shono
Advertisement

সন্দীপ রায়ের পরিচালনায় ‘ফেলুদা’হয়ে উঠতে পারলেন ইন্দ্রনীল? পড়ুন ‘হত্যাপুরী’র রিভিউ

‘বাদশাহী আংটি’-র প্রায় আট বছর পর সন্দীপ রায় ফিরলেন তাঁর নতুন 'ফেলুদা' ইন্দ্রনীল সেনগুপ্তকে।
Posted: 05:47 PM Dec 23, 2022Updated: 05:47 PM Dec 23, 2022

বিদিশা চট্টোপাধ‌্যায়: ফেলুদার (Feluda) গল্পের ধাঁচ মোটামুটি আমাদের সকলেরই জানা। আর গল্পগুলো তো রয়েইছে। যে সব গল্প নিয়ে এখনও পর্যন্ত সিনেমা হয়েছে তার মধ্যে ‘হত‌্যাপুরী’ (Hatyapuri) গল্পে অল্পবিস্তর অ‌্যাকশন থাকলেও অ‌্যাডভেঞ্চার কম। আর বদলে যাওয়া সময়ে দাঁড়িয়ে যেভাবে বাঙালির সেন্স ও সেন্সিবিলিটির একটা আমূল পরিবর্তন হয়েছে সেখানে এমন একটা ফেলুদা গল্প নিয়ে ছবি করার ঝুঁকি নেহাত কম নয়। কিন্তু পরিচালক সন্দীপ রায় (Sandip Ray) সেই ঝুঁকিটা নিয়েছেন। আর তার চেয়েও বড় ঝুঁকি হল এই ছবিতে নতুন ফেলুদার আবির্ভাব।

Advertisement

‘বাদশাহী আংটি’-র প্রায় আট বছর পর সন্দীপ রায় ফিরলেন তাঁর নতুন ফেলুদা ইন্দ্রনীল সেনগুপ্তকে (Indraneil Sengupta) নিয়ে। ‘হত‌্যাপুরী’ ছবিতে অভিনেতা ইন্দ্রনীলের কাস্টিং নিয়ে অনেকেই নানা আশঙ্কায় ছিলেন। ‘ফেলুদা’-র যে ঐতিহ‌্য সেটার ভার বহন করতে পারবেন তো! তাই এই নতুন ফেলুদা ছবি হিসাবে কেমন হল, তার চেয়েও বড় প্রশ্ন ছিল, নতুন ফেলুদা পারলেন কি? এবং এই প্রশ্নের উত্তর হল– হ্যাঁ, ইন্দ্রনীল পেরেছেন। এবং শুধু পেরেছেন নয়, এক্কেবার ‘লালমোহন বাবু’-র ভাষায় যদি বলি, “পাসড উইথ ফ্লাইং কালার্স!”

একেবারে প্রথম দৃশ‌্য দেখেই বুঝে ফেলা কঠিন হয় না, ‘ফেলুদা’-র চরিত্রের স্টিয়ারিং অভিনেতা ইন্দ্রনীল সেনগুপ্তর হাতে এবং তিনি দক্ষ ড্রাইভার। এবং ট্রেনের বদলে নিজেই লালমোহনবাবুর গাড়ি চালিয়ে পুরী আসার ব‌্যাপারটা আজকের সময়ে দাঁড়িয়ে মানিয়ে যায়। সন্দীপ রায় চাইলেই তাঁকে ফ্লাইটে পুরী পাঠাতে পারতেন। কিন্তু এই ফেলুদা তো এমনই হবে, যে দৌড়ঝাঁপ ভালবাসে। গল্পে অ‌্যাডভেঞ্চার না থাক, কিন্তু ফেলুদা যে অ‌্যাডভেঞ্চারপ্রিয় এই সূক্ষ্ম টাচে সেটা বোঝা যায়।

[আরও পড়ুন: সালফিউরিক অ্যাসিডে নিভল ল্যাবের আগুন! ‘বাংলা মিডিয়ামে’র দৃশ্য দেখে অট্টহাসি নেটপাড়ায়]

ইন্দ্রনীলের অভিনয় দেখলে বোঝা যায় ‘লিগ‌্যাসি’-র চাপ তিনি নিজের কাঁধে চাপিয়ে নেননি। তিনি কারও মতো নন। তাঁর তীক্ষ্ণ চেহারা, উপস্থিতি, সিগারেট ধরা, ঠোঁটের কোণে মুচকি হাসি দেখলে মনে হয়নি তিনি কাউকে নকল করছেন। তবু সব মিলিয়ে প্রয়াত সৌমিত্র চট্টোপাধ‌্যায়ের কথা মনে করিয়ে দিয়েছেন। গল্প এগিয়েছে একেবারে টেক্সট বুক মেনে। সিধুজ‌্যাঠার অনুপস্থিতিতে ফেলুদার ইন্টারনেট লাগে– সন্দীপ রায়ের এই ছোট ছোট সংযোজন মনে করিয়ে দেয় এটা ১৯৭৩-১৯৭৪ নয় (মূল গল্পের সময়কাল)।

