shono
Advertisement

Baba, Baby O… Review: স্নেহ-ভালবাসার মিশেলে তৈরি ‘বাবা, বেবি ও…’, মন জয় করতে পারল যিশু-শোলাঙ্কি জুটি?

সত্যি ঘটনা অবলম্বনে তৈরি এই ছবির গল্প।
Posted: 04:56 PM Feb 04, 2022Updated: 04:57 PM Feb 04, 2022

শম্পালী মৌলিক: সামাজিক বার্তাবাহী এবং ইস‌্যুভিত্তিক ছবি করার ভালমন্দ দু’টো দিকই রয়েছে। এক্ষেত্রে সিনেমার একটা জোরাল ফোকাল পয়েন্ট থাকে। অন‌্যদিকটা হল, বক্তব‌্য পেশ করতে গিয়ে ছবিটা উপদেশমূলক হয়ে যেতে পারে। তখন আর সিনেমা দেখার আনন্দ থাকে না, অযথা ভারাক্রান্ত বোধ হয়। শিবপ্রসাদ-নন্দিতার হাউসের সদ‌্য মুক্তিপ্রাপ্ত ছবি ‘বাবা, বেবি ও…’ (Baba, Baby O…) সোশ‌্যাল-মেসেজ সমৃদ্ধ হলেও, নীতিবাগীশ হয়ে ওঠেনি অরিত্র মুখোপাধ‌্যায়ের পরিচালনা ও জিনিয়া সেনের কাহিনি-চিত্রনাট‌্যের গুণে।

Advertisement

হালকা মেজাজে অনেক গভীর কথা বলে ছবিটি। প্রসঙ্গত, জিনিয়ার দেখা জীবনের সত‌্যি ঘটনা থেকে এই ছবির গল্প অনুপ্রাণিত। এতদিনে সকলেই জানেন, সারোগেসি এ ছবির অন‌্যতম উপজীব‌্য। সেইসঙ্গে অসমবয়সি প্রেম ও সমকামিতা নিয়ে সমাজের ট‌্যাবুর প্রসঙ্গটিকেও চমৎকারভাবে চিত্রনাট‌্যে বুনে দেওয়া হয়েছে। প্রেমের আকাশের নক্ষত্র চেনায় এ ছবি। আর যেটা ভাল লাগে, সামগ্রিকভাবে পিতৃত্বের দায়িত্বের দিকটাও ওতপ্রোতভাবে জড়িয়ে গল্পের পরতে পরতে, যেখানে মায়ের অবিকল্প ভূমিকা দেখা যায়।

ছবির শুরুতেই অনিন্দ‌্য চট্টোপাধ‌্যায়ের কণ্ঠে ‘বাবা হওয়া এত সোজা নয়’ গানটি ফিল্মের ফুরফুরে মেজাজ তৈরি করে দেয়। আমরা দেখি মেঘ (যিশু সেনগুপ্ত) কর্পোরেট চাকুরে। বাবা-মাকে (রজত গঙ্গোপাধ‌্যায়-রেশমি সেন) নিয়ে তার ছোট পরিবার। যার অবিচ্ছেদ‌্য অংশ তার বন্ধু রাজা (মৈনাক বন্দ‌্যোপাধ‌্যায়)। সুখে-দুঃখে, কাজে-অকাজে রাজা-মেঘ জুটি। এহেন মেঘ বাবা হতে চায় সারোগেসির মাধ‌্যমে। বাবা-মা খুশি হয়, বাড়িতে নতুন অতিথি আগমনের কথা ভেবে।

[আরও পড়ুন: তীক্ষ্ণ চাহনি, লড়াকু মানসিকতা, ‘গাঙ্গুবাঈ কাঠিয়াবাড়ি’র ট্রেলারে মেজাজি আলিয়া]

যমজ সন্তানের (পটল-পোস্ত) বাবা হয় মেঘ। দু’টি বাচ্চা একসঙ্গে সামলানো কি চাট্টিখানি কথা? তাও আবার মা ছাড়া! প্রতিবেশী, আত্মীয়স্বজনের কৌতূহল তুঙ্গে ওঠে বাচ্চার ‘মা’ কে তাহলে? সারোগেসি নিয়ে স্পষ্ট ধারণা ছিল না, মেঘের বাবা-মায়েরও কিন্তু তারা পটল-পোস্তকে পেয়ে যারপরনাই খুশি। দিব‌্যি চলছিল। বাচ্চার খেলনা কিনতে গিয়ে মেঘের দেখা হয় বৃষ্টির (শোলাঙ্কি রায়) সঙ্গে। দেখামাত্রই ভাললাগা। এক্কেবারে নয়ের দশকের প্রেমের ফ্লেভার পাবেন দর্শক এখানে। কিন্তু বৃষ্টি খেলনার দোকানের মালকিন হলেও, বাচ্চা ভালবাসে না মোটেই। বরং সিঙ্গল ফাদার মেঘের জন‌্য সে দুঃখিত। যে আহা, বাচ্চাগুলোর মা নেই! অন‌্যদিকে মেঘের বাবা-মা ভাবে ছেলের কি তবে মেয়েদের প্রতি অনীহা? করণ জোহরের আত্মজীবনী পড়ে বাবা ভাবতে থাকে রাজা আর মেঘ সম্পর্কে নেই তো?

