shono
Advertisement

নারীর পৃথিবী না পালটাক, পর্দায় প্যাডম্যান-এর বদলের ডাকটুকুই প্রাপ্তি  

কেমন হল প্যাডম্যান-এর যাত্রা। হলে যাওয়ার আগে জেনে রাখুন। The post নারীর পৃথিবী না পালটাক, পর্দায় প্যাডম্যান-এর বদলের ডাকটুকুই প্রাপ্তি   appeared first on Sangbad Pratidin.
Posted: 03:37 PM Feb 09, 2018Updated: 05:02 PM Jul 11, 2018

সুপর্ণা মজুমদার: লজ্জা-ঘেণ্ণা-ভয় তিন থাকতে নয়। আবার লজ্জা নাকি নারীর ভূষণ! নীতিকথার ছড়াছড়ি কম নয়। কোনটা মানব, আর কোনটা মানব না! এই ভাবতে ভাবতেই সময়টা কেটে গেল। খেলতে খেলতেই একদিন জানতে পারলাম আর আমি ‘ধিঙ্গি’ মেয়ের মতো ছেলেদের সঙ্গে গিয়ে খেলতে পারব না। কেন? আমার মেয়েবেলা যে শেষ। এখন আমার পরিণত ‘শরীর’। যে ‘শরীর’ এবার থেকে লুকিয়ে রাখতে হবে। পাছে দুষ্টু লোকের নজরে পড়ে যায়। ‘পবিত্র’ দেহটা নষ্ট হয়ে যাবে যে! আর মাসের ‘ওই দিনগুলোতে ‘একটু আলাদা থাকতে হবে। ব্যস, এইটুকু তো করতেই হবে। মেয়ে হয়ে জন্মেছি যখন এটুকু সহ্য করতে পারব না?

Advertisement

করতে পারি। এ পৃথিবীকে নবজাতক দিতে ২০টি হাড় একসঙ্গে ভাঙার ব্যথা পর্যন্ত সহ্য করতে পারি। কিন্তু কেবলমাত্র মিথ্যে লজ্জার খাতিরে কেন করব? কেন মেয়ে হওয়ার অপরাধে মায়ের পেটেই মরব? কেন মাঝরাতে ফাঁকা বাগুইআটির রাস্তা দিয়ে যাব না?  কেন জিনস পরব না? আর কেনই বা দোকানে গিয়ে উঁচু আওয়াজে বলব না, দাদা, ওমুক স্যানিটারি ন্যাপকিনটা দিন। সেটাকে প্রকাশ্যে কেন বাড়িতে নিয়ে ঢুকব না? বহুদিনের এই প্রশ্ন এতদিনে উঠে এল বলিউডের পর্দায়। যেখানে ঋতুস্রাবকে কোনও নীল তরল হিসেবে দেখানো হল না। দেখানো হল টাটকা রক্তের যন্ত্রণা। যা প্রকৃতির নিয়মেই নারীর যোনিপথ দিয়ে শরীর থেকে নির্গত হয়। আর এভাবেই খিলাড়ি অক্ষয় কুমার হয়ে উঠলেন বলিউডের ‘প্যাডম্যান’।

[খিলজির চরিত্র পেলে রণবীরের থেকে ভাল অভিনয় করতাম: শাহিদ]

ছবির শুরুটা গান দিয়েই। হঠাৎ ক্লিশে বলিউডি সিনেমা মনে হল। ব্যস ওইটুকুই। গান থামতেই শুরু হয়ে গেল লক্ষ্মীর কাহিনি। কোয়েম্বাটোরের অরুণাচলম মুরুগানন্তম হয়ে গেলেন বেনারসের লক্ষ্মীকান্ত চৌহান। স্ত্রীর পাঁচদিনের সমস্যা মেটাতে যে সারাটা জীবন লাগিয়ে দিল। স্ত্রী পর্যন্ত তাঁকে ছেড়ে চলে গেল। কিন্তু লক্ষ্মীর সস্তার স্যানিটারি প্যাড তৈরির পাগলামো গেল না। এই পাগলামো তাকে পৌঁছে দিল রিয়ার কাছে। ডিজিটাল ইন্ডিয়ার যুগে মিলে গেল শহর ও গ্রাম। শুরু হল এমন রূপকথা, যা ঘোরতর বাস্তব। যে বাস্তব পর্দায় দেখতে কিন্তু বেশ লাগল। পরিচালক আর বালকি মানেই সোজাসাপ্টা গল্প দেখতে পাওয়া। এক্ষেত্রেও তাঁর ব্যতিক্রম হল না। সোজা কথাটা সোজাভাবেই বললেন বালকি।  ছবির গানও প্রয়োজনে এসেছে। তবে অক্ষয় ও সোনমের সূক্ষ্ম প্রেমটি না রাখলেই ভাল করতেন পরিচালক। অবশ্য পরিচালক প্রথমেই বলে দিয়েছিলেন, এ কাহিনি আংশিক কাল্পনিক। তবে নারী-পুরুষের মধ্যে আকর্ষণ সবসময় সম্পর্ক নাও থাকতে পারে।