তবে আরও কিছু স্তর যোগ হলে মন্দ হত না। তখন ছিল ‘স্কাইল‌্যাব’ নিয়ে আলোড়ন, আর বর্তমান সময়ের প্রেক্ষাপটে কোভিড-পূর্ব সময়ের (ছবির সময়কাল) কোনও উল্লেখযোগ‌্য ঘটনা থাকতেই পারত। তখনকার পুরী আর এখনকার পুরীও আর এক নেই। ফলে মূল গল্পের কিছু উপাদান এই সময়ে দাঁড়িয়ে যুগোপযোগী নয়। কিন্তু মূল গল্পের যে এসেন্স, অর্থাৎ সমুদ্রতটে গা-ছমছমে গোয়েন্দা গল্প– লালমোহনবাবুর ভাষায় ‘কেমন যেন একটা ইয়ে ভাব’, সেটা এই ছবিতে আছে।

ইন্দ্রনীল সেনগুপ্তর পরেই যার উল্লেখ করতে হয় তিনি হলেন, অভিজিৎ গুহ (Abhijeet Guha)। লালমোহন গাঙ্গুলির চরিত্রে কাস্টিং করা বোধহয় ‘ফেলুদা’-র চাইতেও কঠিন। সন্দীপ রায় সেটাও খুব সফলভাবেই করেছেন। লালমোহন গাঙ্গুলির কথা ভাবলে যেটা মনে হয়– একজন অত‌্যন্ত কল্পনাপ্রবণ মজাদার, রসিক অথচ একটু নেইভ, আপাতদৃষ্টিতে ভীতু এবং ভেতো বাঙালি হলেও তার ভিতরে একটা সৎ এবং সাহসী বন্ধু, ভাল মানুষ আছে। অভিজিৎ গুহ কিন্তু সেই সবকটা দিক মাথায় রেখে অভিনয়টা করেছেন, আর খানিকটা তো তিনি নিজেও তাই। তাই লালমোহন গাঙ্গুলির চরিত্রে তাঁকে মানিয়ে গিয়েছে দুর্দান্ত।

‘তোপসে’ চরিত্রে আয়ুষ দাস কিন্তু বাড়াবাড়ি না করে যোগ‌্য সঙ্গত করে গিয়েছেন গোটা ছবিজুড়ে। পুঁথি-পাগল দুর্গাগতি সেনের চরিত্রে বইতে যতটুকু, পরিচালক পরাণ বন্দ্যোপাধ‌্যায়কে ততটুকুই দিয়েছেন। কিন্তু তাঁকে আরও একটু স্পেস দিলে ভাল লাগত। আসলে গল্পের বই পড়া আর সিনেমা দেখা তো এক অভিজ্ঞতা নয়। আর এই গল্পের সময়কাল যা, তারপর প্রায় পঞ্চাশ বছর পেরিয়ে গিয়েছে। দুর্গাগতি সেনের মতো জটিল অথচ আর্ট-পাগল মানুষকে পর্দায় বোঝার জন‌্য আরেকটু সময় লাগে কিংবা বিলাস মজুমদারের (অভিনয়ে সাহেব চট্টোপাধ‌্যায়) মতো ক্রিমিনাল মাইন্ড এই সময়ে দাঁড়িয়ে আরও ভয়ংকর হতে পারত।

তবে শুভাশিস মুখোপাধ‌্যায়ের (Subhasish Mukhopadhyay) ‘লক্ষ্মণ ভট্টাচার্য’রা চিরকালই এইরকম থাকেন, বড়জোর দেখনদারি খানিক বদলায়। তাদের দৌড় ওই পর্যন্তই। শুভাশিস মুখোপাধ‌্যায় তাই ‘পারফেক্ট ফিট’। আফসোস রয়ে গেল সুপ্রিয় দত্তর মতো অভিনেতাকে তেমনভাবে কাজে লাগানো হয়নি। সন্দীপ রায় পরিচালিত ‘হত‌্যাপুরী’ দেখতে দেখতে আসলে ফিরে যাওয়া যায় টেক্সট বইয়ে। শেষের গোলটেবিল আলোচনা একটু দীর্ঘায়িত মনে হলেও সেটা ফিরিয়ে দেয় পুরনো ফ্লেভার। সবমিলিয়ে এই ডিসেম্বরে ফেলুদার সঙ্গে মোলাকাত করতে দেখতে হবে ‘হত‌্যাপুরী’। আর ম‌্যান অফ দ‌্য ম‌্যাচ অবশ্যই ইন্দ্রনীল সেনগুপ্ত।

ছবি- হত্যাপুরী
অভিনয়ে- ইন্দ্রনীল সেনগুপ্ত, অভিজিৎ গুহ, আয়ুষ দাস, পরাণ বন্দ্যোপাধ্যায়, শুভাশিস মুখোপাধ‌্যায়, সুপ্রিয় দত্ত, সাহেব চট্টোপাধ্যায়, ভরত কল
পরিচালনায় – সন্দীপ রায়

[আরও পড়ুন: ফিরে দেখা ২০২২: লতা মঙ্গেশকর থেকে ঐন্দ্রিলা শর্মা, বাইশে চলে গেলেন যাঁরা]

Sangbad Pratidin News App

খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ

Advertisement