shono
Advertisement

চাষের জমিতে রাসায়নিকের অপব্যবহারে ক্ষতির সম্ভাবনা, মুক্তির পথ দেখাচ্ছে জৈব কৃষি

জৈব সার দ্রুত ফসলের প্রয়োজনীয় পুষ্টি জোগায়।
Posted: 04:21 PM Nov 04, 2022Updated: 04:21 PM Nov 04, 2022

সিন্থেটিক ও রাসায়নিক সারের অপব্যবহার মানুষকে অনেক স্বাস্থ্যজনিত সমস্যার দিকে ঠেলে দিয়েছে। পরিবেশের অবনতিতেও এটি অনেকাংশে ভূমিকা রেখেছে। এই পরিস্থিতি থেকে মুক্তির পথ দেখাচ্ছে জৈব কৃষি। জৈব সার দ্রুত ফসলের প্রয়োজনীয় পুষ্টি জোগায়। মাটির রাসায়নিক ও ভৌত বৈশিষ্ট্যগুলির উন্নতিও ঘটায়। লিখেছেন বিধান চন্দ্র কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের শস্য বিজ্ঞান বিভাগের গবেষক প্রতীম বিষ্ণু ও উত্তরবঙ্গ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের মৃত্তিকা বিজ্ঞান ও কৃষি রসায়ন বিভাগের গবেষক পারিজাত দে।

Advertisement

পরিবেশের ভারসাম্য রক্ষার সঙ্গে প্রতিশ্রুতিবদ্ধ হয়ে ক্রমবর্ধমানভাবে অগ্রসর হচ্ছে ভারতীয় কৃষি অনুশীলন। এর সঙ্গে পাল্লা দিয়ে জৈব চাষ পদ্ধতিও অনেক কৃষকের কাছে গ্রহণযোগ্য হয়ে উঠেছে। অনেক পরিবেশবান্ধব চাষি সিন্থেটিক ও রাসায়ানিকের বিকল্প হিসেবে জৈব তরল সার ব্যবহারকে বেছে নিয়েছেন। কৃত্রিম সারের অপব্যবহার আজ মানুষকে অনেক স্বাস্থ্যজনিত সমস্যার দিকে ঠেলে দিয়েছে। পাশাপাশি পরিবেশের অবনতিতেও এটি অনেকাংশে ভূমিকা রেখেছে। ফলে বিশ্বব্যাপী জৈব কৃষির চাহিদা দ্রুত বৃদ্ধি পাচ্ছে। জৈব সার খুব দ্রুত ফসলের প্রয়োজনীয় পুষ্টি উপাদানগুলি সরবরাহ করতে সক্ষম এবং মাটির রাসায়নিক ও ভৌত বৈশিষ্ট্যগুলির উন্নতি ঘটায়।
কেন এবং কখন তরল সার ব্যবহার করবেন?
তরল সারগুলি দানাদার জৈব সারগুলির চেয়ে দ্রুত কাজ করে, তবে নিম্নলিখিত পরিস্থিতিতে তরল সারের ব্যবহার সেরা বিকল্প হিসেবে গণ্য –
ক) নতুন অঙ্কুরিত বীজ, যা প্রয়োজনীয় পুষ্টি সরবরাহে ব্যর্থ এমন চারাগুলির ক্ষেত্রে জৈব তরল সারের ব্যবহার যুক্তিযুক্ত।
খ) টবে চাষ করা ফসলের ক্ষেত্রে তরল জৈব সারের ব্যবহার খুবই অনুকুল। তবে টবে লাগানো ফসলের পুষ্টি যোগান দিতে ঘন ঘন জৈব তরল সারের ব্যবহার করতে হবে।
গ) ঠান্ডা-সহনশীল ফসল চাষ মাটির তাপমাত্রার উপর অধিকাংশে নির্ভরশীল কারণ শীতল তাপমাত্রায় নাইট্রোজেনের মতো পুষ্টি শোষণ করা কঠিন হয়ে থাকে। তরল সারগুলি এই জাতীয় গাছগুলির পুষ্টি বৃদ্ধির জন্য দুর্দান্ত।জৈব তরল সারের প্রভাব স্বল্প সময়ের জন্য বিদ্যমান। তাই তরল সার ব্যবহার করা বর্তমান সময়ে বেশ জনপ্রিয় এবং টেকসই কৃষির জন্য আদর্শ।

