shono
Advertisement

Boudi Canteen Review: বিনোদনের মোড়কে গুরুত্বপূর্ণ বার্তা দিল পরমব্রত-শুভশ্রীর ‘বৌদি ক্যান্টিন’, পড়ুন রিভিউ

হালকা মেজাজের স্বামী-স্ত্রীর সম্পর্কের কাহিনি এটি নয়।
Posted: 02:22 PM Oct 03, 2022Updated: 03:56 PM Oct 03, 2022

বিদিশা চট্টোপাধ‌্যায়: স্বাদে, গন্ধে এবং বর্ণে ‘বৌদি ক্যান্টিন’ (Boudi Canteen) একটু আলাদা, অন্তত পুজোর (Durga Puja 2022) মধ্যে যে সব ছবি মুক্তি পেয়েছে তার মধ্যে। ইন্টারভ‌্যালের আগে পর্যন্ত ছবিটা দেখতে দেখতে মনে হয় বেশ হালকা মেজাজের স্বামী-স্ত্রীর সম্পর্কের ছবি। কিন্তু ছবি যত এগোয়, তত বোঝা যায় আসলে তত সহজ নয়।

Advertisement

‘বৌদি ক্যান্টিন’-এ আমরা দেখি পৌলমী (শুভশ্রী) এবং সৌরিষের (পরমব্রত) সংসার। সৌরিষ একটি বাংলা পত্রিকায় কাজ করে, মেয়েদের পাতা দেখে আর পৌলমী স্কুলে পড়ালেও তার স্বপ্ন শেফ হওয়া। আসলে সে রান্না করতে ভালবাসে। কিন্তু শাশুড়ির কখনওই চায় না বাড়ির বউ সারাদিন রান্নাঘরে ব্যস্ত থাকুক। একদিকে দেখলে মনে হবে, বাহ! বেশ প্রোগ্রেসিভ শ্বশুরবাড়ি। আসলে হয়তো অনেক মেয়েদের জন্য তাই। এমন শ্বশুরবাড়ি হলে তো ভালই, যেখানে তাকে বাইরে কাজ করতে উৎসাহ দেওয়া হচ্ছে। কিন্তু পৌলমীর ক্ষেত্রে বিষয়টি তেমন নয়। কারণ সে রান্নাবান্না করতেই ভালবাসে।

সিনেমা এমন একটা মাধ্যম যা অনেক বেশি সংখ্যক দর্শককে প্রভাবিত করতে পারে। ফলে ছবির শুরুতে যখন কেন্দ্রীয় চরিত্র রান্নাঘরেই মুক্তি খুঁজে নেয় তখন মনে হয় পরমব্রত পরিচালিত ছবি কি অজান্তেই যুগ যুগ ধরে চলে আসা মেয়েদের জন্য বরাদ্দ যে টাস্ক সেটাকেই উদযাপন করে ফেলছে? কারণ কেন্দ্রীয় চরিত্র পৌলমী বারবার প্রশ্ন তুলেছে, ছেলেদের মতো হওয়াটাই কি নারী স্বাধীনতা?

বুঝতে হবে এই ছেলেদের মতো হওয়ার ধারণাটা কোথা থেকে আসে। এটা স্বাধীনতা কি না সেটা পরের ব‌্যাপার। আসলে মেয়েদের জন্য পিতৃতান্ত্রিক সমাজের ঠিক করে দেওয়া নিয়মগুলো ভেঙে ফেলে জেন্ডার নির্বিশেষে নানা কাজে অংশ নেওয়া অর্থাৎ ছেলেদের কাজগুলো করতে পারার অধিকার হল স্বাধীনতার দিকে প্রথম ধাপ। এবং মেয়ে হিসেবে পৌলমীর মতো কেউ তথাতকথিত পিতৃতন্ত্রের ঠিক করে দেওয়া টাস্ক নিজের ইচ্ছায় করতে চাই কি না সেটা ব্যক্তিগত লিবারেশনের অঙ্গ। আর নারী স্বাধীনতার নিরিখে পরের ধাপ। কারণ এখনও সংখ্যাগুরু নারী পিতৃতন্ত্রের শিকার এবং বেশিরভাগ মেয়েরাই হেঁশেলের বাইরে থাকাকেই স্বাধীনতা মনে করে। কারণ তাঁরা চান বা না চান স্বামী অফিস করবে আর তারা রেঁধে-বেড়ে মুখে তুলে দেবে এটাই যেন নিয়ম।

আমাদের বাড়িতে মায়েদের একদিনও ছুটি নেই রান্নাঘর থেকে। তাই পরমব্রত চট্টোপাধ্যায় (Parambrata Chattopadhyay) পরিচালিত এই ছবির দায়িত্ব অনেক বেড়ে যায়। পৌলমীর স্বপ্ন যে একান্তই ব্যক্তিগত এবং পৌলমী আর পাঁচটা মেয়েদের হয়ে কথা বলছে না, সে আজকের দিনের নারীর মুখপাত্র নয়– সেটা খুব স্পষ্ট করে বোঝানোর দায় আছে পরিচালকের। কারণ ঘরে ঘরে বেশিরভাগ মেয়েরা ভুগছে এই রান্নাঘরে থাকতে চায় না বলেই, তাদের অ্যাসাইন করা কাজ করতে চায় না বলেই। একটি সংলাপে সেটা বলার চেষ্টা আছে। যেখানে পৌলোমীর বন্ধু তাকে বলে, “কোনটা মেয়েলি, কোনটা ছেলেদের মতো এবং সেটাকে  কীভাবে দেখব, কীভাবে নেব এই বিষয়টা এত সরল নয়।”

