত্যাদি নামে বিভিন্ন ভাষায় নাটক লেখা বা রূপান্তর ঘটানো হয়েছে। পরিচালক কমলেশ্বর মুখোপাধ্যায় (Kamaleshwar Mukherjee) কিছুদিন আগেই এই গল্প নিয়েই কলকাতার মঞ্চে নাটক তৈরি করেন। এবার তিনিই বড়পর্দায় নিয়ে এলেন সেই একই কাহিনির চিত্রায়ন। আসলে ফ্রিডরিশের গল্পের মধ্যে এমন কতগুলো স্তর রয়েছে যাকে যে কোনও মাটিতে ফেলে নতুন চেহারা দিয়ে সময়ানুগ, সাম্প্রতিক এবং সর্বজনীন করে তোলা যায়। কমলেশ্বরকৃত নাটক এবং এই নতুন চেহারার ছবি দেখার পর মূল রচনার বহুমুখী বৈশিষ্ট্য আরও স্পষ্ট হল।

Advertisement

‘অনুসন্ধান’ শুধু থ্রিলার বা রহস্য রচনা নয়, কমলেশ্বরবাবু নিপুণ দক্ষতায় আজকের সময়ের সমাজ ব্যবস্থা, গ্লোবালাইজেশনের নামে ব্যক্তিস্বার্থের উদগ্র চেতনার উন্মেষ ও প্রসার, ফ্রয়েডের সেই চিরন্তন সত্য ‘যোগ্যতমর ঊর্ধ্বতন” অর্থাৎ ‘Survival of the fittest’ তত্বের
নির্লজ্জ চেহারা উন্মোচন করে দিয়েছেন এই নাটকে থুড়ি ছবিতে। আজকের অর্থনীতি স্পষ্ট ভাষায় বলে ‘চরৈবেতি’। সব্বাইকে পিছিয়ে ফেলে এগিয়ে যাও, প্রয়োজনে পায়ের তলায় পিষে ফেলে। পুঁজিবাদী অর্থনীতির মূল কথাইতো এমন। বিশ্বাস, ভালবাসা, প্রেম সবকিছুই ব্যবহার কর সমাজের আরও আরও উঁচুতে ওঠার জন্য। জীবনের লক্ষ্য হোক শুধু সীমাহীন উচ্চতা।

 

ফ্রিডরিশের নাটকের আদালত ঘরের কাঠামোটি ঠিক রেখে, বয়স্ক বাবা-মা, ছেলে ও মেয়েকে ঠিকঠাক রেখে হঠাৎ রাতের আগন্তুককে নিয়ে যে মহড়া হয়, সেখানেই কমলেশ্বর নিজস্ব সামাজিক, রাজনৈতিক ভাবনার টুকরোগুলো ছড়িয়ে দেন। মূল নাটকে সেসব ছিল না।

[আরও পড়ুন: Bob Biswas Review: শাশ্বতর স্মৃতিকে ছাপিয়ে ‘বব বিশ্বাস’ হয়ে উঠতে পারলেন অভিষেক বচ্চন?]

আমরা দেখি, বার্মিংহামের শহরতলিতে বর্ষণসিক্ত এক রাতে গাড়ি দুর্ঘটনায় চালক শাশ্বতকে আশ্রয় নিতে হয় এক বাড়িতে। যে বাড়িতে বাস করেন উকিল আর বিচারকদের পরিবার। প্রতি রাতে সেখানে বসে এক নকল আদালতের আসর। নতুন অতিথি এলে তাঁকে অভিযুক্ত করে শুরু হয় সেই নকল বিচারপর্ব। শাশ্বত ঢোকার পরও তেমনটি ঘটল। বিচারকের আসনে চূর্ণী, ফাঁসুড়ের ভূমিকায় জয়দীপ, দুই উকিল হলেন ঋদ্ধি ও প্রিয়াঙ্কা। এই শাশ্বতর কলকাতায় নিজের বাড়িতে দুর্গাপুজো ছেড়ে আদালতের সমন পেয়ে একদিনের নোটিসে বার্মিংহামের বাড়িতে আসার কারণটা এই নকল আদালতে ধীরে ধীরে প্রকাশ হতে থাকে। ছবির মূল আকর্ষণ এই আদালতে অভিযুক্ত শাশ্বত, পক্ষ-বিপক্ষের উকিলের প্রশ্নোত্তর, বিচারক ও ফাঁসুড়ের সংলাপ।

 