[আরও পড়ুন: ওষুধ থেকে বাণিজ্য, ভেষজ চাষে বিপ্লব নাটাবাড়িতে! তুঙ্গে তুলসীর চাহিদা]

ভারতে প্রচলিত কিছু জৈব তরল সার ও জৈব কীটনাশক, তৈরির নিয়মাবলী এবং ব্যবহার পদ্ধতি
পঞ্চগব্য
পঞ্চগব্য প্রস্তুত করার জন্য যা প্রয়োজন তা হল, তাজা গোবর ৩ কেজি, ঘি ১/২ কেজি, দই ১/২ কেজি, গোমূত্র ২ লিটার, দুধ ১ লিটার, জল ৩ লিটার ও মিশ্রণ ধারক।
পঞ্চগব্য জৈব সার তৈরির পদ্ধতি: 
একটি পাত্রে তাজা গোবর এবং ঘি দিয়ে ভালভাবে মিশিয়ে, তা ৪ থেকে ৮ ঘণ্টার জন্য সুতির কাপড় দিয়ে ঢেকে রাখুন। এরপর মিশ্রণটিকে জলের সঙ্গে ভালভাবে মিশিয়ে আবার ৩ দিনের জন্য ঢেকে রাখুন। চতুর্থ দিনে মিশ্রণটিতে দুধ, দই এবং গোমূত্র যোগ করে ভালভাবে মিশিয়ে মিশ্রণটি প্রায় ২১ দিনের জন্য রেখে ছায়াতে রাখুন। ২৫ তম দিনে পঞ্চগব্য ব্যবহারের জন্য প্রস্তুত।
কীভাবে পঞ্চগব্য ব্যবহার করবেন:
পঞ্চগব্য ব্যবহারের পূর্বে মিশ্রণটিকে জলযোগে ৩০ গুণ পাতলা করে নিন এবং স্প্রে করার পূর্বে মিশ্রণটিতে যেন কোনওরূপ বর্জ্য পদার্থ না থাকে তার জন্য তরলটিকে সুতির কাপড় দিয়ে ছেঁকে নেবেন। সাধারণত, গাছের বৃদ্ধি দশায় প্রতি দুই সপ্তাহে একবার এবং ফুল ও ফল আসার প্রাক্কালে সপ্তাহে একবার ব্যবহারে আশানুরূপ লাভ পাবেন।
ব্রহ্মাস্ত্র
ব্রহ্মাস্ত্র হল একটি প্রাকৃতিক কীটনাশক যা শুঁয়োপোকা এবং বিভিন্ন ক্ষতিকারক কীটপতঙ্গ নিয়ন্ত্রণে ব্যবহার করা হয়। ব্রহ্মাস্ত্রের প্রস্তুতি মূল উপকরণগুলি হল ২ লিটার গোমূত্র, ২ কেজি নিমের পাতা ও ডালপালা, ২ কেজি, রেড়ি অথবা তামাক পাতা ও ডালপালা, ২ কেজি আমের পাতা ও ডালপালা, ২ কেজি কারাঞ্জের পাতা ও ডালপালা।
ব্রহ্মাস্ত্র কীভাবে প্রস্তুত করবেন?
ব্রহ্মাস্ত্র তৈরির জন্য উপরে উল্লেখিত উপাদানগুলোর পাতা এবং কাণ্ডের পৃথক পৃথক পেস্ট তৈরি করুন এবং সেই উপাদানগুলি একটি বড় পাত্রে ভালভাবে মিশিয়ে নিতে হবে। এরপর, মিশ্রণটিকে ৪৮ ঘণ্টার জন্য একটি ছায়াযুক্ত স্থানে রেখে দিতে হবে। লক্ষ্য রাখতে হবে যাতে মিশ্রণটি কোনওমতেই সূর্যের আলো বা বৃষ্টির সংস্পর্শে না আসে। শেষে একটি বোতলে মিশ্রণটি ফিল্টার করে প্রয়োজনীয় তরলটি সংগ্রহ করুন।
অগ্নিস্ত্র
অগ্নিস্ত্র সার ও কীটনাশক উভয়রূপে ব্যবহার করতে পারবেন। অগ্নিস্ত্র ব্যবহারে পাতা মোড়ককারী পোকা, মাজরা পোকা, ফল ছিদ্রকারী পোকা এবং শুঁটি পোকার মত ক্ষতিকর পোকামাকড়ের হাত থেকে নিস্তার পাওয়া যাবে। শাকসব্জি, ফল, ফুল এবং অন্যান্য যেকোনও কৃষি ফসলের জন্য অগ্নিস্ত্র সমানভাবে কার্যকরী। ২ লিটার অগ্নিস্ত্র তৈরির জন্য উপাদান হিসেবে তামাক ৫০ গ্রাম, কাঁচা লঙ্কা ৫০ গ্রাম, রসুন ৫০ গ্রাম, নিম পাতা ৫০০ গ্রাম, গোমূত্র ১.৫ লিটার প্রয়োজন।
কীভাবে অগ্নিস্ত্র প্রস্তুত করবেন?
উপরের লিখিত সমস্ত উপাদানগুলিকে মিশিয়ে সূক্ষ্ম পেস্ট তৈরি করতে এবং তা গোমূত্রের সঙ্গে ভালভাবে মিশিয়ে সিদ্ধ করে নিতে হবে। এরপর মিশ্রণটিকে ৪৮ ঘণ্টার জন্য রেখে দিতে হবে ও ৩ তম দিনে মিশ্রণটিকে ছেঁকে নিতে হবে। স্প্রে করার পূর্বে অগ্নিস্ত্র জলের সঙ্গে মিশিয়ে ২৫ থেকে ৩০ গুণ পাতলা করে নিন ।