খুব জরুরি কথা এবং সেটা আরও একটু বিশদে বলা উচিত ছিল। পৌলমীর চরিত্রের পাশাপাশি আরও একটি পার্শ্বচরিত্র থাকা উচিত ছিল যে স্বপ্ন দেখে বাইরে বেরিয়ে চাকরি করার। তা একেবারে যে নেই তা নয়। পৌলমীর শাশুড়ির চরিত্র প্রগতিশীল, মেয়েদের বিশ্বজয় করাতেই বিশ্বাসী। কিন্তু তার চরিত্রায়নে আনা হয়েছে পিতৃতন্ত্রের রেশ অর্থাৎ এটা তার কাছে প্রায় নিয়মের মতো। শুধু তাই নয়, আদব কায়দায়, সব কিছুতে তিনি ক্লাস মেনটেন করায় বিশ্বাসী এবং সেখানে উঠে আসে শ্রেণিবৈষম্যের বিষয়টিও। কোনও কিছু শৃঙ্খলে পরিণত হলে সেটা আর স্বাধীনতা থাকে না। পৌলমীর ক্ষেত্রে তাই সেটা বাঁধনে পরিণত হয়। কিন্তু তার শাশুড়ি কেন এমন সেটা ছবির শেষে দেখানো হয়।

ছবির তৃতীয় লেয়ার হচ্ছে পরমব্রত অর্থাৎ সৌরিষের চরিত্র। এই চরিত্র খানিকটা ‘ডেথ ইন দ‌্য গঞ্জ’ -এর ‘শুটু’র চরিত্র মনে করায়। সৌরিষ একেবারে আইডিয়াল হাজব্যান্ড বলতে যা বোঝায় তাই। মায়ের থেকে লুকিয়ে স্ত্রীকে সাহায্য করে স্টার্টআপ ক্যান্টিনের পার্টনার হতে। সব বিষয়ে উৎসাহ দেয়। মেয়েদের পাতায় খুব যত্ন নিয়ে লেখে, কারণ তার উৎসাহ আছে। কিন্তু একটা সময় চাকরি চলে যাওয়ায় পর স্ত্রীর কাজ এবং বিজনেস পার্টনার বাবলুদাকে (সোহম) নিয়ে হিংসে করতে শুরু করে। যদিও মুখ ফুটে সেকথা বলতেও পারে না এবং নিজের চাকরি যাওয়ায় কথাও বলে উঠতে পারে না সৌরিষ।

অনেক কিছুই সে পেরে ওঠে না। মায়ের মুখের ওপরও যেমন কোনও কথা বলতে পারে না, তেমন অভিমান হলেও বলতে পারে না। তবে সাইলেন্স সবসময় নরম মনের পরিচয় নাও হতে পারে। সাইলেন্স বিষাক্তও হতে পারে। ছবিতে সেটা পরিষ্কার হয় একটি দৃশ্যে। আমার মতে গোটা ছবির এটাই সেরা সিকোয়েন্স।

ছাদে দাঁড়িয়ে সৌরিষ ও পৌলমীর কথোপকথ শুনে খুব চেনা লাগে, চোখ ভিজে যায়। সৌরিষ এসে পৌলমীর কাছে ক্ষমা চায় এবং জমে থাকা অনেক কথা বলে। পুরুষকে যে পুরুষালি হতেই হয়– পিতৃতন্ত্রের এই নিয়মের মধ্যে পড়ে সৌরিষ ছোটবেলা থেকে নির্যাতিত হয়েছে। সে মৃদুভাষী, মেয়েদের সাজগোজ নিয়ে মতামত দিতে ভালবাসত বলে, পড়ে গেলে ব্যথায় কেঁদে উঠত বলে তাকে আরও ‘টাফ’ হতে বলা হয়েছে বরাবর। নিজের স্বাভাবিক আচরণ ত্যাগ করে সে ক্রমাগত একটা অন্য মানুষ হয়ে ওঠার চেষ্টা করেছে।

এই ছবিতে এই তিনটি চরিত্রের নিজস্ব স্ট্রাগল রয়েছে, ট্রমা রয়েছে। জেন্ডার রোল নিয়ে নানান প্রশ্ন তোলা হয়েছে। পৌলমীর চরিত্র ফোকাসে থাকলেও ব্যক্তিগতভাবে আমার মনে হয়েছে স্বল্প পরিসরে সৌরিষের চরিত্রায়ন সবচেয়ে যত্ন নিয়ে লেখা এবং সূক্ষ্ম। ছবিতে তুলনায় মেয়েদের দাপট থাকলেও, নারী চরিত্রের হৃদয়ের গভীরে যেতে বেগ পেতে হয়েছে এবং তাই একটু ওপর ওপর ধরে নিয়ে লেখা। তবে এই যে ছবি দেখে বেরিয়ে নানান ভাবনা তৈরি হয়, প্রশ্ন ওঠে এটাই ছবির সাফল্য। পরমব্রত চট্টোপাধ্যায়কে ধন্যবাদ এই প্রশ্নগুলো তোলার জন্য।

সিনেমা- বৌদি ক‌্যান্টিন
অভিনয়- পরমব্রত চট্টোপাধ‌্যায়, শুভশ্রী গঙ্গোপাধ‌্যায়, অনসূয়া মজুমদার, সোহম চক্রবর্তী
পরিচালক- পরমব্রত চট্টোপাধ‌্যায় 

Sangbad Pratidin News App

খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ

Advertisement