Revolver Rohoshyo Review: অঞ্জন দত্তর হাত ধরে টলিউডে নতুন গোয়েন্দা, পড়ুন ‘রিভলভার রহস্য’র রিভিউ

05:38 PM Feb 03, 2023 |
Advertisement

This browser does not support the video element.

শম্পালী মৌলিক: বাংলার ফিল্ম-বাজারে যখন গোয়েন্দার ছড়াছড়ি, সেই সময় নতুন গোয়েন্দা বড়পর্দায় নিয়ে এলেন অঞ্জন দত্ত (Anjan Dutt)। প্রায় তিন বছর পর প্রেক্ষাগৃহে এল তাঁর নতুন সিনেমা ‘রিভলভার রহস্য’ (Revolver Rohoshyo)। তাও আবার নিজের লেখা বই থেকে সৃষ্ট এই গোয়েন্দা ফ্র‌্যাঞ্চাইজি। পরিচালক অঞ্জন দত্ত বড় চ‌্যালেঞ্জ নিয়েছেন নিঃসন্দেহে। তবে ওই একটু পালটে নিয়ে বলি– পুরনো চাল স্বাদে বাড়ে। নির্দেশক-অভিনেতা অঞ্জনের ‘রিভলভার রহস‌্য’ দেখলেই সে কথা মনে হবে।

Advertisement

‘ড‌্যানি ডিটেকটিভ আইএনসি’-র গোয়েন্দা সুব্রত শর্মাকে নিয়ে তিনি এর আগে সিরিজ করেছিলেন তবে এবারে সম্পূর্ণ নতুন গল্প নিয়ে তাঁর সিনেমা। লেখার ধরন ‘পাল্প ফিকশন থ্রিলার’ গোছের। এই গোয়েন্দা সর্বার্থেই ছকভাঙা। ডিটেকটিভ বলতে আমরা যেমন বুঝি প্রখর ধীশক্তি সম্পন্ন। প্রবল তার পর্যবেক্ষণ শক্তি, মাছিও গলতে পারবে না তার নজর এড়িয়ে। তার এক সহকারী থাকবে, যে বুদ্ধিতে খাটো হবে এবং প্রধান গোয়েন্দা তাকে দাবড়ে রাখবে।

না, অঞ্জনের সুব্রত (সুপ্রভাত দাস) তেমন নয়। ছ’ফুট লম্বা নয়, সে কোনওদিন ডিটেকটিভ হতেও চায়নি। উত্তর কলকাতার রকে বসা, পাড়ায় চায়ের দোকানে ম‌্যাজিক দেখানো, গলি ক্রিকেটে হাত পাকানো, অল্প-স্বল্প ঢপ মারা সাধারণ মানুষের মতোই সে। আর সুব্রত তার সহকারীকে দাবড়ে রাখবে কী, উল্টে তার সহযোগী ড‌্যানি ব‌্যানার্জি-ই (অঞ্জন) ধমকায় তাকে। যদিও সেই ড‌্যানি মারা গিয়েছে একটা কেস সলভ করতে গিয়ে। কিন্তু ছেড়ে যেতে পারেনি সুব্রতকে। এখনও তাকে গাইড করে বস ড‌্যানি। সর্বক্ষণ তার ঘাড়ে চেপে থাকে! শুধু ঘাড়টা মটকায় না! সে নির্দেশ দেয় নেপথ্যে থেকে আর ঝাড়পিট করে সুব্রত।

[আরও পড়ুন: দেবের সঙ্গে ‘বাঘাযতীন’ ছবির শুটিং শুরু, অভিজ্ঞতা কেমন? জানালেন সুদীপ্তা চক্রবর্তী]

শুরুতে একটা চমৎকার চেজ সিকোয়েন্স। দার্জিলিংয়ের খাড়াই গলিঘুঁজি, সর্পিল পথ পেরিয়ে দুষ্কৃতীকে ধাওয়া করছে সে। মার খাচ্ছে, পালটা দিচ্ছে, আবার হারছে। দুরন্ত সম্পাদনার গুণে দৃশ‌্যটা আবার ফিরে আসছে ছবিতে। তখন বোঝা যায় দার্জিলিং কেন পরিচালকের অনিবার্য অন্বেষণ। ড‌্যানি তীব্র বকুনি দেয় সুব্রতকে ঘন ঘন প্রেমে পড়ে বলে। পালটা সুব্রত যখন বলে, ‘আমি কাউকে ভালবাসলে আপনি এত রাগ করেন কেন?’ দুর্মুখ ড‌্যানি সটান বলে, ‘কে বলেছে আমি কাউকে ভালবাসিনি? এই তো তোমার প্রেমে লটকে রয়েছি…।’