[আরও পড়ুন: শরতের শেষে রোগমুক্ত ডালিয়া চাষই বড় চ্যালেঞ্জ, ফুলচাষিদের জন্য রইল টিপস]

জীবামৃত
জীবামৃত প্রাকৃতিক কার্বন, নাইট্রোজেন, ফসফরাস, পটাসিয়াম এবং অন্যান্য অনুখাদ্যের একটি চমৎকার উৎস যা প্রধানত জৈব চাষে প্রাকৃতিক সার হিসেবে ব্যবহৃত হয়। গোবর সার, পচানো সার এবং ভার্মিকম্পোস্টের অন্যান্য সারের তুলনায় জীবামৃত খুব সহজে এবং দ্রুত প্রস্তুত করা যায়। জীবামৃত প্রস্তুত করার জন্য আপনার যা প্রয়োজন তা হল তাজা গোবর ১ কেজি, জল ২০ লিটার, গোমূত্র ১ লিটার, মাটি ৫০ গ্রাম ও গুড় ২০০ গ্রাম।
জীবামৃতের প্রস্তুতি
প্রথমত, একটি পাত্রের মধ্যে ২০ লিটার জল নিয়ে তাতে ১ কেজি গোবর এবং ০.৫-১ লিটার গোমূত্র যোগ করুন। এরপর দ্রবণটি ভালভাবে নাড়ুন এবং ৪৮ ঘন্টার জন্য ছায়ায় মধ্যে রেখে দিন। মিশ্রণটি কমপক্ষে ১০ মিনিটের জন্য কয়েকবার নাড়তে হবে। ২-৩ দিন পর থেকেই এই মিশ্রণটি ব্যবহার করা যেতে পারে। তবে প্রস্তুতির ৮ দিনের পর থেকেই তরল জীবামৃতে উপস্থিত ব্যাকটেরিয়ার সংখ্যা কমতে শুরু করে।
নিমাস্ত্র
এক একর জমির নিমাস্ত্রের জন্য প্রয়োজনীয় উপকরণগুলি হল জল ২০০ লিটার, গোমূত্র লিটার প্রতি ৫০ মিলি, তাজা গোবর লিটার প্রতি ১০ গ্রাম, পাতলা কাণ্ড সহ নিম পাতা বা বীজের গুঁড়ো লিটার প্রতি ৫০ গ্রাম।
কীভাবে নিমাস্ত্র প্রস্তুত করবেন?
একটি প্লাস্টিকের পাত্রের উপরে উল্লেখিত সমস্ত উপাদানগুলিকে ভালভাবে মিশিয়ে নিন। মিশ্রণটিকে ঘড়ির কাঁটার দিকে ভাল করে নাড়ুন কারণ এতে মিশ্রণে ইতিবাচক শক্তি ছড়িয়ে পড়বে। এরপর মিশ্রণটিকে একটি পাটের বস্তা বা পলি নেট দিয়ে ঢেকে দিন। লক্ষ্য রাখতে হবে মিশ্রণটি যেন সরাসরি সূর্যালোক বা বৃষ্টির জলের সংস্পর্শে না আসে। প্রতিদিন সকাল এবং সন্ধ্যায় কমপক্ষে ১ মিনিটের জন্য ঘড়ির কাঁটার দিকে মিশ্রণটি নাড়াতে হবে। ৪৮ ঘণ্টা পর মিশ্রণটিকে ছেঁকে নিয়ে সরাসরি ব্যবহার করতে পারবেন। এই মিশ্রণে কোনওপ্রকার জল মেশানো যাবে না। এতে মিশ্রণের কার্যকারিতা লোপ পাবে।
দশগব্য
