বাবুল হক, মালদহ: কুয়াশার ফাঁকে ঝলমলে রোদ, উঁকি দিচ্ছে উষ্ণতা। এই মরশুমে এবার আমের মুকুল গজানোর ক্ষেত্রে এমনই অনুকূল আবহাওয়া পেল মালদহ। কিন্তু তাতেই তৈরি হয়েছে সংশয়। অন্তত এক মাস আগেই গাছে গাছে গজাচ্ছে আমের মুকুল! এখানেই আম চাষিদের প্রশ্ন, এই মুকুল টিকবে তো?
মালদহে এবার সেভাবে ঘনকুয়াশার দেখা মেলেনি। তেমন মেঘলা ছিল না আকাশ। কনকনে ঠান্ডার বদলে ঝলমলে রোদ। মৃদু শীত, উষ্ণ আবহাওয়া। যা আমের মুকুল গজানোর ক্ষেত্রে অনুকূল। বলছেন উদ্যান পালন দপ্তরের আধিকারিকরাও। এবার জানুয়ারি মাসের মাঝামাঝি সময়েই মুকুল গজাতে শুরু করেছে আমের জেলার আমবাগানে। না, অকাল মুকুল নয়। তবে এক মাস আগেই আমগাছে মুকুল দেখা যাচ্ছে। আর এতেই আশা-নিরাশার টানাপোড়েন শুরু হয়েছে আমের জেলা মালদহে। কেউ বলছেন, এই মুকুল টিকবে না। এতে অনেক চাষিই হতাশ। তবে জেলা উদ্যান পালন দপ্তরের বিশেষজ্ঞরা বলছেন অন্য কথা। তাঁদের মতে, দুঃশ্চিন্তার কোনও কারণ নেই। পরিচর্যা করলেই আমের ফলন ভালো হবে।
গাছে আগাম মুকুল চলে আসায় চাষি থেকে বিশেষজ্ঞ, সবাই আবহাওয়ার খামখেয়ালিপনাকেই দায়ী করছেন। তাঁরা জানান, শীত জাঁকিয়ে পড়েনি সেভাবে, কিন্তু উষ্ণ আবহাওয়াই এবার মুকুল গজাতে সহায়তা করছে। ফেব্রুয়ারি মাসের শুরুতেই মুকুলে ভরে যেতে পারে আমবাগান। আমগাছে আগাম মুকুল দেখে আশায় বুক বাঁধার কথা আমচাষিদের। কিন্তু অগ্রিম গজানো মুকুল টিকবে কিনা তা নিয়ে সংশয়ে রয়েছেন চাষিরা। মালদহের জেলা উদ্যানপালন দপ্তরের উপ-অধিকর্তা সামন্ত লায়েক অবশ্য আমচাষিদের আশ্বাস দিয়ে বলেছেন, “সঠিক পরিচর্যা করলে অগ্রিম ফোটা মুকুলেও ভালো আম হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে।”
যে সমস্ত গাছে আমের মুকুল ফুটতে শুরু করেছে সেগুলিকে কীটপতঙ্গের হাত থেকে রক্ষা করতে কীটনাশক স্প্রে করার পরামর্শ দিচ্ছেন জেলার উদ্যান পালন দপ্তরের কর্তারা। মকুল দেখে সাধারণ মানুষ ভাবছেন, ফলন ভালো হতে পারে। চাষিরা অবশ্য শঙ্কিত। ইংলিশবাজারের কমলাবাড়ি এলাকার এক আমচাষি মহাদেব ঘোষ বলেন, “এবার আম গাছে খুব আগেই মুকুল গজিয়ে গিয়েছে। আবহাওয়ার জন্য এটা কোনও কোনও বছর হয়ে থাকে। কিন্তু ভয় হচ্ছে, এই আগাম মুকুল শেষ পযর্ন্ত টিকে থাকবে তো?” রতুয়ার বাহারাল এলাকার আমচাষি মরতুজ আলি বলেন, “এখন বৃষ্টি না হলে এই মুকুল রক্ষা করা যাবে না। তাই মুকুলে কীটনাশক ও জল স্প্রে করতে হবে।” মালদহের জেলা উদ্যান পালন দপ্তরের বিশেষজ্ঞরা জানাচ্ছেন, ফেব্রুয়ারি মাসের দ্বিতীয় সপ্তাহে আমের মুকুল ফোটার অনুকূল আবহাওয়া। তবে চলতি মরশুমে আবহাওয়ার পরিবর্তনের জন্যই গাছগুলিতে আগাম মুকুল ফুটতে শুরু করেছে। শীত থাকলেও এখন তাপমাত্রা একটু বেশি। যা আমের মুকুল ফোটার পক্ষে অনুকূল।
উদ্যান পালন দপ্তরের আধিকারিকরা জানান, অতিরিক্ত গুটি ঝরে না পড়লে আমের আকার ছোট হয়। আমের গুণগত মান ও ফলন কমে যায়। প্রতিটি মুকুলে একটি করে গুটি থাকলেই আমের ব্যাপক ফলন হবে। এনিয়ে উদ্বেগের কোনও কারণ নেই। আমবাগানের মাটিতে রসের অভাব হলেও আমের গুটি ঝরে যায়। এজন্য গাছের চারপাশে নিয়মিত জল দিতে হবে। বৃষ্টিপাত না হওয়া পর্যন্ত ১৫ দিন অন্তর জল দিলেই সমস্যা থাকবে না। আম বাগান পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন, আগাছামুক্ত ও খোলামেলা অবস্থায় রাখতে হবে। মালদহে এই মরশুমে ৩২ হাজার হেক্টর জমিতে আম চাষ হচ্ছে। আম চাযের জমির পরিধি ক্রমশ বাড়ছে।