সুব্রতর উত্তর, ‘আপনি গোয়েন্দাগিরির প্রেমে আটকে…।’ ভূত আর রক্তমানুষের সত‌্যসন্ধানীর যুগলবন্দি ইন্টারেস্টিং! এভাবেই আনাড়ি সুব্রত ঘাঁটা মানুষ, মৃতদেহ, রঙিন সম্পর্ক, পাপ, দুর্নীতি, মিথ্যে পেরতে পেরতে সত্যি গোয়েন্দা হয়ে ওঠে। সে এক সময় ছিল ক্রাইম রিপোর্টার, চাকরি হারিয়ে হয়েছে টিকটিকি। ‘ড‌্যানি ডিটেকটিভ আইএনসি’ চালায় সে-ই। রয়েছে তার বোন রত্না (তানিকা) আর মৃত বসের স্ত্রী মালা (সুদীপা)। এমন সময় তার কাছে একটা কেস আসে, ব‌্যবসায়ী রাজা বন্দ্যোপাধ্যায়ের (সুজন নীল) নিখোঁজ স্ত্রী তমালিকে (তনুশ্রী) খুঁজে বের করার জন‌্য।

আনাড়ি হলেও তার অল্টার ইগোর মতো ড‌্যানিকে সঙ্গে নিয়ে সুব্রত নেমে পড়ে রহস‌্য সমাধানে। রহস‌্য ঘনায় দার্জিলিংয়ের স্যাঁতসেঁতে কুয়াশায়। তবে এ ছবির দার্জিলিং অঞ্জনের আগের ছবিগুলোর থেকে একদম আলাদা। ক‌্যামেরার দায়িত্ব সুন্দরভাবে সামলেছেন প্রভাতেন্দু মণ্ডল। নীল দত্তর সুরে অঞ্জনের কণ্ঠে ‘পুরনো চাঁদ আমার এখনও আকাশে’ ছবির শ্রেষ্ঠ প্রাপ্তি। অ‌্যাকশন, মজা, বুদ্ধিদীপ্ত সংলাপ সব মিলিয়ে ছবি জমে যায়। রহস‌্য ছবির গল্পটা কিছুতেই বলা যাবে না। তবে রিভলভার আর বুলেট গল্পের মজ্জায় মিশে। ভাল লাগে মধ‌্যবিত্ত কুঁড়ে বাঙালি সুব্রতর অনমনীয় মরালিটি। দ্বিতীয়ার্ধে কোনটা সত্যি, কোনটা মিথ্যে ধাঁধা লেগে যাবে। আর ধাঁধা সমাধানের জন‌্য সুব্রত তো আছেই। যা পর্দায় দেখাই ভাল। ক্লাইম‌্যাক্সে টুইস্ট আছে, চক্রান্ত আছে। তবে ছবির শেষটা অবিশ্বাস‌্য লাগে। কিন্তু সিনেমায় তো এমন হয়ই!

এবার আসি অভিনয়ের প্রসঙ্গে। আন্ডারডগ সুব্রতর চরিত্রে সুপ্রভাত দাস (Suprobhat Das) মসৃণ অভিনয় করেছেন। তবে আত্মতুষ্টির জায়গা নেই, ফ্র‌্যাঞ্চাইজির স্টিয়ারিং নিজের নিয়ন্ত্রণে রাখতে তাঁর আরও অনুশীলনের প্রয়োজন। তনুশ্রী ইদানীংকালে সবক’টা ছবিতে ছাপ রেখেছেন, এ ছবিও তার ব‌্যতিক্রম নয়। রহস‌্য, অসহায়তা মিলিয়ে তাঁর অভিনয় বাস্তবছোঁয়া। মক্কেলের চরিত্রে সুজননীল মুখোপাধ‌্যায় দারুণ। কেয়ারটেকার বনমালীর চরিত্রে চন্দন সেন সাবলীল। তমালির প্রেমিক জাভেদের চরিত্রে শোয়েব কবীর বেশ বিশ্বাসযোগ‌্য।

ছোট ছোট চরিত্রে কাঞ্চন মল্লিক, অভিজিৎ গুহ, ছন্দক চৌধুরীও যথাযথ। তবে সুদীপা বসু আর তানিকা বসুর চরিত্র দু’টি চিত্রনাট্যে আরও কিছুটা জায়গা পেলে ভাল হত। সবচেয়ে ইন্টারেস্টিং বিষয় হল, অঞ্জন দত্তর প্রোডাকশনের প্রথম ছবি এটা। পরিচালক অঞ্জনের হাত ধরেই আবির কিংবা যিশুর ব্যোমকেশ হয়ে ওঠা, সেই পরিচালকই প্রথাভাঙা গোয়েন্দা সুব্রতকে নিয়ে এলেন। সত্তর বছর বয়সেও ‘পুরনো স্বপ্ন নতুন করে দেখতে পাওয়া যায়’ অঞ্জন প্রমাণ করলেন। বক্স অফিসে সুব্রত-র সাফল‌্য-ব‌্যর্থতা পরের কথা, এসেছে এমন এক গোয়েন্দা, যে আমার-আপনার বাড়ির ছেলের মতো।

ছবি – রিভলভার রহস‌্য
অভিনয়ে – অঞ্জন দত্ত, সুপ্রভাত দাস, তনুশ্রী চক্রবর্তী, সুজননীল মুখোপাধ্যায়, চন্দন সেন, সুদীপা বসু, তানিকা বসু
পরিচালনায় – অঞ্জন দত্ত

[আরও পড়ুন: ‘MP হলে স্যার বলতে হবে তাই ভোটে হারিয়ে দিয়েছে’, অভিযোগ হিরো আলমের]

This browser does not support the video element.

Advertisement
Next