অনিবার্যভাবে মেঘ ক্রমশ বৃষ্টির কাছাকাছি আসে। বাচ্চা ভাল না-বাসলেও বৃষ্টি বাড়িতে এসে মেঘের দুই ছোট্ট ছানাকে উপহার দিয়ে যায়। ক্রমে জানা যায়, একা মায়ের (বিদীপ্তা চক্রবর্তী) সঙ্গে থাকে বৃষ্টি। তার মা দ্বিতীয়বার বিয়ে করেছিলেন। মা-মেয়ের সম্পর্কে কাঁটার মতো বিঁধে থাকে প্রয়াত আঙ্কলের উপস্থিতি। যাকে বৃষ্টি বাবা হিসাবে মেনে নিতে পারেনি, বরং তার আগের বাবার স্মৃতি সে আঁকড়ে থাকতে চায়। এই নিয়ে একটা জটিলতার জায়গা রয়েছে ছবির গল্পে, যা ক্রমশ পরিষ্কার হয়। রয়েছে বৃষ্টির বিদেশ-ফেরত বয়ফ্রেন্ড শৌভিক (গৌরব চট্টোপাধ‌্যায়)। যে এ দেশ থেকে বৃষ্টিকে নিয়ে যেতে চায়। তাহলে মেঘ-রোদ্দুরের বৃষ্টিকে ভালবাসার কী হবে? রামধনুর দেখা কি মিলবে না?

পরিচালক কোনও তাড়াহুড়ো করেননি, প্রেমের ঘুড়ির সুতো একটু একটু করে ছেড়েছেন। আর অদ্ভুত আবেগ মুড়েছে বৃষ্টি আর মেঘকে। ক্রমশ মেঘের প্রতি নির্ভরতা বাড়তে থাকে বৃষ্টির, অন‌্যদিকে শৌভিকের প্রতি দায়বদ্ধ সে। কিন্তু উপেক্ষাও করতে পারে না মেঘের অমোঘ টান। প্রেম আর দ্বিধায় ছারখার হতে থাকে মেয়ে। একটা চমৎকার সংলাপ আছে এখানে– বৃষ্টি বলে ‘আপনি খুব ফাদারলি’। মেঘ বলে, ‘আমি তো ফাদারই’। ছবিটা দেখতে দেখতে মনে হয়, অসমবয়সের প্রেম বলে কি কিছু হয়? প্রেম তো চিরকালই নাব্য। মেঘ বলে– ‘বন্ধুত্ব, প্রেম সবেতে বাৎসল‌্য থাকে।’ ছবির এই পর্বে চমক হাসানের ‘এই মায়াবী চাঁদের রাতে’ গানটা শুনতে ভাল লাগে। এরপর কী হবে? বৃষ্টি কি সিডনির ফ্লাইট ধরবে? না কি পটল-পোস্তর মতো মেঘের কাঁধে মাথা রেখে ঘুমাবে?

এ ছবি একা বাবার যতখানি, তার চেয়েও বেশি তীব্র প্রেমের। শুভঙ্কর ভড়ের ক‌্যামেরায় বেশ স্মার্ট লুক হয়েছে ‘বাবা, বেবি ও…’-র। সম্রাজ্ঞী বন্দ‌্যোপাধ‌্যায়ের লেখা সংলাপ ছবির মোক্ষম মুহূর্তগুলো আরও ঘনীভূত করেছে। অমিত-ঈশান আর চমক হাসানের মিউজিক ছবির অন‌্যতম আকর্ষণ। ঈশানের ‘রং মশাল’ এবং শোভন-সঞ্চারীর ‘বাঁধনে বাঁধিব’ গান দু’টিও শুনতে বেশ লাগে। অভিনয়ে সকলেই যথাযথ, তবে মন কেড়ে নেবে দু’টি ফুটফুটে শিশু। আর যিশু সেনগুপ্ত বড় বেশি ভাল। বাবা-বন্ধু-ছেলে-প্রেমিক প্রত‌্যেকটি ভূমিকাতেই তিনি দুরন্ত।

শোলাঙ্কির প্রথম ছবি হিসাবে তাঁকে সপ্রতিভ দেখিয়েছে। পর্দায় যিশু আর তাঁর রসায়ন জমে গিয়েছে। তবে ছবির দৈর্ঘ‌্য কম হতে পারত। রজত গঙ্গোপাধ‌্যায় ও রেশমি সেন পারফেক্ট বাবা-মা রূপে। অন‌্যদিকে বিদীপ্তা চক্রবর্তী যে কত শক্তিশালী অভিনেত্রী স্বল্প পরিসরে আবারও প্রমাণ করলেন। মৈনাক বন্দ‌্যোপাধ‌্যায়ের সাবলীল অভিনয় ভাল লাগে। গৌরব চট্টোপাধ‌্যায় বেশ মানানসই তাঁর চরিত্রে। সব মিলিয়ে সরস্বতী পুজোর মুখে ফিল-গুড ছবি, মন ভাল করা প্রেমের ছবি, দেখতেই হয়।

ছবি – বাবা, বেবি ও…
পরিচালনা – অরিত্র মুখোপাধ‌্যায়
অভিনয় – যিশু সেনগুপ্ত, শোলাঙ্কি রায়, মৈনাক বন্দ্যোপাধ্যায়, গৌরব চট্টোপাধ্যায়, বিদীপ্তা চক্রবর্তী, রজত গঙ্গোপাধ্যায়, রেশমি সেন

[আরও পড়ুন: এ যে সাক্ষাৎ জটায়ু! লোকসভায় বিজেপি সাংসদকে দেখে চমকে উঠলেন অনেকেই]

Sangbad Pratidin News App

খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ

Advertisement