পঞ্চগব্যের সাথে নির্দিষ্ট উদ্ভিদের নির্যাস মিশিয়ে এই তরল সার প্রস্তুত করা হয়। দশগব্য তৈরির প্রয়োজনীয় উপকরণগুলি হল তাজা গোবর ৫ কেজি, গোমূত্র ৩ লিটার, গরুর দুধ ২ লিটার, দই ২ লিটার, দেশি ঘি ১ কেজি, আখের রস ৩ লিটার, নারকেলের জল ৩ লিটার, পাকা কলার পেস্ট ১২টি এবং আঙ্গুরের রস ২ লিটার।
কীভাবে দশগব্য প্রস্তুত করবেন?
একটি উপযুক্ত পাত্রে গোবর ও ঘি এর মিশ্রণ তৈরি করে তা ৩ দিনের জন্য গাঁজন করতে হবে। চতুর্থ দিনে বাকি উপাদানগুলি যোগ করতে হবে এবং আরও ১৫ দিনের জন্য মিশ্রণটি রেখে দিতে হবে। মিশ্রণটি দিনে কমপক্ষে দুবার নাড়তে পারলে ভাল হবে। ১৮ দিনের মাথায় দশগব্য ব্যবহারের জন্য প্রস্তুত হয়ে যাবে। দশগব্য প্রস্তুতির ক্ষেত্রে আখের রসের পরিবর্তে ৫০০ গ্রাম গুড়ও ব্যবহার করতে পারবেন।
সঞ্জীবক
সঞ্জীবক হল একটি জৈব পুষ্টিতে সমৃদ্ধ তরল সার যাহা মাটির উর্বরতা বৃদ্ধিতে সহায়তা করে। সঞ্জীবক প্রস্তুতির জন্য প্রয়োজনীর উপকরণগুলি হল জল ৩০০ লিটার, গুড় ৫০০ গ্রাম, গোমূত্র ১০০ লিটার, গোবর ১০০ থেকে ২০০ কেজি।
কীভাবে সঞ্জীবক প্রস্তুত করবেন?
সমস্ত উপাদানগুলিকে ৫০০ লিটারের ড্রামে ভালভাবে মিশিয়ে পচনের জন্য ১০ দিন ছায়াতে রেখে দিতে হবে। ১১ তম দিনে মিশ্রণটিকে ছেঁকে নিয়ে বোতলে সংগ্রহ করতে হবে। তবে ব্যবহারের পূর্বে মিশ্রণটিকে জলের পঙ্গে মিশিয়ে ২০ গুণ পাতলা করে নিতে হবে।
অমৃতপানি
অমৃতপানি মাটির উর্বরতা বৃদ্ধিকারী উপাদান সমৃদ্ধ তরল সার। এছাড়াও এটি বীজ শোধনের জন্যও ব্যবহার করা যেতে পারে। অমৃতপানি প্রস্তুত করার জন্য প্রয়োজনীয় উপাদানগুলি হল জল ২০০ লিটার, গোবর ১০ কেজি, মধু বা গুড় ৫০০ গ্রাম, ঘি বা সরিষার তেল ২৫০ গ্রাম/মিলি।
কীভাবে অমৃতপানি প্রস্তুত করবেন?
একটি প্লাস্টিকের পাত্রে জল এবং গুড় ভালভাবে মিশিয়ে নিন এবং মিশ্রণে তাজা গোবর ও গোমূত্র মিশিয়ে কাঠের লাঠির সাহায্যে মিশ্রণটি নাড়ুতে হবে এবং পাত্রের মুখটি ভালভাবে সূতির কাপড় দিয়ে বেঁধে দিতে। ৪ তম দিনে অমৃতপানি ব্যবহারের জন্য প্রস্তুত হয়ে যাবে। তবে প্রস্তুতিপর্বে মিশ্রণটিকে কাঠের লাঠির সঙ্গে দিনে ৩ বার ভালভাবে নাড়ালে মিশ্রণটি আরও ভালভাবে প্রস্তুত হবে।
কৃষক কার্যকরী অণুজীব (Farmer Efficient Microrganism)