রাধিকা আপ্টে অক্ষয়ের স্ত্রীর ভূমিকায় বিশ্বাসযোগ্য। বিশেষ কিছু করার ছিল না তাঁর। রিয়ার ভূমিকায় সোনম কাপুর অনেকটাই পরিণত। অভিনয়ের নিজস্বতা রয়েছে অনিল-কন্যার। সারপ্রাইজ প্যাকেজ বিগ বি অমিতাভ বচ্চনের ক্ষণিকের দর্শন। তবে এ ছবি আদ্যোপান্ত দেশি সুপারহিরো অক্ষয় কুমারের। না কোনও বাড়তি স্টান্ট দেখিয়ে কিংবা ক্যারাটের মারপ্যাঁচ দেখিয়ে সুপারহিরো হননি আক্কি। বরং হয়েছেন নিজের পরিণত অভিনয় দিয়ে। আর স্যানিটারি ন্যাপকিন দুই পায়ের মাঝে গলিয়ে। কেউ কেউ বলছেন, বলিউডে মনোজ কুমারের জায়গাটি দখল করেছেন অক্ষয়। এ তকমাতে আক্কিরও কোনও আপত্তি নেই। ‘টয়লেট এক প্রেম কথা’ থেকে স্বচ্ছ ভারতের যে অভিযান তিনি শুরু করেছেন, তা ‘প্যাডম্যান’ হিসেবেও বজায় রেখেছেন। ‘গোল্ড’-এও তেমনটাই দেখা যাবে।

[প্রেমের মরশুমে স্বল্প মেকআপেই কীভাবে মোহময়ী হয়ে উঠবেন, জানালেন নুসরত]

প্রশ্ন উঠেছে। প্রশ্ন উঠবে। এমন বিষয় তুলে ধরে লাভ কি? এতে দেশের ৮৮ শতাংশ মহিলা ঋতুস্রাবের সময় স্বচ্ছতা বজায় রাখবেন? ব্যবহার করবেন স্যানিটারি প্যাড? উত্তর হিসেবে বলা যায়, সিনেমা যোগাযোগের অন্যতম মাধ্যম। যে কথা ভাষণ হিসেবে গ্রামের কোনও প্রাচীন বটবৃক্ষের নিচে দাঁড়িয়ে বললে ভারতবাসী শুনতে চাইবে না, সে কথাই সিনেমা কিংবা ‘প্যাডম্যান’ চ্যালেঞ্জের মাধ্যমে বলতে শুরু করলে ক্ষতি কী?  ১০ জনের মধ্যে দুই জনের বদলে চারজন শুনলে ক্ষতি কী? শুরুটা তো কোথা না কোথাও থেকে করতেই হবে। তারকা মাহাত্ম্য মানুষকে ভাল কিছুর দিকে আকর্ষণ করলে ক্ষতি তো কিছু নেই। ১২ শতাংশ বেড়ে ১০০ শতাংশ নাই বা হল। ২৪ তো হতেই পারে। কে বলতে পারে ভবিষ্যতে স্যানিটারি ন্যাপকিন হয়তো করমুক্ত কিংবা বিনামূল্যেও হয়ে যেতে পারে! স্বপ্ন তো দেখতেই হবে। তা পূরণ হওয়ার আশাও রাখতে হবে। তাই ‘প্যাডম্যান’-এর মতো সাধারণ সুপারহিরোর কাহিনিও উঠে আসতে হবে রুপোলি পর্দায়।

