শ্রীকান্ত পাত্র, ঘাটাল: সৌরশক্তি পরিচালিত পাম্পের সাহায্যে বদলে যাচ্ছে ঘাটাল, দাসপুরের কৃষি অর্থনীতি। যার পোশাকি নাম সোলার লিফটিং ইরিগেশন। এর জন্য রাজ্য সরকার মোট ২৫ কোটি টাকা বরাদ্দ করেছে। কিন্তু কেন কৃষিক্ষেত্রে এই প্রযুক্তিতে জোর দেওয়া হচ্ছে? জানা যাচ্ছে, ফি বছরই দাম বাড়ছে বিদ্যুতের। আর সেই বিদ্যুতের বিল মেটাতে হিমশিম খাচ্ছেন চাষিরা। বিল মেটাতে না পারায় অনেক চাষিই মিনি শ্যালো বা সাব মার্সিবল পাম্প বন্ধ করে দিতে বাধ্য হচ্ছেন। সেই সমস্যার সমাধানে এগিয়ে এল কৃষিদপ্তর। এবার বিনা পয়সায় চাষ করতে পারবেন ঘাটাল মহকুমার সবজি চাষিরা। বিদ্যুতের বিল মেটানোর ঝামেলা পোহাতে হবে না তাঁদের।
কৃষি দপ্তরের ঘাটাল মহকুমা এগ্রি মেকানিক্যাল বা কৃষি যন্ত্রপাতি বিভাগ জানিয়েছে, দাসপুর ১ ও ২ নম্বর ব্লক, ঘাটাল ব্লকে মোটি ২৫টি সোলার রিভার লিফটিং ইরিগেশন বসছে। তার ফলে কোনও বিদ্যুতের বিল মেটানোর ঝামেলা থাকছে না চাষিদের। বিনা পয়সায় মিলবে পরিষেবা। নদী বা খাল থেকে জল তুলে জোগান দেওয়া হবে সবজি ও ধান চাষিদের। তার জন্য কোনও চাষিকে গাঁটের কড়ি গুনতে হবে না। সৌরশক্তির সাহায্যে পরিচালিত হবে পাম্পগুলি। ঘাটাল মহকুমা কৃষি দপ্তরের (মেকানিক্যাল) অ্যাসিস্ট্যান্ট ঘাটাল, দাসপুর ১ ও ২ ব্লকে, বিনা পয়সায় ইঞ্জিনিয়ার সুশীল মণ্ডল বলেন, "নদী বা খাল থেকে মেশিনের সাহায্যে জল তোলার জন্য এতদিন প্রচলিত বিদ্যুতের ব্যবহার করা হত। এবার সেই মেশিনগুলি চলবে সৌরশক্তির সাহায্যে। এমনকী ভূগর্ভস্থ জলও তোলা যাবে সৌরশক্তির সাহায্যে পরিচালিত পাম্পের দ্বারা। এগুলি মূলত সবজি চাষের জন্য ব্যবহার করা হবে। ঘাটাল মহকুমায় মোট ২৫টি সৌরশক্তি পরিচালিত পাম্প ও স্প্রিংলার মেশিন বসছে। ইতিমধ্যেই ২৩টি বসে গিয়েছে। এর মধ্যে ১৬টি পাম্প বসছে। বাকি সাতটি বসছে স্প্রিংকলার মেশিন। যার সাহায্যে সহজেই একজন কৃষক তাঁর জমিতে বৃষ্টির ধারার মতো করে সবজিতে জল সিঞ্চন করতে পারবেন।"
ঘাটাল মহকুমায় মোট ২৫টি সৌরশক্তি পরিচালিত পাম্প ও স্প্রিংলার মেশিন বসছে।
তিনি আরও বলেন, "সেই জল চারাগাছের তলায় নেমে আসবে। বাকি দু'টি পাম্প বসানোর কাজ চলছে। ঘাটাল, দাসপুর ১ ও ২ নম্বর ব্লকেই বসছে এই সৌরশক্তি পরিচালিত পাম্পগুলি। বাকি দুটি সোলার আরএলআই বসানোর কাজ চলছে।" জানা গিয়েছে, এর জন্য মোট ২৫ কোটি টাকা বরাদ্দ করেছে রাজ্য কৃষিদপ্তর। প্রতিটি স্কিমের জন্য খরচ পড়ছে ২৫ লক্ষ ২৫ হাজার ৫৩৪ টাকা। দাসপুর দুই নম্বর ব্লকেই বসেছে ১৫টি সোলার আরএলআই পাম্প। প্রতিটি পাম্পের সাহায্যে অন্তত ৫০ একর জমিতে জল সরবরাহ করা যাবে। দাসপুর ২ নম্বর ব্লকের রূপনারায়ণ, গোমরাই, পলাশপাই, দূর্বাচটি, শোলাটোপা খাল ও ঘাটালের ঝুমি প্রভৃতি নদী থেকে জল তোলা হবে এই সৌরশক্তি পরিচালিত পাম্পের সাহায্যে।
ঘাটাল পঞ্চায়েত সমিতির সহ-সভাপতি বিকাশ কর বলেন, "সোলার লিফটিং ইরিগেশনের সাহায্যে নদী বা খাল থেকে সবজি চাষিদের জন্য জল জোগানো হচ্ছে। এর জন্য সবজি চাষিদের কোনও অর্থ ব্যয় করতে হচ্ছে না। কৃষিতে এ এক যুগান্তকারী পরিবর্তন।" দাসপুর ২ নম্বর ব্লকে সোলার লিফটিং ইরিগেশন রূপায়ণের দায়িত্বে রয়েছেন দাসপুর দুই নম্বর পঞ্চায়েত সমিতির পূর্ত কর্মাধ্যক্ষ প্রদীপ পোড়েল। তিনি বলেন, "এই ব্যবস্থার ফলে কৃষি অর্থনীতির চেহারাটাই বদলে যাচ্ছে আমাদের এই ব্লকে। কেন না এর জন্য সবজি চাষিদের কোনও অর্থ ব্যয় করতে হচ্ছে না। সম্পূর্ণ বিনা পয়সায় মিলছে এই পরিষেবা।"