কৃষক কার্যকরী অণুজীব প্রস্তুত করার জন্য প্রয়োজনীয় উপাদানগুলি হল কুমড়ো ৩ কেজি, কলা ১ কেজি, পেঁপে ৩ কেজি, গুড় ৩ কেজি, ডিম ৫টি, নন-ক্লোরিনযুক্ত জল ১০ লিটার ।
কীভাবে কৃষক কার্যকরী অণুজীব প্রস্তুত করবেন?
প্রথমে সবজিগুলো ছোট ছোট টুকরো করে কেটে একটি পরিষ্কার প্লাস্টিকের পাত্রে স্থানান্তর করতে হবে। এরপর ১০ লিটার নন-ক্লোরিনযুক্ত জল ও গুড়ের মিশ্রণ তৈরি করে তাতে ডিম ও কাটা সবজিগুলো যোগ করতে হবে এবং বায়ুরোধী ঢাকনা দিয়ে পাত্রটি বন্ধ করতে হবে। ১০ তম দিনে ঢাকনা সরিয়ে আবার ভাল করে মেশাতে হবে এবং মিশ্রণটিকে ৪৫ দিনের জন্য বন্ধ রাখতে হবে। ৪৫ দিন পর পাত্রে তিনটি স্তর লক্ষ্য করা যাবে। উপরের পাতলা স্তরটি সাদা রঙের, যা ক্রমাগত গাঁজন নির্দেশ করে। মাঝের স্তরটি হবে খাঁটি বাদামি রঙের তরল এবং নীচের স্তরটি হবে দ্রবীভূত সবজি দ্বারা গঠিত আধা কঠিন। ধীরে ধীরে উপরের এবং মাঝারি অংশের তরল অন্য পাত্রে সংগ্রহ করে নিতে হবে। সংগৃহীত তরলটি হল কৃষকের কার্যকরী অণুজীব সার।
ডিমের চুন তরল সার
এই ফর্মুলেশনটি ধান, গম, কলা, শাকসবজি, ফল এবং গাছের মত ফসলে প্রয়োগ করা যেতে পারে। এটি গাছের বৃদ্ধিতে সাহায্য করে। ভাল ফলাফলের জন্য এটি পঞ্চগব্য এবং ভার্মিওয়াশের সঙ্গে মিশ্রিয়েও ব্যবহার করা যেতে পারে। ডিমের চুন তরল সার প্রস্তুত করার জন্য যা প্রয়োজনীয় তা হল ডিম ১ টি, চুন ২০০ গ্রাম, গুড় ২৫০ গ্রাম৷
কীভাবে ডিমের চুন তরল সার প্রস্তুত করবেন?
প্রায় ২০০ গ্রাম চুনের প্যাকেট থেকে একটি পাত্রে রস চেপে নিতে হবে এবং প্রায় ২৫০ গ্রাম গুড় যোগ করে একটি দ্রবণ তৈরি করে তা বায়ুরোধী ঢাকনা দিয়ে পাত্রটি বন্ধ করে দিতে হবে। প্রায় ১০ দিনের জন্য ছায়ায় রেখে দিতে হবে। ১০তম দিনে, দ্রবণের ভিতরে খোসা সহ ডিমগুলি রাবার বলের মতো রাবারি হয়ে যাবে। চুন-গুড়ের দ্রবণে খোসার সঙ্গে ডিম মিশ্রিত করতে আপনার হাত ব্যবহার করুন এবং চুন-গুড়ের দ্রবণে সমান পরিমাণে গুড়ের দ্রবণ (প্রায় ৫০০ মিলি) দিয়ে উপরে দিন। প্রায় ১০ দিনের জন্য ধারকটি শক্তভাবে বন্ধ করুন। ১১তম দিনের পরে ফর্মুলেশন পাতায় এবং মাটিতে স্প্রে হিসাবে ব্যবহারের জন্য প্রস্তুত।