আসলে সিনেমা ভাল কি মন্দ, বিনোদনের নিরিখে তা মাপা একরকম বোকামিই। ঋত্বিক ঘটকের মতো মনস্বী পরিচালক বিশ্বাস করতেন, সেই সিনেমাই ভাল, যা সময়ের প্রতি দায়বদ্ধ। কমিটমেন্ট, যে কোনও শিল্পকেই সার্থক হয়ে উঠতে এই কমিটমেন্টটুকু দরকার। নতুবা তা নেহাত বিনোদনের প্যাকেজে পর্যবসিত হয়। ‘প্যাডম্যান’ মুক্তির পর থেকেই যে ঋতুস্রাব নিয়ে মেয়েদের সব জ্বালা মুছে যাবে, আর দাদাবাবুরা বাজারের ব্যাগে রুইমাছের পাশেই ন্যাপকিনের প্যাকেট নিয়ে রিকশ চড়ে বাড়ি ফিরবেন তা নয়। তা যে হবে না তা আর বালকিও জানেন, অক্ষয় কুমার জানেন, আপনিও জানেন। সুতরাং ‘প্যাডম্যান’ কতটা পরিবর্তন আনবে সে প্রশ্নই গৌণ। কথা হল, ‘প্যাডম্যান’ প্রশ্নটা তুলল। সিনেমা তো সমাজসেবা নয়। সমাজবদল তাই সে করতে পারে না। শুধু সমাজের প্রয়োজনে সামাজিক ক্ষেত্রে সমসাময়িক কথাটি সে মুখ ফুটে বলে ফেলতে পারে। সেটাই তার ধর্ম। সন্দেহ নেই, এই সময়ে একটি জ্বলন্ত ইস্যুকেই তুলে ধরেছেন অক্ষয়। হ্যাঁ, তাতে ব্যবসার সূত্র আছে, বিনোদনও আছে। বলিউডের বাজার তার অদৃশ্য ছায়া যে ফেলেছে, তা সবই সত্যি। তেমন এও তো সত্যি, যে প্রেমিক জীবনে কোনওদিন তার প্রেমিকার ঋতুস্রাবের দিন মনে রাখে না কিংবা গিফট হিসেবে স্যানিটারি ন্যাপকিনের কথা যার মাথাতেও আসে না, এই চকোলেট ডে-তে সেও প্রেমিকার হাত ধরে ‘প্যাডম্যান’ দেখতে ঢুকছে। স্যানিটারি ন্যাপকিন আর বাথরুমের গোপনে মুখ লুকিয়ে থাকছে না, উঠে আসছে মুখে মুখে, বড় পর্দায়, বৃহত্তর প্রেক্ষিতে। তা কত শতাংশের মুখে? এ প্রশ্নের উত্তরে এ কথাই বলা যায়, এতদিন ওই সামান্য শতাংশও কি তা বলত? সুতরাং এই সামাজিক দায়বদ্ধতার জায়গা থেকেই লেটার মার্কস পাবেন অক্ষয়। বরং তাঁর মার্কসিট উলটে রেখেই আরও একটা প্রশ্ন করা যায়, সব দায়িত্ব কি অক্ষয়ের! দর্শকেরও কি নিজস্ব কোনও দায় নেই? এই উত্তরেই মিশে আছে সিনেমার সার্থকতা। সাফল্য তো নেহাতই বক্স অফিসের অঙ্ক।

[চলতি বছরেই বিয়েটা সেরে ফেলছেন দীপিকা-রণবীর!]

ছবি-প্যাডম্যান

পরিচালক- আর বালকি

অভিনয়- অক্ষয় কুমার, রাধিকা আপ্টে, সোনম কাপুর প্রমুখ

The post নারীর পৃথিবী না পালটাক, পর্দায় প্যাডম্যান-এর বদলের ডাকটুকুই প্রাপ্তি   appeared first on Sangbad Pratidin.

Sangbad Pratidin News App

খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ

Advertisement
toolbarHome ই পেপার toolbarup রাজধানী এক্সপ্রেস toolbarvideo ISL10 toolbarshorts রোববার