কলকাতার সাধারণ এক চাকুরে (সেলসম্যান) থেকে শাশ্বতর চরিত্রের ক্রমাগত এগিয়ে চলা ও উত্থান কেন, কীভাবে? তার এক ব্রিটিশ স্পঞ্জ আইরন কোম্পানির অন্যতম প্রধান পদে উন্নতির সিঁড়িগুলো পেরোনোর কাহিনির মধ্যেই লুকনো থাকে আজকের অর্থনীতি, সমাজ ব্যবস্থার রীতি ও দুর্নীতির জঞ্জাল। সেটাকে দেখাতেই এই নাটকের আশ্রয় নিয়ে কমলেশ্বর একটি অভিনব পন্থার দিক নির্দেশ করলেন।

 

যেহেতু থ্রিলার এবং রহস্যময় এই কাহিনি, সুতরাং সবটুকু আর খোলসা করছিনা। হলে ঢুকে নিজের চোখে দেখার অভিজ্ঞতা হোক না দর্শকের! এমন জমাটি নাটক, দৃশ্যের পরতে পরতে অন্ধকার আলোয় মেশা জীবনের বাস্তবকে সচরাচর তো বাংলা ছবিতে দেখতে পান না! শেষপর্যন্ত অভিযুক্ত শাশ্বতর কী শাস্তি হয়, নাকি সেটা শুধুই কল্পনা – সেটা উহ্যই থাকল।

 

ছবির নির্মাণে কমলেশ্বর যে প্রকরণশৈলির ব্যবহার করেছেন, সেখানে সরল ন্যারেটিভের সঙ্গে অতীত ও বর্তমানের এক সাযুজ্য রাখার প্রয়াস সুন্দর। নাটককে কখনও অতিনাটক করে তোলেননি। ঠিক জায়গায় নাটক ভেঙে দিয়ে দর্শককে বাস্তবে ফিরিয়ে এনেছেন। খেলাটির বাঁধন বড় মজার। আর ছবির সংলাপ শুধু সময়োচিত নয়, রীতিমতো বাস্তব এবং ব্যবহারে তীক্ষ্ণ ও তীব্রও বটে। এবং একইসঙ্গে একঝাঁক শিল্পীদের নিয়ে কাজেও তিনি দারুণ কবজির জোর দেখিয়েছেন। প্রতিটি চরিত্র যেমন সার্বিক চেহারা নিয়ে উপস্থিত, তেমনই অভিনয়েও প্রতিটি শিল্পী নিজস্ব স্টাইল বজায় রেখেও চরিত্রের নানা দিকগুলো বিশ্বস্ত ভাবে ফুটিয়ে তুলেছেন।

 

জয়দীপ মুখোপাধ্যায়, চূর্ণী গঙ্গোপাধ্যায়, প্রিয়াঙ্কা সরকার, পায়েল সরকার, ঋদ্ধি সেন – প্রত্যেকেই নিজস্বতায় নজর কাড়েন। আর মূল অভিযুক্তের চরিত্রে শাশ্বত চট্টোপাধ্যায় (Saswata Chatterjee ) যেন নিজেকেই ডিঙিয়ে যান দৃশ্য থেকে দৃশ্যে। অনুপম রায়ের চলতি ধারার বাইরে একেবারে অন্যরকম আবহ রচনা আলাদা করে চিনিয়ে দিল তাঁকে। শেষপর্বে নিজের গাওয়া ‘আমি অনেক দূরের মানুষ…’ গানেও চেনা অনুপম একটু অচেনাই লাগল, যা বেশ ভাল। 

সবচেয়ে বেশি ভাল লাগল, একটি বিদেশি নাটককে কী সাবলীল সরল ও সহজ ভঙ্গিতে কমলেশ্বর বাংলায় আত্মীকরণ করলেন। পারলেন না শুধু নাটকের কাঠামোটির বঙ্গীকরণ। যে জন্য বাংলা ভাষায় ছবিটি হলেও শরীরে ও চেহারায় রয়ে গেল বিদেশি রং। তা হোক,  এমন স্পষ্ট কথা বলার কণ্ঠ তো খুব একটা শুনি না।

]

  • ছবি – অনুসন্ধান
  • পরিচালনা – কমলেশ্বর মুখোপাধ্যায়
  • অভিনয় – শাশ্বত চট্টোপাধ্যায়, পায়েল সরকার, প্রিয়াঙ্কা সরকার, চূর্ণী গঙ্গোপাধ্যায়, ঋদ্ধি সেন, জয়দীপ মুখোপাধ্যায়, কমলেশ্বর মুখোপাধ্যায়, জয় ভৌমিক, সেহের ভৌমিক, দীপাংশ কান্ত। 

[আরও পড়ুন: শুটিং চলাকালীন বড়সড় দুর্ঘটনা, পা ভাঙল অভিনেত্রী প্রিয়াঙ্কা সরকারের, জখম অর্জুন চক্রবর্তীও]

Sangbad Pratidin News App

খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ

Advertisement