বিশেষ দ্রষ্টব্য:

  • তরল সার ব্যবহার করার সময়, সঠিক তরল এবং প্রয়োগ পদ্ধতির জন্য সর্বদা লেবেলের নির্দেশাবলি অনুসরণ করুন।
  • ভাল ফলাফল পেতে আপনি সার্ফ্যাক্ট্যান্ট ব্যবহার করতে পারেন, যেমন নারকেল তেল বা একটি হালকা সাবান (প্রতি গ্যালন স্প্রে ১/৪ চা চামচ)।
  • অন্যথায়, স্প্রে পাতার উপর পুঁতি হিসেবে জমা হতে পারে এবং আপনি সর্বাধিক সুবিধা পাবেন না।
  • অন্যদিকে, আপনি যদি খুব বেশি সার্ফ্যাক্ট্যান্ট ব্যবহার করেন তবে এটি গাছের ক্ষতি করতে পারে।
  • হ্যান্ড-ট্রিগার ইউনিট থেকে ন্যাপস্যাক স্প্রেয়ার পর্যন্ত যে কোনও স্প্রেয়ার বা মিস্টার ব্যবহার করতে পারেন।
  • তবে ভেষজনাশক প্রয়োগ করার জন্য ব্যবহার করা হয়েছে এমন স্প্রেয়ার ব্যবহার করবেন না।
  • স্প্রে করার সর্বোত্তম সময় হল সকাল এবং সন্ধেবেলায় এবং এমন একটি দিন বেছে নিন যখন কোনও বৃষ্টির পূর্বাভাস নেই এবং তাপমাত্রা চরম নয়।

[আরও পড়ুন: অনলাইন পোর্টালের মাধ্যমে ধান কেনার উদ্যোগ জেলা প্রশাসনের, খুশি পূর্ব বর্ধমানের কৃষকরা]

Sangbad Pratidin News App

খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ

Advertisement